ফারজানা মৃদুলা
পৃথিবীতে নিজে ভালো থাকতে চাইলে স্বার্থপর হয়ে যাও, আর মানুষের কাছে ভালো হয়ে থাকতে চাইলে নিঃস্বার্থ হও।
হুমায়ূন আহমেদের এই উক্তি দিয়ে শুরু হোক আজ এক ভিন্নপ্রেমের গল্প!কেননা এই গল্পের প্রেমিকা কিন্তু প্রিয় কবি বলতেই অকপটে বলে উঠে স্যার হুমায়ুন আহমেদ।
এই প্রেম যেন হলুদ খামে মোড়ানো উষ্ণ ভালোবাসায় সিক্ত। বলছিলাম এক পিকাচু প্রেমিকার কথা। নামটি তাহার আফরিন। তবে আফরিন নামটি যেন হারাতে বসেছে পরিবার কিংবা বন্ধু মহল হতে।
নবম শ্রেণির থেকে কার্টুন চরিত্র পিকাচুর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালায়ের হাসোজ্জল এই তরুনী। সে ২০১৭ সালে ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল থেকে এস এস সি, ২০১৯ সালে ঢাকা ইম্পিরিয়াল কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করে বর্তমানে (ইউল্যাব) এর ৪র্থ বর্ষের শেষ সেমিস্টারের মিডিয়া স্টাডিজ এন্ড জার্নালিজম নিয়ে পড়ছে এই পিকাচু প্রেমী।
ছয়ঋতুর মাঝে শীতকাল তাকে টানে, এই বাংলাদেশের শ্যামল সবুজ প্রকৃতি তার খুব বেশি প্রিয়। এক অদ্ভুত বিষয় হলো এই পিকাচু কন্যা কে সেই সাজে দেখলে প্রথমে যে কেউ দ্বিধাদ্বন্দে পড়বে। কোনটা কার্টুন চরিত্র আর কোনটাই বা জলজ্যান্ত মানুষ!
পিকাচু কন্যা আফরিনের সংগ্রহে এত পিকাচু যে অবাক হতে বাধ্য যে কেউ। তার আপাদমস্তক পিকাচু মানে পায়ের জুতো, ড্রেস, মোজা, হেয়ারব্যান্ট, চশমা, দুল, মালা, হাতের ব্যাগ, ছাতা, পানি পান করার মগ, মুখ দেখার আয়নাটি এমনকি তার ব্যাবহরের প্রয়োজনীয় সবই পিকাচুর আদলে তৈরী।
এটি একটা নেশার মত হয়ে গেছে। তার সবকিছুই পিকাচু অংকন। নিজ হাতে চমৎকার করেও ফুটিয়ে তোলে পিকাচুর ছবি। পিকাচু কার্টুন পাস্তা খায় কি না তা আমার জানা নেই, তবে আফরিন খাবারের তালিকায় পাস্তাকে ১ নাম্বারেই রাখে।
প্রিয় রং সেই চিরচেনা চরিত্র হিমুর হলুদ পাঞ্জাবির রং যেন তার চারিদিকে বিরাজমান। নিজের মাকে অলরাউন্ডার পদবীতে ভূষিত করে, কেননা মা কেবল মা নয় বাবা -মা - বন্ধু এই সব একই মিশ্রিত হয়ে মা তাকে আগলে রাখে।
মার জন্য হুমায়ুন আহমেদ এর উক্তি একটি বলতে গিয়ে আফরিন বলে “একেকজন মানুষ যেন একেকটা বই, কোনো বই সহজ, তরতর করে পড়া যায়, কোনো বই অসম্ভব জটিল, আবার কোনো কোনো বই এর হরফ অজানা। সেই বই পড়তে হলে আগে হরফ বুঝতে হবে। আবার কিছু কিছু বই আছে যার পাতাগুলি সাদা, কিছুই সেখানে লেখা নেই, বড়ই রহস্যময় সে বই। আমার নিজের বইটা কেমন? খুব জটিল নয় বলেই আমার ধারণা। সরল ভাষায় বইটি লেখা। যে কেউ পড়েই বুঝতে পারবে। কিন্তু সত্যি কি পারবে? সারল্যের ভেতরেও তো থাকে ভয়াবহ জটিলতা।”
—হুমায়ূন আহমেদ।
মা যেন আমার সহজ একটি বই আসলেই। নিজেকে আরো ভাগ্যবতী মনে করে ২ বড় খালামনিকে পেয়ে। তাদের ভালোবাসায় কখনো কোন খাঁদ দেখেনি। তাই তো পরিবারের সকলেই তার পিকাচু সংগ্রহে কোন বাঁধা দেয়নি কোনদিন।
পিকাচু কন্যা একটি বার্তা সকলের উদ্দেশ্যে দিলো যে, প্রতিটি শিশুর মেধা বিকাশের জন্য তার শখ গুলো প্রাধান্য দিলে ভালো হয়। কেননা তখন শিশুর মন কোন নেতিবাচক দিকে ঝুঁকে না।
আসলেই এই সহজসরল মন নিয়ে এখনো সেই ছোট শিশুর মত মন ধারন করে চলতে পারছে আফরিন। জীবনের সুন্দর সময় বলতে একটাই মনে দোলা দেয়,
সেই সময়টা এস এস সি রেজাল্ট এর দিন। নিজের ভেতরে প্রচন্ড অস্থিরতা কাজ করছিলো সেদিন। কিন্তু পরিবারের সবাই এমন কি মা তেমন চিন্তায় ছিলেন না, কেননা পিকাচু কন্যার কাছে তেমন কোন ভালো আশা ছিলো না।
তবে সব কিছু একদম বাকরূদ্ধ করে দিলো জিপিএ ৫ পেয়ে। শিক্ষকরা যেমনি খুশিতে মগ্ন তেমনি পরিবারের সকলেই।
কিন্তু মায়ের সেই খুশি মুখখানি আজও তার মন খারাপ হলে সেই স্মৃতি মন ভালো করে দেয়।
পরিশেষে একটাই বলা নতুন প্রজন্মে প্রতিটি শিশু, কিশোর তরুন সমাজ এমন সহজ সুন্দর চিন্তার দিকে ঝুকলে হয়ত ক্ষতি নেই।কেননা শখ থেকে সৃষ্টি হতে পারে নতুন কিছু।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: