
নিজস্ব প্রতিবেদক : ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বিপিও খাত বৈদেশিক রপ্তানি আয়ে আগামী ২০৪১ সালে তৈরি পোষাক খাতকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক দিক থেকে বাংলাদেশ এক বিরল সম্ভাবনাময় সময় পার করছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম অত্যন্ত মেধাবি, উপযুক্ত দক্ষতা ও পরিবেশ দিতে পারলে তারা অসাধ্য সাধন করতে সক্ষম। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ বিশ্বে বিস্ময়কর উন্নয়নের মাইলফলক স্থাপন করবে।
মন্ত্রী গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাক্কো আয়োজিত দুই দিনব্যাপী বিপিও সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার ও বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী তরুণ প্রজন্মকে স্মার্ট মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর অপরিহার্য উল্লেখ করে বলেন, আমি মনে করি দেশের বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো উল্লেখযোগ্য সফলতার জায়গায় আজ দাড়িয়েছে। বিসিএস ও বেসিস এর সাবেক সভাপতি জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিপিও খাতের জন্য যোগাযোগ দক্ষতা সম্পন্ন মানব সম্পদের ঘাটতি রয়েছে তবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই দক্ষতা তৈরি করার সুযোগ আছে। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলকে ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়নে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতের ট্রেডবডিসমূহকে ভূমিকা গ্রহণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের এই অগ্রদূত। মন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম অনুষঙ্গ ডিজিটাল সংযোগ উল্লেখ করে বলেন, মধুপুরের প্রত্যন্ত পাহাড়ে এবং সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার প্রত্যন্ত গ্রামে ডিজিটাল সংযুক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়ে এলাকার জীবনমান পাল্টে গেছে। মধুপুরের পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে আউট সোর্সিং করে শতশত ডলার ছেলে মেয়েরা আয় করছে। ধর্মপাশার আহমেদ পুর গ্রামে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। সেখানে ৪৮ জন প্রোগ্রামার কাজ করছে । অন্য উদ্যোাক্তারা এগিয়ে আসলে তাদেরকে উচ্চগতির ইন্টারনেটসহ ডিজিটাল অবকাঠামোগত সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি। ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ গত সাড়ে ১৪ বছরে উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে বিস্ময়কর সফলতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে দেশে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের মূল্য ছিল ৭৫ হাজার টাকা। বর্তমানে একদেশ একরেটের আওতায় দেশে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে মাত্র ৬০ টাকা। সে সময় দেশে সাড়ে সাত জিবিপিএস ব্যান্ডউদথ ব্যবহৃত হতো এবং ব্যবহারকারি ছিলো সাড়ে সাত লাখ মানুষ। বর্তমানে প্রায় ৫হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইদথ ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ। সে সময় দেশে টেলিডেনসিটি ছিলো শতকরা ৩০ ভাগ যা ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত শতকরা ১০৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে। দেশের ৯৮ ভাগ এলাকা মোবাইলের ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশে ৯৯৯ সেবা চালুর পেছনের গল্প তুলে ধরে জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, গাজীপুরের হাইটেক পার্কে এই কলসেন্টার চালু করে বাক্কো। ইনক্লুসিভ উন্ননের জন্য আইসিটির পক্ষ থেকে ২৫ হাজার নারীকে উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বিপিও লাইসেন্স পেতে ২২টি ফর্ম পূরণ করার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে মাননীয় মন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।। এরই ধারাবাহিকতায় লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রেও অনলাইন পোর্টাল চালু করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, দক্ষ জণশক্তির কারণে ইউরোপের সেবা খাতে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে সেই সম্ভাবনা আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। তাই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সম্প্রসারণে পলিসিগত দিক থেকে সকল সহায়তা প্রদান করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
অংশগ্রহণকারী ও অংশীজনদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অনুষ্ঠানের সমাপনী ঘোষণা করেন বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ।
অনুষ্ঠানে সম্মেলন আয়োজনে সংশ্লিষ্টদের হাতে শুভেচ্ছা স্বারক তুলে দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মন্ত্রী।
এর আগে মন্ত্রী বিপিও সম্মেলন উপলক্ষ্যে আয়োজিত পাওয়ারিং লোকাল মার্কেট গ্রোথ প্রসপেক্টস এন্ড চ্যালেঞ্জেস শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিপিও খাতের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এবং আগামীর সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বিভিন্ন পরামর্শ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বাক্কো সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন জানান, জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকার ৯টিসহ দেশজুড়ে বিভাগীয় পর্যায়ের মোট সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় ১৬টি। এছাড়াও ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তরুণদের জন্য অনুষ্ঠিত হয় কর্মশালা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সামিটে অংশগ্রহণ করে প্রায় ৬০ লক্ষ নেটিজেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: