সুমন দত্ত
রাস্তায় মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। এই বিয়ারিং প্যাড এর আগে কয়েকবার সড়কের উপর খুলে পড়েছিল। গঠিত হয়েছিল তদন্ত কমিটি। সুপারিশও বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। তাহলে এবার কেন আবার ঘটল? এই প্রশ্নে উত্তর অজানা। তাই এটি রাষ্ট্রের হত্যাকাণ্ড বলা উচিত। অবহেলা মৃত্যু এমনটা কোনো মতেই বলা যায় না। ২০২০ সালে মেট্রোরেলের এসব রাবার প্যাড নিম্নমানের। এটা বুয়েটের এক বিশেষজ্ঞ টিম বলেছিল। তখন বলা হয়েছিল প্রজেক্টের কাজ দেরি হয়ে যাবে। এ কারণে মান সম্মত রাবার প্যাড লাগানো যায়নি। সামাজিক মাধ্যমে এই কথা উঠে এসেছে। সত্য মিথ্যা নিশ্চিত করা যায়নি।
আজ একজনের জীবন প্রদীপ নিভে গেল। এর দায় কে নেবে? যে পরিবার সন্তান হারালো, এতিম হলো সন্তান, স্ত্রী হারালো স্বামী। এটা টাকা দিয়ে কিংবা চাকরি দিয়ে পূরণ সম্ভব না। হারানো মানুষটি কারো বিকল্প হতে পারে না। জীবন হারানো ব্যক্তির পরিবার আজীবন এই দু:খ বহন করে যাবে। তাদের এই দু:খ দেখার কেউ থাকবে না। মিডিয়াতে হয়ত কয়েকদিন আলোচনা চলবে। এরপর সব ঠাণ্ডা। দেশের ফুটপাত আজ নিরাপদ নয়। মেট্রোরেল কিংবা যানবাহন। কখনও কার ওপর উঠে যায় তা আগে থেকে কেউ বলতে পারে না। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে পড়ে যাচ্ছে। মারা যাচ্ছে যাত্রীসহ পথচারী। এজন্য কার শাস্তি হয়েছে?
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলে ড্রাইভারে শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর। এমন বস্তাপচা আইন নিয়ে চলছে দেশের বিচার ব্যবস্থা। মনে হচ্ছে রাষ্ট্র চায় দুর্ঘটনা আরো বেশি বেশি ঘটুক। জনগণ মরুক বেশি বেশি। তা না হলে এসব আইন সংশোধন না হয়ে বছরের পর বছর টিকে থাকে কি করে।
প্রত্যেকের কাজের প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে হয়। বাসায় নিরাপদে ফেরাটা সবাই নিশ্চিত হতে চায়। রাষ্ট্রের কি উচিত না এই পরিবেশ তৈরি করা। মেট্রোরেল পরিবহণ সেক্টরে আধুনিক সংযোজন। একে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ রাষ্ট্র কাউকে না কাউকে দিয়ে রেখেছে। তাহলে এমন ঘটনা কেন বার বার ঘটছে। এই প্রশ্নের উত্তর দায়িত্ব প্রাপ্তদের দিতে হবে।
যেসব আমলা মেট্রোরেলের দায়িত্বে ছিল। তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদের বিচার করতে হবে। এই হত্যার জন্য এসব আমলারাই দায়ী। তাদের দুর্নীতির কারণেই আবুল কালাম আজাদের মতো সাধারণ জনগণ বেঘোরে প্রাণ হারায়। তার পরিবারকে রাষ্ট্র দেখভাল করবে। সেই ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে করতে হবে। এতে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া যাবে না। সবাইকে একযোগে এসব দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সোচ্চার হতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক, তারিখল ২৭/১০/২০২৫




