
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: পরিবারের সুখের জন্য সারা জীবনের জমানো অর্থ দিয়ে একটি মালবাহী ট্রাক ক্রয় করে বিপাকে পড়েছেন আতিকুর রহমান নামের এক মালয়েশিয়া প্রবাসী। সাড়ে ৯লাখ টাকাসহ গাড়িটি হজম করতে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দেয়া চুরির মামলায় আসামি হয়েছেন প্রবাসী পরিবার। এ যেন পরিবারের সুখের জন্য টাকায় কেনা বিপদ! প্রতারিত ওই প্রবাসী সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভিমখালী ইউনিয়নের সেলাইয়া গ্রামের আবদুল বাতেনের পুত্র।
প্রতারিত হয়ে প্রবাসী আতিকুর রহমানের ভাই আসাদুর রহমান বাদি হয়ে একই গ্রামের মুক্তার আলীর পুত্র রিয়াদ হাসান ওরফে শাহনুর, মিরাশ আলীর পুত্র নিজামুর ও মিজানুরকে আসামি করে সুনামগঞ্জ আদালতে একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় আদালত কর্তৃক আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারির পর দুইজন আদালতে হাজির হলেও যার মাধ্যমে উদঘাটন হবে ঘটনার রহস্য সেই রিয়াদ হাসান ওরফে শাহনুর রয়েছেন পলাতক। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ রহস্য উদঘাটনের ভয়েই পরিকল্পিতভাবে গ্রামের মুক্তার আলীর পুত্র রিয়াদ হাসান ওরফে শাহনুরকে অন্যত্রে সরিয়ে রেখেছে মামলার অন্যান্য আসামিরা।
সম্প্রতি জামালগঞ্জ উপজেলার ভিমখালী ইউনিয়নের সেলাইয়া গ্রামে সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসির সাথে আলাপ করে জানা যায়, কয়েক বছর আগে ভিমখালী ইউনিয়নের সেলাইয়া গ্রামের মুক্তার আলীর পুত্র রিয়াদ হাসান ওরফে শাহনুর টাটা কোম্পানী থেকে কিস্তির মাধ্যমে একটি ট্রাক ক্রয় করার উদ্যোগ নেন। তার নামে পর্যাপ্ত কাগজপত্র না থাকায় তার চাচাতো ভাই মিরাশ আলীর পুত্র স্থানীয় সাংবাদিক নিজাম নূর এর কাগজপত্র দিয়ে সুনামগঞ্জের টাটা শো রুম থেকে কিস্তির মাধ্যমে একটি ট্রাক ক্রয় করেন রিয়াদ হাসান ওরফে শাহনুর। নিজামনুরের নামে গাড়িটি ক্রয় করায় ২৮টি কিস্তির টাকা চাচাতো ভাই নিজাম নূরের মাধ্যমে জমা দেন। এক পর্যায়ে অর্থের অভাবে গাড়িটি বিক্রির উদ্যোগ নেন রিয়াদ হাসান। এতে তার বোন জামাই রাসেল আহমদের মধ্যস্থতায় সাড়ে ৯লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে গাড়িটি ক্রয় করেন ওই প্রবাসি আতিকুর রহমান। এসময় গাড়ির কাগজপত্র নিজামনুরের নামে থাকায় তার ভাই মিজানুর সহ তাদেরকে নিয়ে রিয়াদ হাসানের সাথে একটি বিক্রয় রশিদ করা হয়। কিস্তি পরিশোধ শেষে গাড়িটি নিজামনুর আতিকুরের নামে কাগজপত্র দেওয়ার কথাও ছিল। পরে কিস্তি পরিশোধ করতে গেলে রিয়াদ হাসান জানতে পারেন নিজামনুরকে ২৮টি কিস্তি দিলেও পরিশোধ হয়েছে মাত্র ২২টি। বাকী ৬টি কিস্তির টাকা নিয়ে সংবাদকর্মী ওই প্রভাবশালী চাচাতো ভাই নিজাম নূরের সাথে মনোমালিন্যতার সৃষ্টি হয় রিয়াদ হাসানের। পরে রিয়াদ হাসান আতিকুরকে দিয়ে ৬ টি কিস্তি পরিশোধ করিয়ে নগদ ৬ লক্ষ টাকা নেন। এরপর গাড়িটির কাগজপত্র নিজামনুরের নামে আসার পর আতিকুরের নামে দেওয়ার কথা থাকলেও নিজামনুর খেলেছেন গেম। সাত মাস গাড়িটি আতিকুরের নিয়ন্ত্রনে থাকলেও নিজামনুরের নামে কাগজ থাকায় আতিকুরসহ রিয়াদ হাসানের উপর চুরির মামলা দিয়ে গাড়ি উদ্ধার পূর্বক আদালতের মাধ্যমে নিজ জিম্মায় নিয়েছেন।
অথচ এলাকাবাসীও জানেন গাড়িটির প্রকৃত মালিক রিয়াদ হাসান ওরফে শাহনুর। শুধু কিস্তির কাগজপত্র আছে নিজামনুরের। এমন কি গাড়ি বিক্রয়ের সময়ও নিজামনুর ও মিজানুর ছিলেন। যদিও নিজামনুর এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান রিয়াদ হাসান তার চালক ছিল। চালক গাড়ি বিক্রি করায় তিনি তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তবে রিয়াদ হাসান কর্তৃক আতিকুর রহমান প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি তিনি সত্যতা স্বীকার করেন। আপোষ মিমাংসার জন্য সময় নিলেও তিনি কোনো উদ্যোগ গ্রহন করেন নি। এছাড়া এলাকায় ও থানায় একাধিক বৈঠক হলেও রিয়াদ হাসান রহস্যজনক কারণে উপস্থিত থাকেন নি।
প্রবাসী আতিকুরের পরিবারের দাবি, নিজামনুর গেম খেলে রিয়াদ হাসানকে সরিয়ে রেখেছে। টাকা উদ্ধার সহ দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করছেন ভূক্তভোগি পরিবার।
স্থানীয় লালবাজারের ব্যবসায়ী অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সেনা সদস্য নিজাম, স্থানীয় বাসিন্দা লিয়াকত আলী, মোহাম্মদ আলী, কবির হোসেন, রিয়াদ হাসানের বোন জামাই রাসেল হোসেন, আতিকুরের মা রোকেয়া বেগম, খালা আছিয়া বেগম, বোন সৈয়দা বেগম, চাচাত ভাই জিল্লুর রহমানসহ এলাকাবাসীর অনেকেই গাড়ি ক্রয় করে প্রবাসি আতিকুর রহমান সাড়ে ৯ লাখ টাকা প্রতারিত হওয়ার বিষটি নিশ্চিত করেছেন।
ভিমখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান তালুকদার বলেন, পরস্পর বিরোধী বক্তব্য শুনা যাচ্ছে। তিনটি পক্ষ নিয়ে বসা সম্ভব হয়নি। থানায় বসা হলেও রিয়াদ হাসান ওরফে শানুর আসেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, অনেক আগে আতিকুর রহমান বিষয়টি অবগত করেছিল বর্তমানে বিষয়টি কোন অবস্থায় আছে তা জানা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাগজপত্রের বাহিরে কিছু বলার নেই। তবে কেউ যদি বেইমানি করে সেটাকে কিভাবে ধরবেন?
ঢাকানিউজ২৪.কম / কে এন
আপনার মতামত লিখুন: