বিজয় কর রতন, মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:- কিশোরগঞ্জের অষ্ট্রগ্রামে বৈঠাখালী নদী শুকিয়ে যাওয়ায় অষ্টগ্রাম উপজেলার তিন হাজার একর বোরো জমিতে সেচ বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক। সেচের অভাবে একমাত্র ফসল বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্তের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। নদী থেকে ‘নালা’ খননের মাধ্যমে দ্রæত সেচ প্রকল্প চালুর দাবি তাদের। জানা যায়, অষ্টগ্রাম উপজেলার বৈঠাখালী নদীর দুই তীরে তিনটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার একর জমিতে বোরো ধান আবাদে পানি সেচের প্রধান উৎস এই নদী। গত কয়েক বছর জানুয়ারি মাসের দিকে নদীর দুই প্রাপ্ত শুকিয়ে বন্ধ হয়ে যায় পানি চলাচল।
নদীর তলদেশে আটকে পড়া পানিতে চলে বোরো ধানের সেচ। কৃষকরা জানান, চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত না থাকায় বর্ষার আটকানো পানি শেষ হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩ হাজার একর বোরো জমিতে ১০ দিন বন্ধ রয়েছে ৭-৮টি সেচপ্রকল্প। গত শুক্রবার সরজমিনে বৈটাখালী নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায় পানি শুকিয়ে খেলার মাঠ হয়ে গেছে জমিগুলি। সেচের অভাবে সবুজ ধানের জমি ক্রমেই ফ্যাকাশে রূপ ধারণ করায় উদ্বিগ্ন কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা, পূর্ব অষ্টগ্রাম ও সদর ইউনিয়নের গায়েলা, বর্দলি, ছাতিয়া, কেউডা, জলডুব, কবিরখান্দানের চর, কান্তা বাঁধাঘাট, মাছিল্লাসহ বিভিন্ন হাওরের ৭-৮টি সেচ প্রকল্পগুলো ১০ দিন নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে। এ কারণে অনেক জমি পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। কৃষক রশিদ মিয়া জানান, হাওরাঞ্চলে এখন বোরো ধানের শীষ বের হওয়ার কথা, এই সময়ে জমিতে পানি না থাকায় যে শীষ বের হবে তা খুব দুর্বল হবে। এতে ধানে চিটার পরিমাণ বেশি হবে।
জলডুব হাওরের কৃষক মফিজ উদ্দিন বলেন, চলতি কৃষি মৌসুমে বন্ধ হওয়া সেচ প্রকল্পগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করতে হলে বৈঠাখালী নদীতে দুই কিলোমিটার নালা খনন করে সেচ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। না হলে আমার মতো হাজারো কৃষক ক্ষতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অষ্টগ্রাম বড় হাওরে কৃষক হুমায়ুন কবির দানা বলেন, আমরা কৃষক মানুষ, আমাদের জীবন-জীবিকা চলে এই একমাত্র বোরো ধান উৎপাদনের উপর। এবার আমাদের হাওরে তীব্র সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। সেচ সমস্যা দ্রুত সমাধানসহ নৌ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বৈঠাখালী নদী খননের বিকল্প নেই। পূর্ব অষ্টগ্রামের কৃষক বাছির মিয়া বলেন, জমিতে সঠিক সময়ে সেচ দিতে না পারায় জমিতে এবার ধান কম হবে। আমরা চাই এই নদীতে আপাতত একটা নালা কেটে সেচের ব্যবস্থা করে দিতে। এতে কৃষকের ফসল রক্ষা হবে। নয়তো আমাদের সঙ্গে দেশেরও ক্ষতি হবে। অষ্টগ্রাম সদর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু বলেন, বৈঠাখালী নদী শুকিয়ে ১০-১২ দিন জমিতে সেচ বন্ধ রয়েছে। দ্রæত এখানে নালা খনন করে সেচ প্রকল্প চালু এবং স্থানীয় সমাধানে নদী খননের দাবি করছি। অন্যথায় হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএডিসি (সেচ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আছাদুল হক বলেন, সেচ সংকটের কথা শুনে তাৎক্ষণিক সরেজমিন পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এই মুহূর্তে জমিতে সেচ না দিলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।