ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeআন্তর্জাতিকইসরায়েল কী নিজের মতো করে সাজাতে চাইছে মধ্যপ্রাচ্য

ইসরায়েল কী নিজের মতো করে সাজাতে চাইছে মধ্যপ্রাচ্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত কয়েক বছর ধরে, ইসরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তা লাভ করে মধ্যপ্রাচ্যে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে চাচ্ছে।ইসরায়েল বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব বিস্তার করতে এবং নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। এই কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং এ সম্পর্কের ভিত্তিতে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে তার কৌশলগত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অত্যাধুনিক অস্ত্র, কূটনৈতিক সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রদান করে। এরই ফলে, ইসরায়েল, সিরিয়া, ইরান, লেবানন এবং গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা বাড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ইসরায়েলের জন্য রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা নিয়ে আসে। এটি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক চাপে পড়েও অধিকতর স্বাধীনভাবে তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার সাহস দেয়।

ইসরায়েলের এই হামলার পেছনে বিশেষজ্ঞরা একে একটি সুচিন্তিত কৌশল হিসেবে দেখছেন। সিরিয়ার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এবং সরকারবিহীন অবস্থা ইসরায়েলকে সুযোগ করে দিয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইসরায়েলের হামলার ফলে হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইরান দুর্বল হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি করতে চাইছে।

২০১৩ সাল থেকে সিরিয়ায়-ইসরায়েলি বাহিনী নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। তাদের একমাত্র অজুহাত ছিল, সিরিয়ার মাটিতে ইরান ও ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর উপস্থিতি। তবে, বাশার আল আসাদ সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলের হামলা আরও তীব্র হয়েছে।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) প্রেসিডেন্ট আসাদের পতনের পর থেকে সিরিয়াজুড়ে ৫০০ এরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে ইসরায়েল তাদের ‘সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা অঞ্চল’ গঠনের জন্য গোলান মালভূমির বাফার জোন দখল করেছে। ১৯৭৪ সালে গঠিত এই বাফার জোন এখন ‘ব্যর্থ’ বলে ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েল সেখানে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাচ্ছে।

ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক মাইরাখ জোনসজেইন জানান, ইসরায়েল বর্তমানে একটি কৌশল প্রয়োগ করছে যেখানে তারা কোনো হুমকি শনাক্ত করলে দ্রুত সেখানে সেনা মোতায়েন করে এবং সেই সুযোগকে কাজে লাগায়। এটা ইসরায়েলের আঞ্চলিক শক্তি প্রতিষ্ঠার একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে।

ইসরায়েলের এই হামলা ও কার্যকলাপকে বিশ্বব্যাপী নিন্দা করা হচ্ছে। সিরিয়ায় হামলা চালানোর পাশাপাশি তারা ইরান, লেবানন এবং ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাতেও আক্রমণ চালিয়েছে। বিশেষ করে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের পর, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ যেমন ইরান, মিসর, কাতার, সৌদি আরব, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং আরব লিগ ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিমরোদ ফ্ল্যাশেনবার্গ বলেছেন, ইসরায়েল এই অঞ্চলে শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলির সংখ্যা কমাতে চাইছে, তবে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশ এখনও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যের রূপ বদলে দেওয়ার কথা বলছেন, তা শুধু তাদের নিরাপত্তা কৌশলের একটি অংশ নয়, বরং তাদের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক লক্ষ্যকে প্রতিফলিত করে। ইসরায়েল ভবিষ্যতে সিরিয়া, ইরাক এবং ইরানের মতো দেশগুলির মধ্যে ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন সাধন করতে চায়। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিরিয়া আসাদ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে চলতে পারবে, ইরান আরও আধিপত্য বিস্তার করবে, কুর্দিরা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে সফল হবে এবং ফিলিস্তিনিরা তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে।

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের এই কৌশল শুধু রাজনৈতিক বা সামরিক লক্ষ্যই নয়, বরং বিশাল আঞ্চলিক পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে তারা। তবে, তাদের এই চেষ্টা সব সময়ই আন্তর্জাতিক নিন্দার সম্মুখীন হয়। যদিও ইসরায়েল কিছু অঞ্চলে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার দাবি করছে, কিন্তু তার বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ মুসলিম দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে। এখন দেখার বিষয় হলো, ইসরায়েল এই কৌশল সফল করতে পারে কিনা এবং এর ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক চিত্র কীভাবে বদলে যাবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular