ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeসারাদেশচট্টগ্রামকর্ণফুলীর অভয়মিত্র ঘাটে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

কর্ণফুলীর অভয়মিত্র ঘাটে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : প্রতিদিন কর্ণফুলীসহ কয়েকটি উপজেলার হাজার হাজার মানুষ অভয়মিত্র ঘাট দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পারাপার করছে।

জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণে ফেরিঘাটের উত্তর পাড় অভয়মিত্র ঘাট নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন ঘাট না থাকায় ভাসমান বাঁশ ও কাটের তৈরী ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় উঠানামা করেন কয়েকটি উপজেলার হাজার হাজার যাত্রী। বেশি ভোগান্তিতে পড়ে স্কুল কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, নারী ও শিশুরা। বিশেষ করে সকালে ভাটার সময় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

স্থানীয় খোয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাছরিন বলেন, প্রতিদিন শহর থেকে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। নদীতে ভাটা হলে কাঠের তৈরী ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় উঠতে হয়। অনেক সময় কাঠের ব্রিজের ভাঙা অংশে পা আটকে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ভালো ঘাট হলে যাতায়াতের অনেকটায় সুবিধা হতো নারী ও শিশুদের।

ঘাটের মাঝি মোহাম্মদ আলী বলেন, কর্ণফুলী নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু খনন করা হচ্ছে না। এ কারণে যাত্রীদের কষ্টের সীমা নেই। ভাটার সময় নৌকায় উঠতে গিয়ে প্রায় নারী ও শিশুরা দুর্ঘটনার শিকার হন।

একজন ঘাট মাঝি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, এই ঘাট এখানে ছিলনা, এই ঘাট ছিল সদরঘাটের কাছে। সিটি কর্পোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও স্থানীয় এক আ’লীগের প্রভাবশালী নেতার সহযোগিতায় এই ঘাট ফিরিঙ্গীবাজারে আনা হয়েছে। ঐ প্রভাবশালী নেতা প্রতিমাসে এই ঘাট থেকে ৬০-৮০ হাজার টাকা নিচ্ছেন। এছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত অনেক নেতারাই এই ঘাটের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পাশপাশি আরেকটি ঘাট আছে ফিরিঙ্গীবাজার ব্রীজঘাট। পাশাপাশি দুটি ঘাট একসাথে হওয়ায় ফিরিঙ্গীবাজার ঘাটে যাত্রী নেই বলেও জানা যায়। একটি ঘাট নিয়ন্ত্রণ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অন্যটি নিয়ন্ত্রণ করছেন বিআইডব্লিউটিএ।

অভিযোগ রয়েছে ঘাট গুলো মাঝিদের হাতে না দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের দেওয়া হচ্ছে। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর উপ-পরিচালক মু. কামরুজ্জামান বলেন ব্রিজঘাট হচ্ছে আমাদের এই ঘাটে মাঝিরা কোনো মালামাল না নামালেও আমাদের কোনো বাঁধা নেই। তাদের মালামাল কোথায় নামাবেন তারাই ভালো বলতে পারবে। তাদের যেখানে সুবিধা সেখানেই তারা মালামাল নামাবেন এখানে কোনো বাধ্যবধকতা নেই। ফিরিঙ্গীবাজার ব্রিজঘাট নিয়েছেন আ’লীগ নেতা আরমান তার তত্ত্বাবধানে এই ঘাট পরিচালিত হচ্ছে। এই ঘাটে মাঝিদের হাতে ঘাট দেওয়া হয়নি। তারা অনেক চেষ্টা করেও এই ঘাট পাইনি বর্তমানে এই ঘাটের মাঝিদের অনাহারে দিন যাপন করছেন। কারন এই ঘাটে নেই কোনো যাত্রী নেই কোনো মালামাল উঠানামার কাজ।

আলমগীর কবির নামের এক যাত্রী বলেন অভয়মিত্র ঘাট হচ্ছে জেটির তলে এই ঘাটে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। জেটির তলে ঘাট হতে পারে না কর্তৃপক্ষ যদি এই ঘাটকে অন্য জায়গায় না নিয়ে গেলে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। সবচেয়ে বেশী সমস্যা হচ্ছে এই ঘাটে যাওয়ার রাস্তা একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায়। তখন যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। এছাড়া ঘাট এলাকায় নেই কোনো নিরাপত্তা প্রতিনিয়ত যাত্রীদের মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে। অপর যাত্রী সুমন ঘোষ তিনি বলেন এই ঘাট এখানে ছিল না এই ঘাট ছিল পিকে সেন খালের পূর্ব পাশে বর্তমানে এই ঘাটের নাম ছিল চেয়ারম্যান ঘাট। এখানে জোর পূর্বক এই ঘাট আনা হয়েছে, সন্ধ্যা হলেই বিভিন্ন ছিনতাইকারী, নেশা খোরদের আড্ডায় পরিণত হয়। আমরা খুব ঝুঁকিপূর্ণভাবে এই ঘাট দিয়ে চলাচল করি। সূত্রে জানা যায় এই ঘাট নিয়ন্ত্রণ করছেন চরপাথরঘাটা সাম্পান চালক কল্যাণ সমিতি। এই সমিতি সভাপতি আবুল হোসেন যিনি ক্ষমতাচ্যুত আ’লীগের নেতা ছিলেন। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন। যারা আ’লীগের নেতা সেজে এই ঘাট নিয়েছেন আবার তারা এখন বিএনপির নেতা হয়ে এই ঘাট নেওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রতি দুই বছর পর পর এই ঘাটের টেন্ডার হয়।

একটি সিন্ডিকেটেই এই বর্তমান নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা কখনো আ’লীগ আবার কখনো বিএনপি। এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামাল জানান প্রতিবছরই এই ঘাট ডাক উঠেন। যে যার থেকে বেশী ডাকেন তাকেই আমরা ঘাট দিয়ে থাকি। কে আ’লীগ কে বিএনপি এটা আমাদের দেখার বিষয় না। এই প্রতিবেদকের অপর প্রশ্নে তিনি বলেন ঘাট মাঝিদের হাতেই থাকবে কেন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে ঘাট যাবে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular