নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা অস্ত্রের জোরে দখল, ছিনতাই চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি, মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনায় কিশোরগ্যাং সদস্যদের হাতে একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে । আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হস্তে এসব অপরাধ দমন করতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতা উপর গুলি চালানো ও হত্যাকাণ্ডের মামলায় অধিকাংশ আসামি ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা আন্দোলন অংশ নেয়া ছাত্র জনতার জন্য দুঃখজনক। তাছাড়া তিতাস গ্যাসের লাইন থেকে গ্যাস চুরির কারণে বৈধ গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছে না। অবিলম্বে সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা, শিক্ষক আলেম ও সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ।
রোববার (২০ এপ্রিল) কামরাঙ্গীরচরের মুন্সিরহাটি নয়াগাঁও হাজী আব্দুল আউয়াল স্কুলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক বিগ্রেডের ব্যবস্থাপনায় ‘অজেয় চার’ ইউনিট আয়োজিত নিরাপত্তা বিষয়ক সমন্বয় সভায় এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
সভায় এসব অভিযোগ তুলে ধরেন ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি’র আহ্বায়ক গোলাম রসূল শামীম, কামরাঙ্গীরচর থানা ৫৬ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, কামরাঙ্গীরচর থানা ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক মোঃ শহিদুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কৃষক দলের আহবায়ক হাজী মোঃ কামাল হোসেন, বিএনপি নেতা হাজী জহির, কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আওলাদ হোসেন, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সদস্য সচিব মোঃ সামীর, কামরাঙ্গীরচর থানা কৃষকদলের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, কামরাঙ্গীরচর থানা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মোঃ কাজল খান, কামরাঙ্গীরচর থানা জাসাসের আহবায়ক শরিফুল ইসলাম প্রিন্স। এছাড়াও কামরাঙ্গীরচর থানা জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি গোলাম মোস্তফা, কামরাঙ্গীরচর থানা ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মোঃ মজিবুর রহমান, ৫৬ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মোঃ নাজমুল হক, ৫৭ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামের সভাপতি মোঃ বাকীবিল্লাহ। এছাড়াও জাতীয় নাগরিক কমিটির কামরাঙ্গীরচর থানা প্রতিনিধি মোঃ সালাউদ্দিন আহমেদ নাহিন, সিফাত সুলতানা মীম, মোঃ মেহেদী হাসান, মোঃ সাব্বির হোসেন, শফিক দেওয়ান ও প্রতিভা জাহান নিপাসহ স্কুল, মাদরাসা, বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা।
সভায় উপস্থিত বক্তারা একযোগে বলেন, কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকায় বর্তমানে মাদক, কিশোর গ্যাং, চুরি-ছিনতাই ও জমি দখলের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। কামরাঙ্গীরচরের বেরিবাঁধসহ বিভিন্ন এলাকাগুলোতে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা কিছু কিশোর গ্যাং সদস্য এবং বহিরাগত অপরাধীরা মাদকের আস্তানা তৈরি করেছে। এসব স্থানে দিনে-রাতে আড্ডা চলে, সেখান থেকেই মাদক সাপ্লাই ও ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ে সন্ত্রাসীরা সরকারি ও বিআইডব্লিউটিএ’র জায়গা দখল করে অবৈধ রিকশা গ্যারেজসহ নানা স্থাপনা তৈরি করেছে, যা অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। তাঁরা বলেন, এভাবে চলতে থাকলে এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে।
তারা বলেন, জুলাই আন্দোলনে গুলি ও হত্যার মামলার আসামিরা এখনও ধরা পড়েনি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এসব আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তাঁরা। পাশাপাশি কিছু কারখানা অবৈধভাবে গ্যাস রাইজার বসিয়ে গ্যাস চুরি করছে, যার ফলে বৈধ গ্রাহকরা চরম সংকটে পড়ছেন। গ্যাস সমস্যার সমাধানেও জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
তারা আরও বলেন, এলাকায় উচ্চ শব্দে গান-বাজনা, গভীর রাত পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা, সড়কবাতির অভাব ও মশার উপদ্রব জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরাধীরা এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তাই এলাকায় নিয়মিত টহল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা বৃদ্ধি এবং নাইট গার্ডদের সঙ্গে কার্যকর সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়।
এছাড়াও, আসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য আগেভাগেই প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের সমন্বয়ে পরিকল্পনা গ্রহণের অনুরোধ জানান তাঁরা।
সবশেষে বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ে কেউ যেন অপরাধের আশ্রয় নিতে না পারে, সে বিষয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন ও জনগণকে একযোগে সচেষ্ট থাকতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
সমন্বয় সভা থেকে কামরাঙ্গীরচরের বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধানে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিটি কর্পোরেশন, বিআইডব্লিউটিএ, বিদ্যুৎ অফিস ও সাধারণ জনগণের উপস্থিতিতে সুসংহত ও কার্যকর সমন্বয় গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।