মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম, কুমিল্লা : কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, নাঙ্গলকোট, লালমাই ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলোতে জনবল ও ঔষধ সংকট এবং অব্যবস্থাপনায় রোগী সাধারণের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের খেয়াল খুশির কারনে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে কয়েক লাখ মানুষ। এ অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে কিন্তু স্বাস্থ্য সেবা নেই। সরকারি হাসপাতালের নানা সমস্যায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে ৪টি ’উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের। চিকিৎসার নামে ভয়াবহ প্রতারনা চলছে প্রকাশ্যেই। কিছু দিন ধরে জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৬টি হাসপাতাল বন্ধ করলেও লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট উপজেলার স্বাস্থ্য ক্লিনিক গুলো রয়ে গেছে পর্দার অন্তরালে। তবে লাকসাম সরকারি হাসপাতালটি বর্তমান টিএইচও নাজিয়া বিনতে আলম নতুন আঙ্গিকে প্রযুক্তি নির্ভর স্বাস্থ্যসেবা এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক উন্নয়ন হয়েছে এবং স্বাস্থ্যসেবার মানও বেড়ে চলেছে।
জেলা দক্ষিনাঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশি একাধিক ভুক্তভোগী জানায়, এ অঞ্চলের অলিগলিতে বেঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে হরেকরকম অবৈধ চিকিৎসা কেন্দ্র আর হরহামেশা চলছে চিকিৎসার নামে প্রতারনা বানিজ্য। কাগজে-কলমে বৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও রয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের বিধিমালা অনুযায়ী নানাহ সংকট। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পকেট বানিজ্যে দিনের পর দিন চলছে এসব অবৈধ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অতিরিক্ত ফি, সামান্য অসুখে অপারেশনসহ রয়েছে হরেক রকমের অনিয়ম ও দূর্নীতি। ওইসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব, চিকিৎসক ও জনবল সংকটের সুযোগে বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এদের মধ্যে অনেকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। সাধারন রোগীদের চিকিৎসা সেবা নামে ওইসব অবৈধ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে কাড়িকাড়ি টাকা। প্রত্যেক ক্লিনিকের চিকিৎসকদের বাসা বাড়ি যেন এক একটি হাসপাতাল। চিকিৎসকদের এখন রোগির চাইতে ঔষধ কোম্পানি রিপ্রেজেন্টটিভদের সাথে অবৈধ বানিজ্য জমে উঠেছে। প্রতি নিয়ত রোগীরা হচ্ছেন প্রতারিত। কোন কোন বে-সরকারি ক্লিনিকের গাইনি চিকিৎসক ও সিনিয়র নার্সরা হয়ে যাচ্ছেন শিশুসহ অন্যান্য চিকিৎসক। এ অঞ্চলে নিত্য দিনের মত ২/১ জন ছাড়া শিশু ডাক্তার নেই।
সূত্রগুলো আরও জানায়, কর্মরত ডাক্তাররা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের খেয়াল-খুশিমত অন্যত্র চেম্বার সাজিয়ে বসেছেন। আবার স্থানীয় কোনো না কোনো ক্লিনিকে প্রতিনিয়ত তারা রোগী দেখছেন।
এছাড়া, ওইসব ডাক্তারদের রয়েছে কমিশন ভিত্তিক নিজস্ব এজেন্ট। ওইসব অবৈধ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে জীবন রক্ষাকারী ঔষধের মোড়কে বিক্রি হচ্ছে মরনঘাতক নানাহ বিষ ও মাদক। প্রত্যেক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ফার্মেসীতে দেশী-বিদেশী ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ বিক্রির হচ্ছে বানের পানির মত। এ অঞ্চলের চিকিৎসা ব্যবস্থার অনিয়ম, দূর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন যেন জেঁকে বসেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রাইভেট ক্লিনিক ও অনেক ডাক্তারের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। বাৎসরিক আয়কর জমা দেয়া নিয়েও উঠেছে অভিযোগ। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সাধারণ রোগীদের গলার কাঁটা কিংবা কসাই খানায় রূপ নিয়েছে। সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য সম্মত কোন পরিবেশ নেই বললেই চলে। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিক কিংবা শহর মূখি হচ্ছেন।
সূত্রটি আও জানায়, শহরের বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থ আদায়ের খাত-উপখাতের শেষ নেই। চিকিৎসা সেবা নামে ফ্রি ষ্টাইলে গলা কাটা ব্যবসা চলছে ওইসব প্রতিষ্ঠানে। অর্থ লিপ্সু ওইসব প্রতিষ্ঠানে বহিরাগত চিকিৎসকদের বেপরোয়া তৎপরতায় সাধারন রোগীদের মৌলিক অধিকার চিকিৎসাসেবা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছে। এছাড়া ওইসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকদের হৃদয়তা, সহমর্মিতা ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলাগুলোর স্বাস্থ্যসেবা দপ্তরগুলোর একাধিক কর্মকর্তার মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও কোন তথ্য নেয়া সম্ভব হয়নি।