নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী (রনবী)। কিন্তু তাকে অতিথি করা না হয় সেই দাবি তুলে ঐ সময় চারুকলার বাইরে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছিল। তারই প্রেক্ষিতে আয়োজকদের কাছ থেকে আপত্তির কথা শোনার কোন গোলমাল হওয়ার আগেই চারুকলা থেকে চলে যান রনবী।
সোমবার দুপুরে চারুকলা ইন্সটিউটের ওসমান জামাল মিলনায়তনে অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ।
রণবীকে মঞ্চে উঠতে দেওয়া হয়নি এমর অভিযোগে রফিকুন নবী বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে খোলাসা করে বলেন, আমি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আমি মঞ্চে উঠলে এখানে একটু গোলমাল হতে পারে। আয়োজকরা সেটা আমাকে তা জানালেন, এজন্য আমিই চলে এসেছি।
গণমাধ্যমকে তেমনটাই জানিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজক অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল আলী বলেন, অনুষ্ঠানে রফিকুন নবীকে যাতে অনুষ্ঠানে অতিথি করা না হয় সেই দাবি তুলে চারুকলার বাইরে বিশৃঙ্খলা’ করার চেষ্টা করছিল।
তিনি বলেন, রনবীর যাতে কোনো অসম্মান যেন না হয়, সেই চিন্তা থেকেই তাকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হলে তিনি আর মঞ্চে উঠেননি।
একই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদের ভাষ্যমতে অনুষ্ঠানে রফিকুন নবীকে অতিথি করার কারণে একটা বিশৃঙ্খলা হতে পারে বলে আমাকে কেউ কেউ জানিয়েছেন। রফিকুন নবীর কোনো অসম্মান যেন না হয়, আমি ব্যাপারটি আমার কার্যালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছি, তারা যেন বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে ডিল করেন।পরে ওই বিভাগ থেকে আমাকে জানানো হয় রফিকুন নবীকে পরিস্থিতি বলা হয়েছে, তিনি অনুষ্ঠানে থাকবেন না। আমি তখন বলেছি, রফিকুন নবী না থাকলে আমারও যাওয়াটা ঠিক হবে না। তখন তারা আমাকে জানায়, এটা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করে থাকে অনুষ্ঠানটির জন্য। পরে অনুষ্ঠানটা যেন ব্যাহত না হয়, এ চিন্তা থেকে আমি অনুষ্ঠানে যাই এবং সুন্দরভাবেই অনুষ্ঠান শেষ হয়।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা তৈরি হয়েছে।চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধুরীসহ অনেকে এই বিষয়টি নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।
কেউ কেউ অভিযোগ করে বলছেন, রনবীকে চারুকলার মঞ্চে উঠতে দেওয়া হয়নি। রনবী মঞ্চে উঠলে, অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আসবেন না বলেও প্রচার হচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়।
অনুষ্ঠানের আগেই উপ-উপাচার্যের কার্যালয় থেকে চারুকলা অনুষদকে অধ্যাপক রফিকুন নবীর বিষয়ে আপত্তি জানানো হয় বলেও আলোচনা তৈরি হয়েছে।
এদিকে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম চঞ্চলের ভাষ্য সহউপাচার্যের কার্যালয় থেকে এরকম কোনো নির্দেশনা আসার কথা আমার জানা নেই।
তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে কারা অতিথি হবেন, সেটা তো বিভাগ থেকেই ঠিক করা হয়। অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের এই অনুষ্ঠানে রফিকুন নবী স্যারকে অতিথি করা হয়েছিল, পরে ওই বিভাগ থেকেই অতিথি হিসেবে স্যারকে উইথড্র’ করা হয়েছে।
গতকাল চারুকলায় যা ঘটেছিল-এই বিষয়ে জানতে অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল আলী বলেন, রফিকুন নবী স্যার তো চারুকলায় ভীষণ সম্মানিত, আমরা সবাই তাকে শ্রদ্ধা করি। রনবীর কোনো অসম্মান যেন না হয়, সেই চিন্তা থেকেই তাকে পরিস্থিতি বলা হলে স্যার আর মঞ্চে উঠেন নি।
গণমাধ্যমের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, চারুকলার বাইরের কিছু লোকজন রফিকুন নবী স্যারকে অতিথি করা নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছিল।পরে আমরা বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে সভা করি।পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে স্যারকে বলি।
বাইরের লোক কারা, আর সহউপাচার্যের কার্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা এসেছিল কী জানতে চাইলে অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, যারা বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা করছিল, তারা আমাদের চারুকলার কেউ নন। চারুকলার সবাই রফিকুন নবী স্যারকে খুবই সম্মান করেন।
উপ-উপাচার্যের কার্যালয় থেকে রফিকুন নবীকে মঞ্চে তুলতে বাধা দেওয়ার কোনো নির্দেশনা পাননি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ লিখছেন, ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ছেলে প্রকৌশলী ময়নুল আবেদিনও। রফিকুন নবীর সঙ্গে তিনিও অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে যান। তবে এ নিয়ে
ইকবাল আলী বলেন, ময়নুল আবেদিন আমাদের এই অনুষ্ঠানের মঞ্চে অতিথি তালিকায় ছিলেন না।
অপরদিকে অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল আলী ডটকমকে বলেন, রফিকুন নবী স্যার এই অনুষ্ঠানে ছিলেন না।কিন্তু উনার নামে একটি পুরস্কার কিন্তু দেওয়া হয়েছে। রফিকুন নবী স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড নামে এ বছর থেকেই বিভাগে এই পুরস্কারটি দেয়া হচ্ছে।এটি আমরা অনুষ্ঠানে দিয়েছি।
অধ্যাপক রফিকুন নবী চলে যাওয়ার পর দুপুরে ওসমান জামাল মিলনায়তনে শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। সহউপাচার্য মামুন আহমেদ সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে এই প্রদর্শনী চলবে। শিক্ষার্থীদের আঁকা বাস্তব ও নিরীক্ষাধর্মী শিল্পকর্ম এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।