ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeঅপরাধগৌরীপুরে কিশোরী হত্যাকান্ডের ঘটনায় বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুর

গৌরীপুরে কিশোরী হত্যাকান্ডের ঘটনায় বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুর

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের পশ্চিমপাড়া মহল্লার নিহত গৃহকর্মী কিশোরী শাহিদা আক্তারের মা মাহফুজা দাবী যৌন নির্যাতনের কারণেই তাঁর মেয়ে কিশোরী শাহিদা আক্তার(১৪) এর মৃত্যু হয়েছে। সে আত্মহত্যা কেন করবে, তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে গৃহকর্তা নুরুল হায়দার রাকিব ধরার চেষ্টা করতো, এনিয়ে হাতাহাতি করতো।

এ ঘটনায় তার স্ত্রী নাদিরা নাজনীন সেতু’র নিকট অভিযোগ দিয়েছিলো। এ নিয়ে দু’জনের মাঝে দ্বন্দ্ব ও মারামারিও হয়েছে। আমার মেয়েকেও শাসিয়েছে। এতে লজ্জায় হয়তো সে আত্মহত্যা করেছে, নয়তো তাকে মেরে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমার মেয়ে মরতে পারে না। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি আমার মেয়ের হত্যাকান্ডের বিচার চাই। সোমবার (২১ অক্টোবর/২৪) এসব কথা বলেন তিনি।

শাহিদা আক্তারের হত্যাকান্ডের ঘটনায় গৃহকর্তা নুরুল হায়দার রাকিব ও তার স্ত্রী নাদিরা নাজনীন সেতুকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে ঢাকার খিলগাঁও থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই মো. সাদেকুল ইসলাম। তিনি জানান, নুরুল হায়দার রাকিব খিলগাঁও তিলপাপাড়া ভাড়া রাসায় থাকতেন। রাকিবের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতো শাহিদা। বাসা কেউ না থাকায়। দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে সে। বুধবার (১৬অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের নানা জুবেদ আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

অপরদিকে শাহিদা’র মৃত্যুর সংবাদে বিক্ষুব্দ জনতা সেতু’র বাবা সতিষা গ্রামের হাসমত আলীর বাড়িতে হামলা-ভাংচুর করেছে। হাসমত আলী জানান, হামলাকারীরা এ সময় তাঁর ঘর থেকে স্বর্ণাংলকার, ল্যাপটপ, মূল্যবান জিনিসপত্র, নলকুল ও মোটর সাইকেল লুট করে নিয়ে গেছে। ঘরের দরজা-জানালা ও বাসার আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। গৌরীপুর ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি টিম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ প্রসঙ্গে শাহিদার বাবা শহিদ মিয়া জানান, আমি ও আমার পরিবারের কেউ যাইনি। কে বা কারা হামলা করেছে তাও বলতে পারছি না।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে শাহিদার লাশ গৌরীপুরে আসার পর এলাকাবাসী আবারও বিক্ষুব্দ হয়ে উঠে। লাশ দাফন না করে তাঁরা বিচারের দাবি জানায়। এসময় সেনাবাহিনীর একটি টিম আবারও ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) তার লাশ দাফন করা হয়।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শাহিদার বাবা শহীদ মিয়া পেশায় রিকশাচালক। মা মাহফুজা বেগম গৃহিণী। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে শাহিদা সবার বড়। ২০২০সালে ঢাকায় নূরুল হায়দার রাকিবের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয় শাহিদা আক্তার। রাকিব গৌরীপুর পৌর শহরের সতিষা মহল্লার হাসমত আলীর মেয়ের জামাতা।

শাহিদার বাবা শহিদ মিয়া বলেন, আমি গরিব রিকশাচালক মানুষ। ভিটেমাটি ছাড়া কিছু নেই। চার বছর আগে পার্শ্ববর্তী মহল্লার হাসমত আলী তার মেয়ের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজের জন্য আমার মেয়ে শাহিদাকে নিয়ে যায়। এখন সেই বাড়ি থেকেই মেয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল। কেন আমার মেয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল আমি এর বিচার চাই।

শাহিদার মা মাহফুজা বেগম বলেন, গত কুরবানীর ঈদের সময় মেয়ে বাড়ি ফিরে আর যেতে চাইছিল না। পরে হাসমত আলী বুঝিয়ে শোনিয়ে দুই মাসের কথা বলে শাহিদাকে ঢাকায় তার মেয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। গত সোমবার রাতে শাহিদার সাথে শেষ কথা হয়। মেয়ে বলে এখন আসবো না কয়েকদিন পর একেবারেই চলে আসবো। কিন্তু এখন মেয়ে আসলো লাশ হয়ে। জীবিত মেয়েকে আর দেখা হলো না।

রাকিবের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে জানান হাসমত আলী। তিনি বলেন, আমার মেয়ে নাদিরা নাজনীন সেতু তার স্বামী রাকিবের সাথে ঢাকায় বসবাস করে। চার বছর ধরে শাহিদা ওদের সাথেই থাকতো। আমার মেয়ে শাহিদাকেও বোনের মতো দেখতো। কিভাবে কি হল বলতে পারছি না। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তদন্তে সত্য বেরিয়ে আসবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular