ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeঅর্থনীতিচট্টগ্রামে প্লাস্টিকের বিনিময়ে ডিম তেল মাছ মুরগি পাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষরা

চট্টগ্রামে প্লাস্টিকের বিনিময়ে ডিম তেল মাছ মুরগি পাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষরা

রূপম ভট্টাচার্য্য, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : এক কেজি প্লাস্টিক দিয়ে পেতে পারেন ৬টি ডিম। আবার ৪ কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে মিলবে এক লিটার সয়াবিন তেল কিংবা মুরগি-মাছ। বন্দর নগরীতে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে প্লাস্টিকেরবিনিময়ে বাজার’ নামে এমনই এক পাইলট প্রকল্প শুরু করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, পাইলট প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর। প্রকল্পের অধীনে নগরের পতেঙ্গা ও হালিশহরে দুটি স্থায়ী স্টোর চালু থাকবে। এছাড়া ৫০টি ভ্রাম্যমাণ বাজার ক্যাম্প হবে। যেখানে প্রতি ইভেন্টে ৫ শতাধিক পরিবার প্লাস্টিক জমা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারবেন। আয়োজকরা জানান, প্রকল্পের প্রথম দিনেই ৫ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করতে পারছেন তারা।

আজ সকালে কর্ণফুলী নদীর পাড় সংলগ্ন বাকলিয়া স্টেডিয়ামে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
মেয়র বলেন, ‘যেকোনো সমস্যা সমাধানে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়া সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নদীমাতৃক এই দেশের প্রাণপ্রবাহ বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণে বিপন্নপ্রাণীকুলকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। এই পৃথিবীকে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য রাখতে হলে সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষা করতে এই প্রকল্পগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লক্ষ কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারে যেখানে প্রতি কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের দাম ২০-২৫ টাকা সেখানে এই প্রকল্পে বিদ্যানন্দ দিচ্ছে ৫০-৮০ টাকা পযন্ত দাম। স্টোরগুলোতে এক কেজি প্লাস্টিক দিয়ে ৬টি ডিম এবং ৪ কেজি প্লাস্টিক দিলে পাওয়া যাবে ১ লিটার সয়াবিন তেল কিংবা ১টি মুরগী অথবা মাছ। এছাড়াও শিক্ষা সামগ্রী, কাপড়, স্যানিটারি প্যাড সহ আরো ২২ ধরনের নিত্যপণ্যের সমাহার থাকছে এই সুপারশপে।

জানা গেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা দিবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এই প্রকল্প সফল হলে আরো বৃহৎ আকারে এই প্রকল্পের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে আয়োজকদের।

বিদ্যানন্দের বোর্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা এতই ব্যাপক যে এটি সরকারের একার পক্ষেরোধ করা একেবারেই অসম্ভব। এই দূষণ কমাতে দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা। তাই মানুষকে সম্পৃক্ত করতেই আমরা সারাদেশে প্লাস্টিক এক্সেঞ্জস্টোর চালু করছি।’

তিনি জানান, সাম্প্রতিক চুয়েটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বন্দর নগরীর মানুষ প্রতিদিন ৩ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন করে। এর মধ্যে ২৫০ টন (৯ শতাংশ) প্লাস্টিক এবং পলিথিন বর্জ্য। এর মধ্যেথেকে প্রতিদিন ১৫০ মেট্রিক টন বর্জ্য খাল ও নর্দমায় গিয়ে পড়ে। সিপিডির এক গবেষোণা বলছে, দেশের উপকূলীয় নদ-নদীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে। যা বন্দর নগরীর জন্য খুবই উদ্বেগজনক।

প্রকল্পটিকে একটি টেকসই অলাভজনক বিজনেস মডেল উল্লেখ করে বিদ্যানন্দের বোর্ড সদস্য জামাল বলেন, প্রথম বছর আমরা প্রতিকেজি প্লাস্টিকে ৩০-৪০ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি। যেমন প্রতি কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে এভারেজ ৬০ টাকার পণ্য দিলেও, সেই প্লাস্টিক রিসাইকেল কোম্পানির কাছে বিক্রি করে পাচ্ছি প্রতি কেজিতে এভারেজ ৩০ টাকার কম। ২ লাখ কেজি প্লাস্টিক রিসাইকেল করতে আমরা পণ্য দিচ্ছি ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার। প্লাস্টিক বিক্রি করে রিসাইকেল কোম্পানি থেকে পাব ৬০ লক্ষ টাকা।’
‘পরবর্তী বছর একই পরিমাণ প্লাস্টিক রিসাইকেল করতে আমাদের ভর্তুকি দিতে হবে ৫০% কম। এভাবে ফান্ড রিরোলিং হয়ে ৩য় বছরের পর একই পরিমাণ প্লাস্টিক রিসাইকেল করতে কোন ভর্তুকিই প্রয়োজন হবেনা। প্রকল্পটি কোন প্রকার অনুদান ছাড়াই স্বাধীনভাবে চলবে। বিদ্যানন্দ শুধু এডমিন কস্ট চালিয়ে যাবে যেটা খুবই মিনিমাম হয় স্বেচ্ছাসেবীদের স্বেচ্ছাশ্রমের বিনিময়ে।’-বলেন তিনি।

এর আগে, ২০২২ সালে সর্বপ্রথম প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে বিদ্যানন্দ চালু করে ‘প্লাস্টিক এক্সেঞ্জস্টোর’। সেন্টমার্টিনে প্লাস্টিক বর্জ্য ম্যানেজমেন্টের কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই কোন রিসাইকেল সিস্টেম কিংবা ভাঙ্গারির দোকান। ফলে প্রবাল দ্বীপের মানুষের কাছে প্লাস্টিক একেবারেই মূল্যহীন। তাই তারা প্লাস্টিক যত্রতত্রফেলে রাখে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এই আইডিয়ার মাধ্যমে সেন্টমার্টিনের প্লাস্টিককে ‘মুদ্রায়’ রুপান্তর করে। দ্বীপের মানুষ পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার করার সুযোগ পায়। ফলে একদিকে যেমন দ্বীপ ও সমুদ্রপ্লাস্টিক দূষনমুক্ত হচ্ছে তেমনি দ্বীপের অভাবী মানুষ প্রায় বিনামুল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার পাচ্ছে। সেন্টমার্টিনে এই প্রকল্পের অভাবনীয় সাফল্যের পর দেশব্যাপী এটা চালুর চিন্তা মাথায় আসে আয়োজকদের।

 

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular