ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeসারাদেশচট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: টোল হার কমিয়ে নতুন প্রস্তাব

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: টোল হার কমিয়ে নতুন প্রস্তাব

রূপম ভট্টাচার্য্য, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলের জন্য বিভিন্ন যানবাহনের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কম টোল নির্ধারণ করে নতুন প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রস্তাবের পর চলতি বছরের শুরুতে গৃহায়ন ও গর্ণপূর্ত মন্ত্রণালয় যে টোল হার নির্ধারণ করেছিল তা ‘বেশি’ বলা হচ্ছিল বিভিন্ন মহল থেকে।

অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যালোচনা সভায় টোল হার পুনর্র্নিধারণ করে মন্ত্রাণলয়ে নতুন প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর ২৮ অক্টোবর সিডিএ’র নবগঠিত বোর্ডের প্রথম সভায় নতুন প্রস্তা
বের জন্য টোল হার নির্ধারণ করা হয়। সেই প্রস্তাব গত সপ্তাহে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

পুনর্র্নিধারণ করা টোল প্রস্তাবে ন্যূনতম দূরত্বে প্রাইভেট কার, এসইউভি, মাইক্রোবাস, পিকআপ, বাস, মিনিবাস, চার চাকার ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানে আগের চেয়ে কম টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া সর্বোচ্চ দূরত্বেও পিকআপ, বাস ও কাভার্ড ভ্যানে কম টোল আদায়ের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে ।

পাশাপাশি নগরীর জিইসি বা টাইগার পাস মোড় থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে আগ্রাবাদ বা ফকিরহাটে নামা এবং নিমতলা বা আগ্রাবাদ থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে লালখান বাজার বা টাইগার পাসে নামা, এই অংশে ট্রেইলার চলাচল করতে না দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে বাকি অংশে ট্রেইলার চলাচলের জন্য টোল প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানতে চাইলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, “২৪ সেপ্টেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে সিডিএ’র বোর্ড সভায় নতুন টোল প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। বোর্ড তা অনুমোদন করেছে।

“এরপর গত সপ্তাহে আমরা নতুন টোল প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। অনুমোদন হয়ে এলে টোল আদায় শুরু হবে। টোল ব্যবস্থাপনায় কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত শুরুতে আমরা নিজেরাই টোল আদায় করব।”

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি নির্ধারিত অংশে ট্রেইলার ওঠা-নামা না করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গত ২৮ অগাস্ট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল শুরু হয়েছে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে পর্যালোচনা সভায় নির্ধারণ করা টোল হারে মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত অনুমোদন না দেওয়ায় এখন পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় করা হচ্ছে না।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ওই টোল হার প্রস্তাব করেছিল সিডিএ। এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি সিডিএ’র ওই প্রস্তাবিত হারের চেয়েও কয়েকটি ক্ষেত্রে বেশি টোল ধার্য করে টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা সভায়। তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটর সাইকেল, অটোরিকশা এবং ট্রেইলার চলবে না।

কত কমবে?
ফেব্রæয়ারিতে নির্ধারিত টোলের হার ছিল মোটর সাইকেলে সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে কভার্ড ভ্যানে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। পুনর্র্নিধারণের পর প্রস্তাবিত টোল হার দাঁড়িয়েছে মোটর সাইকেলে সর্বনিম্ন ১০ টাকা এবং কভার্ড ভ্যান ও ট্রেইলারে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা।

দূরত্ব ভেদে মোটরসাইকেলের জন্য টোল প্রস্তাব করা হয়েছে বিভিন্ন পয়েন্ট ভেদে ১০ ও ১৫ টাকা। অটোরিকশা ও অটো (তিন চাকার যান) সর্বনিম্ন ২০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৩০ টাকা।

প্রথম প্রস্তাবেও সিডিএ মোটর সাইকেল, অটোরিকশা ও তিন চাকার যানের জন্য একই হার প্রস্তাব করেছিল। যদিও সেবার এসব যানবাহন চলাচলে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনই মেলেনি।

ফেব্রুয়ারিতে এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ে যে কোনো প্রান্ত থেকে ওঠা-নামার ক্ষেত্রে একই টোল হার ধার্য করা হয়েছিল। আর নতুন টোল হারের ক্ষেত্রে তিন ধরনের পথ নির্ধারণ করে দূরত্ব ভেদে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ টোলের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এরমধ্যে নগরীর জিইসি বা টাইগার পাস মোড় থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে আগ্রাবাদ বা ফকিরহাটে নামা এবং নিমতলা বা আগ্রাবাদ থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে লালখান বাজার বা টাইগার পাসে নামা, এই অংশে সব যানবহানের টোল সর্বনিম্ন ধরা হয়েছে।

আর জিইসি, সিআরবি ও আগ্রাবাদ থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে সিইপিজেড, সিমেন’স ক্রসিং, কেইপিজেড ও সি বিচ এলাকায় নামা এবং সি বিচি, কেইপিজেড ও সিইপিজেড থেকে উঠে নিমতলা, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস ও লালখান বাজারে নামার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ টোল প্রস্তাব করা হয়েছে।

নতুন প্রস্তাবে প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৮০ টাকা (আগের হার ১০০ টাকা), এসইউভিতে সর্বনিম্ন ৭০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা (আগের হার ১০০ টাকা), মাইক্রোবাসে সর্বনিম্ন ৯০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১০০ টাকা (আগের হার ১০০ টাকা) এবং পিকআপে সর্বনিম্ন ১৩০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা (আগের হার ২০০ টাকা) প্রস্তাব করা হয়েছে।

পুনর্র্নিধারণ করা প্রস্তাবে মিনিবাস সর্বনিম্ন ১৮০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২০০ টাকা (আগের হার ২০০ টাকা), বাস সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা (আগের হার ৩০০ টাকা), চার চাকার ট্রাক সর্বনিম্ন ১৮০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২০০ টাকা (আগের হার ২০০ টাকা), ছয় চাকার ট্রাক ওঠানামা ৩০০ (আগের হারও ৩০০ টাকা), কভার্ড ভ্যান ওঠানামা ৪৫০ টাকা (আগের হার ৫০০) প্রস্তাব করা হয়েছে।

আর ট্রেইলারের ক্ষেত্রে জিইসি, সিআরবি ও আগ্রাবাদ থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে সিইপিজেড, সিমেন’স ক্রসিং, কেইপিজেড ও সি বিচ এলাকায় নামা এবং সি বিচি, কেইপিজেড ও সিইপিজেড থেকে উঠে নিমতলা, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস ও লালখান বাজারে নামার বেলায় ৪৫০ টাকা টোল প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ সকল সংস্থার যানবাহন টোল দিয়েই চলাচল করবে।
নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্তপ্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ উড়াল সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।

২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন হওয়ার সময় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল।

পরে ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা (আগের ব্যয়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ) ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

এক্সপ্রেসওয়েটি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছিল গত সরকারের আমলে।

প্রকল্পের কাজ শুরুর পর চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তি, জমি অধিগ্রহণের জন্য অপেক্ষা, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না পাওয়া, লালখান বাজার অংশের নকশা নিয়ে আপত্তি, কোভিডের সময় কাজে ধীরগতি, বিকল্প সড়ক চালু করতে দেরি এবং সবশেষ বন্দর সংলগ্ন এলাকায় নকশা পরিবর্তনসহ নানা কারণে দেরি হয়।

১৬ কিলোমিটার উড়াল সড়কটি বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরুহয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেকবিল্ডিং-চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেঁষে টাইগার পাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে।ইতোমধ্যে এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি র‌্যাম্প নির্মাণের কাজও শুরুহয়েছে।

 

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular