ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeসারাদেশচসিকের জনবল কাঠামোয় বিশৃঙ্খলা

চসিকের জনবল কাঠামোয় বিশৃঙ্খলা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) অনুমোদিত জনবল কঠামো অনুযায়ী পদ আছে ৪ হাজার ২২৬টি। বিপরীতে সংস্থাটিতে কর্মরত আছেন ৮ হাজার ২০২ জন। অর্থাৎ অনুমোদিত জনবলের দ্বিগুণের বেশি কর্মরত। এরপরও গত জুলাই মাসে ৬০০ জন অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হয় মন্ত্রণালয়ে। ওই সময় মেয়র পদে দায়িত্বপালনকারী রেজাউল করিম চৌধুরী এ অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগের উদ্যোগ নেন। দীর্ঘ তিন বছর ৬ মাস ৪ দিন দায়িত্বপালন করেন তিনি।

এসময় কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই চসিকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হয় ২৫০ জন কর্মচারী। এদের বেশিরভাগকে নিয়োগ দেয়া হয় শ্রমিক হিসেবে। কিন্তু পরবর্তীতে পদায়ন করা হয় বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে। একই সময়ে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১১জন প্রকৌশলী নিয়োগ দেয়া হয়। এ নিয়োগ নিয়েও আছে নানা অভিযোগ। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বর্তমানে তা তদন্ত করছে চসিক। এর আগে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের মেয়াদকালেও বিজ্ঞপ্তি ছাড়া নিয়োগ দেয়া হয়েছে চসিকে।

ডোর টু ডোর প্রকল্পে নিয়োগ দেয়া হয় ২ হাজার জনকে। যেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সবগুলো ধাপ অনুসরণ করা হয়নি। একইভাবে আ জ ম নাছির উদ্দিনের মেয়াদকালে চসিকে সৃষ্ট পদের অতিরিক্ত ৭৩ জন বৈদ্যুতিক হেলপার কর্মরত ছিলেন। এরপরও এ পদে বিজ্ঞপ্তি ছাড়া নিয়োগ দেয়া হয় ২৭ জনকে। সংস্থাটির পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়গুলো ওঠে আসে। নিয়োগের পর ওই ২৭ জনের বেশিরভাগকে অন্য পদে পদায়ন করা হয়। সর্বশেষ রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব পালনকালে রাজস্ব বিভাগের কর আদায়কারী পদেও বদলি করা হয় এদের কয়েক জনকে। কেবল জনবল কাঠামোর অতিরিক্ত কর্মী বা ‘মর্জিমাফিক’ নিয়োগ নয়, সংস্থাটিতে কর্মরত অসংখ্য কর্মকর্তাকর্মচারী রয়েছেন যারা মূল পদের পরিবর্তে অন্য পদে কর্মরত। সবমিলিয়ে জনবল ইস্যুতে চরম ‘বিশৃঙ্খলা’ বিরাজ করছে চসিকে।

বিদ্যুৎ বিভাগে জটিলতা বেশি : চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগে ‘নিয়মবর্র্হিভূতভাবে’ নিয়োগ করা ২৭ জনের মধ্যে আছেন এরশাদুল আলম ও জিহাদ মিয়া। সর্বশেষ তাদের পদায়ন করা হয় রাজস্ব বিভাগের কর আদায়কারী হিসেবে। অথচ নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, এ পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া একই সময় নিয়োগ পাওয়া মামুন কর্মরত যান্ত্রিক বিভাগে। এছাড়া সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের মিস্ত্রি বাদল কান্তি দাশকে পদায়ন করা হয় ট্রান্সপোর্ট পুল সহকারী পদে। যদিও এ পদেও সরাসরি নিয়োগ করতে হয় বিধি অনুযায়ী।

এছাড়া রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে বৈদ্যুতিক হেলপার মকসুদুল মিনার রাসেলকে রাজস্ব বিভাগের কর আদায়কারী পদে পদায়ন করা হয়। পাশাপাশি ৬জন মিটার রিডার কাম বিল সহকারীকে বাতি পরিদর্শক কাম বিল সহকারী হিসেবে পদায়ন করা হয়। এরা হচ্ছেন আবদুল জব্বার, শংকর ঘোষ, সুজন ভৌমিক, মোহাম্মদ শেখ জামাল, হিসাম চৌধুরী ও অরূপ চৌধুরী। এদের কয়েক জনের বিরুদ্ধে পদের বিপরীতে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘাটতির অভিযোগ আছে। কয়েকজন চসিকের অনুমতি ছাড়াই উচ্চ শিক্ষা নেন বলেও অভিযোগ আছে। এছাড়া বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি দোলন বড়ুয়া ও বৈদ্যুতিক হেলপার রাজেশ চক্রবর্তীকে লাইসেন্স ইন্সপেক্টর পদে পদায়ন করা হয়।

বাতি পরিদর্শক এনামুল হক এনামকে ২০২২ সালে সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হলে তা বাতিলের নির্দেশনা দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে একই বছরের অক্টোবরে চসিক মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানায়, সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে আদেশটি বাতিল করা হবে। পরবর্তীতে ৩ জন প্রকৌশলী নিয়োগ দেয়া হলেও অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে নেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ আছে একই বিভাগের অন্য কর্মচারীদের মাঝে।

মূল পদ নয়, অন্য পদে কর্মরত :
মেয়র দপ্তরে কর্মরত এস এম আহসানুল হক। যদিও তার মূল পদ ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারী। একই দপ্তরে অফিস সহকারী পদে আছেন মো. শাখাওয়াত হোসেন শিবলী। তার মূল পদ হিসাব সহকারী।

এছাড়া রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব পালনকালে নিয়োগ দেয়া ২৫০ জনের মধ্যে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রাহুল মজুমদারকে সহকারী প্রকিউরমেন্ট অফিসার, তৌহিদকে সহকারী প্রোগ্রামার পদে পদায়ন করা হয়। একইসময়ে তানভীর হোসেন নামে একজনকে কর্পোরেশন পরিচালিত কলেজে নিয়োগ দিয়ে পদায়ন করা হয় আইটি শাখায়। অবশ্য সরকার পতনের পর তাকে প্রভাষক (আইসিটি) হিসেবে বদলি করা হয়।

এছাড়া শ্রমিক থেকে রকি দাশকে কম্পিউটার অপারেটর, মহিবুল হাসানকে কর আদায়কারী, নুরুল আলমকে কর আদায়কারী, ইফতেখার ইউনুসকে সনদ তদারককারী পদে পদায়ন করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সর্বশেষ ২৫০ জনের বাইরেও বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ দেয়া অসংখ্য কর্মচারীকে তাদের পছন্দের পদে পদায়ন করা হয়। যা জনবল কাঠামোয় এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৫০ জনসহ চসিকে বিভিন্ন সময়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃত জনবলের বিষয়টি তদন্তে চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিনকে আহ্বায়ক করে গত ৮ সেপ্টেম্বর ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। ওই কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়া শ্রমিকরা বর্তমানে কোথায় কর্মরত তারাও সেটাও খতিয়ে দেখছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, পছন্দের চাকরিপ্রার্থীর আবেদনে ‘বিধিমতে ব্যবস্থা নিন’ লিখে সচিবকে নির্দেশনা দিতেন রেজাউল করিম চৌধুরী। সচিব নথি তৈরি করে মেয়রের কাছে উপস্থাপন করতেন। মেয়র সেখানে ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ ভিত্তিতে শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত করা হউক’ লিখে অনুমোদন দিতেন। এর পর চাকরিপ্রার্থীকে মর্জি মতো বেতন নির্ধারণ করে নিয়োগপত্র দিতেন সচিব।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেননি। ৬০০ জন নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়নি। মূল পদের পরিবর্তে অন্য পদে পদায়ন প্রসঙ্গে বলেন, দাপ্তরিক প্রয়োজনে নেয়া হয়েছে। সবে মাত্র নতুন মেয়র মহোদয় এসেছেন তিনি যেভাবে বলবেন সেভাবে হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular