নিউজ ডেস্ক : গত এক মাসে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। পর্দার আড়ালে বাজারে খেলছে ‘সিন্ডিকেট’। সরকারের ইতিবাচক সব উদ্যোগ বিফলে যাচ্ছে।
সেই নিয়মের ধার না ধেরে হাজার হাজার টন চাল গুদামে ভরে রেখেছেন উৎপাদন এলাকার মিলার ও মজুতদাররা। খাদ্যশস্য মজুতেরও আছে নিয়ম। চালের সংকট না থাকলেও বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিমভাবে দামের ঘোড়া ছোটাচ্ছেন তারা। এ কারসাজির সঙ্গে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধা পাওয়া বড় মিলার ও উৎপাদন অঞ্চলের কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী জড়িত। ঢাকার বাদামতলী, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও কারওয়ান বাজারের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীও রয়েছেন এই চক্রে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চালের মিল, বাজার ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা ৩ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। তবে সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ টন। সে হিসাবে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়েছে ৩০ লাখ টনের মতো। এতে চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা। এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক বন্যায় ৮ লাখ ৩৯ হাজার টন চালের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। মিলারার বন্যার উছিলা আর মজুত ফুরিয়ে আসছে বলে ধুয়া তুলে ভোক্তার পকেট কাটছে।
সরকার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিল বা বাজারে চালের কমতি নেই। সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। প্রয়োজনে জড়িতদের ব্যাপারে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বছরের শুরু থেকেই এবার চালের বাজার ছিল চড়া। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় তা আরও বেড়ে যায়। এর পর আর স্বস্তি ফেরেনি বাজারে। গত সপ্তাহে আরেক দফা বেড়েছে দাম। বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ ও পাইজাম জাতের চালের। এ ধরনের চালের ভোক্তা সাধারণত মধ্যবিত্ত। গত শুক্রবার ঢাকার বাজারে খুচরা পর্যায়ে এ দুই জাতের চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬৪ টাকায়। এ ছাড়া মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫২-৫৫ টাকা ও চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হয়েছে কেজি ৭০-৮০ টাকা দরে। মাস তিনেক আগে মোটা চালের কেজি ৪৮-৫০, মাঝারি চাল ৫৪-৫৮ এবং চিকন চাল ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে, গেল এক মাসে সরু চালের দর প্রায় ৪ শতাংশ, মাঝারি চালের ৮ ও মোটা চালের দর ২ শতাংশ বেড়েছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে এই হার আরও বেশি। এ সময় সব ধরনের চালের দর বেড়েছে গড়ে ১২ শতাংশ।