গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : জনবল সংকটের কারণে ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনের চার সেকসনের রেলপথের ১৪টি স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এসব স্টেশনে নিয়মিত ট্রেন থামে, যাত্রীরা উঠা-নামাও করে। তবে স্টেশন মাস্টার সাইনবোড আছে, মাস্টার নেই। টিকেট কাউন্টার আছে, টিকেট মাস্টার নেই। বিশ্রামাগার আছে, রক্ষণাবেক্ষণ নেই। নেই বাঁশির হুইসেল, উড়ে না লাল-সবুজ পতাকা। ট্রেন আসা-যাওয়ার নেই কোনো ঘোষণা, নির্ধারিত সময়ে চলাচলকারি ট্রেন এলেও, ট্রেন বিলম্ব বা বাতিল হওয়ার খবর আসে না এসব স্টেশনে। জনবল সংকটে এসব স্টেশনের কার্যক্রম এখন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে রয়েছে যাত্রীসাধারণ, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বিনষ্ট হচ্ছে শত কোটি টাকার রেলওয়ের সম্পদ।
ভৈরব, মোহনগঞ্জ, জারিয়া-ঝাঞ্জাইল ও ময়মনসিংহ এ চার রেলপথের জংশন স্টেশন হলো গৌরীপুর। গৌরীপুর- ভৈরব রেলপথে বোকাইনগর, নান্দাইল রোড, মুশুলী, নীলগঞ্জ, ঈশ্বরগঞ্জ ও সোহাগী; গৌরীপুর-জারিয়া রেলপথে পূর্বধলা, ঝালশুকা; গৌরীপুর-মোহনগঞ্জ রেলপথে চল্লিশানগর, হিরণপুর, বাংলা, ঠাকুরাকোনা, অতিথপুর এবং গৌরীপুর-ময়মনসিংহ রেলপথের বিসকা স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেন গৌরীপুর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার সফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, জনবল সংকটের কারণেই এসব স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পূর্বধলা স্টেশনে একজন শুধুমাত্র টিকেট বিক্রি করেন।
ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য স্বামী ও দুই পুত্রসন্তান নিয়ে বিসকা স্টেশনে এসেছেন আছিয়া খাতুন। স্টেশনে তাদের মত অনেকেই এসেছেন, নানা গন্তব্যের জন্য। ট্রেন আসবে সেটা জানে তবে কখন আসবে তা কেউ জানে না। কলা বিক্রেতা কাকচর গ্রামের হোসেন আলী (৬৫) জানান, ট্রেন তো আসবেই, জারিয়া-মোহনগঞ্জ ট্রেন আছে; একটু দাঁড়ান। স্টেশন প্রসঙ্গে বলেন, টিকেট দেয়ারও লোক নাই, গাড়ির কথা কওয়ারও লোক নাই। স্টেশনে কর্মকর্তাদের ভবনগুলো ও অফিসগুলো নষ্ট হচ্ছে। গজহরপুর গ্রামের খোরশেদ আলম জানান, স্টেশনে লোকজন না থাকায় সব মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা টিকেট করতে পারছে না। মোহনগঞ্জের ট্রেনে উঠে বিসকা থেকে ময়মনসিংহ গিয়ে মোহনগঞ্জের ভাড়া দিতে হচ্ছে। এতে যাত্রীরা অপমানিত ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিসকা রেলওয়ে স্টেশনের একটি কক্ষ ভাসমান মলমূত্র ত্যাগের কারণে গণশৌচাগারে পরিণত হয়েছে। অবশিষ্ট কক্ষগুলোতে ঝুলছে তালা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনগুলো অযত্ন অবহেলা নষ্ট হচ্ছে। এ স্টেশনে জারিয়া, মোহনগঞ্জ, ভৈরবগামী ১২টি ট্রেনের যাত্রী উঠানামা করে। আন্তঃনগর হাওর, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন অতিক্রমের সময়ও এ স্টেশনে উড়ে না লাল-সবুজের পতাকা। গৌরীপুরের বোকাইনগর রেলস্টেশনের নামটি ফলকটিও ধসে পড়ছে। স্টেশনের কার্যালয়টির সব মালামাল লুট হয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে থাকা কঙ্কালসার ভবনটিও হারিয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ স্টেশনে এখন আর কোনো ট্রেন থামে না। এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রইছ উদ্দিন বলেন, গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর একটি ঐতিহাসিক এলাকা, জনসাধারণ ও কৃষকপর্যায়ের উন্নয়নের জন্য স্টেশনের কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন। সেই সাথে ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথে ৪টি লোকাল ট্রেন এবং বন্ধ স্টেশনগুলো চালু করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
ঈশ^রগঞ্জ রেলস্টেশনের ভবনগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্টেশনে কার্যক্রম না থাকায় নষ্ট হচ্ছে রেলওয়ের মূল্যবান সম্পদ। রেলওয়ে টিম্যান সোলামায়ন এ স্টেশনে সবেদল নীলমণি। তিনিও সবকিছুর দায়িত্ব পালন করছেন। তবে করোনাকালীন দুর্যোগে লোকাল ট্রেন বন্ধ হওয়ায় এ স্টেশনে শুধুমাত্র নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন থামে। এরপরেই রয়েছে সোহাগী রেলস্টেশন। দু’টো স্টেশনেই রয়েছে বুকিং অফিস, যাত্রী ছাউনি. আবাসিক কোয়াটার, স্টেশন মাস্টার অফিস, সিগন্যাল ব্যবস্থাসহ নানা কার্যালয়। তবে এসব ভবনের তালা খোলারও লোক নেই। সোহাগী স্টেশনে শহিদুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম সুমন ও রাজু মিয়া নামে শুধুমাত্র তিনজন গেইটম্যন রয়েছেন। সোহাগী স্টেশনের কর্মচারী উমেশ চৌহান ও ব্যবসায়ী মানিক মিয়া জানান, স্টেশনটি দেখভাল করার মতো কেউ না থাকায় সিগন্যাল রুমের তারগুলো চুরি হয়ে গেছে। ফলে স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা না থাকায় এ স্টেশনে এখন আর ট্রেন ক্রসিং হয় না। সোহাগীর মো. সুমন ভূইয়া জানান, এ অঞ্চলের সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের রয়েছে বাণিজ্যিক সম্পর্ক। দেশের ৮০শতাংশ বাঁশের ধাড়ি এ অঞ্চলে উৎপাদন হয়। বিপননে উৎপাদনকারী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে আঠারবাড়ী রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, দু’টো স্টেশনে স্টেশন মাস্টার ও জনবল সংকটের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি উধ্বর্তন মহল অবগত আছেন।
অপরদিকে নবনির্মিত রঙিন সুসজ্জিত ভবন সমৃদ্ধ স্টেশন হিরণপুর, চল্লিশানগর, বাংলা, ঠাকুরাকোনা, অতিথপুর, ঝালশুকা। ট্রেনের নিয়মিত চলাচল থাকলেও এসব স্টেশনে কোনো জনবল নেই। পূর্বধলা রেলস্টেশনে একজন শুধুমাত্র টিকেট বিক্রি করেন। প্রত্যেকটি ‘ঘ’ ক্যাটাগরি স্টেশনে বুকিং মাস্টার ৩জন, পোর্টারম্যান ১জন, সুইপার ১জন ও ‘গ’ ক্যাটাগরি স্টেশনে স্টেশন মাস্টার ৩জন, পয়েন্টসম্যান ৬জন, পোর্টারম্যান ২জন ও ২জন সুইপারের পদ রয়েছে। তবে এসব স্টেশন ঘুরে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেখা মিলেনি। এ প্রসঙ্গে অতিথপুর স্টেশন সংলগ্ন দোকানদার আবু সাঈদ জানান, স্টেশনটি জনবলশূন্যতায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আইনুন আসরাফ সিদ্দিকী রতন জানান, ট্রেন আসবে কখন; এ প্রশ্নের উত্তর স্টেশনে জানার সুযোগ নেই।
এদিকে নান্দাইল রোড রেলওয়ে স্টেশনে দেখা মিলে একদম ভিন্নচিত্র। পরিপাটি রেলওয়ে স্টেশন, তবে জনমানবশূন্য। দু’জন কর্মচারী মাঝেমধ্যে আসলেও এ স্টেশন কার্যত অচল। ভৈরব লোকাল ট্রেন করোনাকালীন দুর্যোগের সময় বাতিল হওয়ার পর এ স্টেশনে ট্রেন থামেনা। স্টেশনের প্লাটফরম প্রত্যেকটি অফিসকক্ষে ঝুলছে তালা। তবে স্টেশনে চারপাশ ও প্লাটফরম অত্যন্ত সুন্দর-গোছানো। এ প্রসঙ্গে নান্দাইল রোডের তোফাজ্জল হোসেন জানান, দু’একজন মাঝে মধ্যে আসেন, তারাই পরিস্কার করে রেখে যান। নান্দাইল রোডের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জানান, এ স্টেশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নেমে তাড়াইল, নান্দাইল ও ত্রিশালের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ। অথচ স্টেশনটি এখন অচল। অনুরূপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে মুশুলী ও নীলগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনেও।
এসব স্টেশনে থাকা কোটি কোটি টাকার সরকারি জরুরী প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি-রেললাইন, স্লিপার, হুক চুরি হয়ে যাচ্ছে। স্টেশনগুলো অচল হওয়ায় রেলপথেও বাড়ছে ঝুঁকি। স্টেশনে লোকজন না থাকায়, সন্ধ্যার পরে এসব স্টেশনে অপকর্মের আস্থানায় পরিণত হয়েছে। যাত্রীদের জীবন ও মালামাল নিয়ে উঠানামায়ও ঝুঁকিপূর্ণ। নীলগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী আবুল কাসেম বলেন, জনবল না থাকায় স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসের জিনিসপত্র শুধু নয়, দরজা-জানালাও ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। বোকাইনগর স্টেশন এলাকার আমজাদ হোসেন বলেন, যন্ত্রপাতি লুটপাট শেষ, এখন ঘরের টিনগুলোও নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্টেশনগুলো চালু হলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। সরকারি সম্পদও রক্ষা পাবে।
স্টেশন মাস্টার ৩জন, পয়েন্টসম্যান ৬জন, পোর্টারম্যান ২জন ও ২জন সুইপারের পদ রয়েছে। তবে এসব স্টেশন ঘুরে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেখা মিলেনি। এ প্রসঙ্গে অতিথপুর স্টেশন সংলগ্ন দোকানদার আবু সাঈদ জানান, স্টেশনটি জনবলশূন্যতায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আইনুন আসরাফ সিদ্দিকী রতন জানান, ট্রেন আসবে কখন; এ প্রশ্নের উত্তর স্টেশনে জানার সুযোগ নেই।
এদিকে নান্দাইল রোড রেলওয়ে স্টেশনে দেখা মিলে একদম ভিন্নচিত্র। পরিপাটি রেলওয়ে স্টেশন, তবে জনমানবশূন্য। দু’জন কর্মচারী মাঝেমধ্যে আসলেও এ স্টেশন কার্যত অচল। ভৈরব লোকাল ট্রেন করোনাকালীন দুর্যোগের সময় বাতিল হওয়ার পর এ স্টেশনে ট্রেন থামেনা। স্টেশনের প্লাটফরম প্রত্যেকটি অফিসকক্ষে ঝুলছে তালা। তবে স্টেশনে চারপাশ ও প্লাটফরম অত্যন্ত সুন্দর-গোছানো। এ প্রসঙ্গে নান্দাইল রোডের তোফাজ্জল হোসেন জানান, দু’একজন মাঝে মধ্যে আসেন, তারাই পরিস্কার করে রেখে যান। নান্দাইল রোডের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জানান, এ স্টেশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নেমে তাড়াইল, নান্দাইল ও ত্রিশালের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ। অথচ স্টেশনটি এখন অচল। অনুরূপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে মুশুলী ও নীলগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনেও।
এসব স্টেশনে থাকা কোটি কোটি টাকার সরকারি জরুরী প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি-রেললাইন, স্লিপার, হুক চুরি হয়ে যাচ্ছে। স্টেশনগুলো অচল হওয়ায় রেলপথেও বাড়ছে ঝুঁকি। স্টেশনে লোকজন না থাকায়, সন্ধ্যার পরে এসব স্টেশনে অপকর্মের আস্থানায় পরিণত হয়েছে। যাত্রীদের জীবন ও মালামাল নিয়ে উঠানামায়ও ঝুঁকিপূর্ণ। নীলগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী আবুল কাসেম বলেন, জনবল না থাকায় স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসের জিনিসপত্র শুধু নয়, দরজা-জানালাও ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। বোকাইনগর স্টেশন এলাকার আমজাদ হোসেন বলেন, যন্ত্রপাতি লুটপাট শেষ, এখন ঘরের টিনগুলোও নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্টেশনগুলো চালু হলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। সরকারি সম্পদও রক্ষা পাবে।