পঞ্চগড় প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়নের আরাজি শিকারপুর এলাকায় জমি নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই পক্ষের অন্তত ২০/২৫ জন। আহতদের বোদা ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় দুইপক্ষের অন্তত ২০/২৫ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আরাজি শিকারপুর এলাকার ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কলেজ শিক্ষক তরিকুল ইসলামের পরিবারের সাথে পাশর্^বর্তী বানিয়াপাড়া এলাকার জিয়াউর রহমানের পরিবারের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। ১০ থেকে ১২ বিঘা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। জমিটি পাল্টাপাল্টি দখলের অভিযোগ রয়েছে।
কিছুদিন পূর্বে জমিটি দখল করে জিয়াউর ও তার স্বজনরা ভুট্টা রোপন করে। সবে চারাগুলো ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত বড় হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তারিকুল ও তার স্বজনরা শতাধিক লোক ভাড়া করে ওই ভুট্টা জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে হাল চাষ দেন। এ সময় জিয়াউর ও তার স্বজনরা বাঁধা দিতে গেলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। গুরুতর আহত হয় জিয়াউর ও তার স্বজন ইসমাইল। এ সময় গ্রামের একটি অংশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে তরিকুল ও তার চাচা নজরুল ইসলামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে এবং ভাড়াটে লাঠিয়ালদের ঘেড়াও করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর মধ্যেই তরিকুলের বাড়ির বেশ কয়েকটি ঘর ও ঘরে রাখা জিনিসপত্র আগুনে পুড়ে যায়। উঠোনে রাখা দুটি ট্রাক্টর ও কয়েকটি মোটরসাইকেলও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংঘর্ষে দুইপক্ষের ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়। আহতদের বোদা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কেউ কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন।
এদিকে এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করেছেন অন্তত ২০ থেকে ২৫ জনকে। তার মধ্যে তরিকুলসহ তার ভাড়াটে লাঠিয়ালরাই বেশি।
কলেজ শিক্ষক তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ি ঘরে তারা অগ্নিসংযোগ করেছে। এখন আমাদেরকেই উল্টো ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
জিয়াউর রহমানের ভাজতি রমিলা বেগম বলেন, সকাল থেকেই তরিকুলদের বাড়িতে মোটরসাইকেল নিয়ে বহু ভাড়াটে মানুষ আসে। তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে বিরোধীয় জমি গিয়ে ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করতে গেলে আমাদের লোকজন তাতে বাধা দেয়। এ সময় তারা নির্মমভাবে আমাদের লোকজনকে মারধর করে। জিয়াউর ও ইসমাইলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের রংপুরে পাঠানো হয়েছে। তারা নিজেদের ঘরবাড়িতে নিজেরাই আগুন দিয়ে অন্যদের দোষারোপ করছে। মূলত তারা আওয়ামীলীগের দোসর। তরিকুল আওয়ামীলীগের নেতা তার ছোট ভাই আতাউর ছাত্রলীগের নেতা। তারা আওয়ামীলীগের সময়ে সাধারণ মানুষের নামে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।
বোদা থানার ওসি আজিম উদ্দিন বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। এখনো ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। দুইপক্ষের সংঘর্ষে অনেকেই আহত হয়েছেন। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সেনাবাহিনী কতজনকে আটক করেছে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।