জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের ২০২৫-২৬ সেশনের নবনির্বাচিত কমিটির দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৩ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামের সেমিনার রুমে নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি ওয়াজহাতুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ইবনে মোবারকের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করেন সদ্য বিদায়ী সভাপতি মোসাদ্দেকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নোমান বিন হারুন।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক দৈনিক আমার পত্রিকায় সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি তরুণদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা বিপ্লব করেছে তাই আমরা কথা বলতে পারছি, বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। দৈনিক আমার দেশ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে কর্পোরেট মালিকানা, ব্যবসা, বিজ্ঞাপন এবং রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ বাধা। এই চার বাধা অতিক্রম করতে পারলে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করা সম্ভব হবে। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জাহাঙ্গীরনগরসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরচিত ভূমিকা দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় তুলে ধরবেন বলে জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা শিখিয়েছেন কীভাবে অন্যের বিপদে পাশে থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একের ভিতরে বহু দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন কমিটির সকলকে অভিনন্দন জানাই আশাকরি তারা বস্তুনিষ্ঠতার সাথে কাজ করবেন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমাদের যখন হলে থাকতে দেওয়া হতো না। ক্যাম্পাসে আসলে আমাদের উপর ছাত্রলীগ হামলা করত, ক্যাম্পাসে কোনো মিছিল মিটিং করতে পারতাম না, ডেইরি গেটে ঝটিকা মিছিল করতে হতো, সেই সময় প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাদেরকে জানানো মাত্রই দ্রুততম সময়ে তারা আমাদের প্রোগামগুলে কভারেজ দিয়েছে৷ জুলাই আন্দোলনে আমরা তাদের সহযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছি। তারা শুধু নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেননি, ব্যক্তিগতভাবেও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। আমরা চাই, সাংবাদিকরা যেমন আমাদের ভুলগুলোর সমালোচনা করবেন, তেমনই ছাত্রসংগঠনের ভালো কাজগুলোকেও তুলে ধরবেন।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফিজুর রহমান বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি, ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের হামলার ভয়ে সাংবাদিকরা ভিসির বাসভবনের পাশের পুকুরে ২-৩ ঘণ্টা ধরে পানিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুরো আন্দোলন জুড়ে তারা শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন। আমাদের ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন জাহাঙ্গীরনগরে আর কোনো ভিসি ফারজানার মতো ভিসি না আসতে পারে। যেন ফিরোজের মতো কোনো প্রক্টর না আসতে পারে, যে সাধারণ ছাত্রদের দমন করতে পুলিশকে লেলিয়ে দেয়।
ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতা সোয়াইব হাসান বলেন, প্রেসক্লাবের নতুন কমিটিকে স্বাগত জানাই। আজকে অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচককে দেখ আমি আমি একটু ২০১৩ সালের দিকে ফিরে যেতে চাই। যখন শাহবাগে দেশের তথাকথিক শিল্পী-সাহিত্যিকরা মিলে ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ বলে এক মব সৃষ্টি করেছিল, তখন একমাত্র মাহমুদুর রহমান স্যার বলেছিলেন, ‘শাহবাগে স্বৈরাচারের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।’ তিনি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের জন্য অগ্রপথিক ছিলেন এবং এখনো আছেন।
গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, জুলাই বিপ্লবে যারা শিক্ষার্থীদের পাশে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন, তারা হলেন প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা। আমরা আন্দোলন করেছি জাহাঙ্গীরনগরে, কিন্তু এটিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব। যখন ইন্টারনেটসহ সকল যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ ছিল, তখনও প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা আমাদের পাশে থেকেছেন এবং নির্ভীকভাবে সংবাদ প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্তিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: আবদুর রব, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম, জীববিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, দৈনিক আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃত্ববৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট অন্যন্য ব্যক্তিবর্গ।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জানুয়ারী প্রেসক্লাবের ২০২৫-২৬ কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি হন ওয়াজহাতুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক তানভীর ইবনে মোবারক। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, সহ-সভাপতি পদে মাহমুদুল হাসান, যুগ্ম- সম্পাদক রাহাত চৌধুরি, কোষাধ্যক্ষ ওসমান সরদান, দফতর সম্পাদক এস এম তাওহীদ, গ্রন্থাগার ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার ইমন এবং কার্যকরী সদস্য পদে আহসান হাবিব এবং রবিউল ইসলাম।