নিজস্ব প্রতিবেদক
মধ্যরাতেও রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে মুখোমুখি অবস্থানে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। উভয় পক্ষের মাঝে এখনও চলছে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাঁচজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রোববার দিবাগত রাত ১২টার পরেও সেখানে দুই পক্ষের অবস্থান ও উত্তেজনা চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করছে পুলিশ। তবে পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৭ কলেজের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
সোমবার সরজমিনে দেখা যায়, উভয় শিক্ষার্থীদের মাঝে সঘর্ষ শুরু হওয়ার আগে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত সাত কলেজের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করে রাত ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে মিছিল নিয়ে তাঁরা নীলক্ষেত মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে তারা ৩০ মিনিট বিক্ষোভ করে। ঐ সময়ে ঢাবির কয়েকশ শিক্ষার্থীদেরও এসএম হলের সামনে জড়তো হতে দেখা যায়।
এক পর্যায়ে তারা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে ঢাকা কলেজের দিকে পিছু হটে। এর কিছুক্ষণ পরে আবার সাত কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন।এভাবেই উভয় পক্ষের মাঝে কয়েক দফা ইট পাটকেল নিক্ষেপসহ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। যা মধ্যে রাতেও চলামান।
পাল্টাপাল্টি এই ধাওয়ার মধ্যে রাত ১২টার পর পুলিশ মাঝে অবস্থান নিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এরপরেও দুই পক্ষের শিক্ষার্থীরা দুই দিকে অবস্থান নিয়ে আছেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঢাকা কলেজের সামনে জড়ো হন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখানে কিছু সময় থেকে সরে এসে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন তাঁরা। এতে সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত মোড়, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ সাত কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে অপমান করেন। এর প্রতিবাদে তাঁরা সড়ক অবরোধ করেছেন। তাঁরা জানান, তাঁদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিতে হবে এবং সহ–উপাচার্যকে তাঁর আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ রাকিব বলেন, শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। রোববার বিকেলেও তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মামুনের সঙ্গে দেখা করে দাবিগুলোর কথা জানান। কিন্তু তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তাঁদের বলেন, তোমরা কারা? এটি শিক্ষার্থীদের আত্মসম্মানে আঘাত করে। তাই তাঁরা সেখান থেকে বের হয়ে এসে সন্ধ্যায় সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ বলেন, তারা এসেছিল আমার সঙ্গে কথা বলতে। তখন আমি তাদের বলি, তোমরা সবাই না এসে দুজন আসো। কিন্তু অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ধাক্কাধাক্কি করে ভেতরে ঢুকে যায়। ঘটনা এতটুকুই। সেখানে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ আচরণ করা হয়নি।
তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা বিষয়ে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সাত কলেজের বিষয়ে যে কমিটি আছে, তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ২০২৪-২৫ সেশন থেকেই সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে, শ্রেণিকক্ষের ধারণক্ষমতার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি না করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা, ভর্তি পরীক্ষায় ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটতে হবে ও সাত কলেজের ভর্তি ফির স্বচ্ছতা নিশ্চিতে মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত নতুন অ্যাকাউন্টে ভর্তি ফি জমা রাখতে হবে।