নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বেসরকারি আইসিইউতে রোগী ভাগিয়ে নেওয়া এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দালালদের শাহাদাত হোসাইন (নাঈম) গ্রুপ ও আব্দুল্লাহ আল মাহিম গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাত বারোটার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই গ্রুপের বেশ কয়েকজন আহত হয়।
জানা যায়, শাহাদাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এবং শ্যামলীর সিটি কেয়ার হাসপাতালের আব্দুল্লাহ আল মাহিম আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। রাতে আধিপত্য বিস্তার এবং বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে রোগী ভাগিয়ে নেওয়া কে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়।
শাহাদাত ঢাকা মেডিকেলের ২১১ ও ২১২ এবং জরুরি বিভাগ থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে শ্যামলীর রূপায়ন টাওয়ারে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে রোগী পাঠান। অন্যদিকে, আব্দুল্লাহ শ্যামলী সিটি কেয়ার হাসপাতালের মালিক এবং তিনিও ঢাকা মেডিকেল থেকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন।
আরও জানা যায়, ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শাহাদাত হোসেন নাঈম ঢাকা মেডিকেল থেকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার জন্য নিজস্ব একটি গ্রুপ তৈরি করেন। তাদের কথার বাইরে গেলে বিভিন্ন সরকারি স্টাফদের মারপিট ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
শাহাদাতের গ্রুপে রয়েছে- নোমান, সবুজ, আবির, জাহিদ, নাঈম ও রাজ্জাকসহ আরও অনেকে। অপরদিকে, সিটি কেয়ার হাসপাতালের আব্দুল্লাহ আল মাহিমের গ্রুপে রয়েছেন- রুবেল, লিমন, শামীম, রাকিব, নাহিদ, সিরাজ ও রাফি। প্রায়ই বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নেওয়াকে কেন্দ্র করে এই দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী জানান, শাহাদাত গ্রুপ ও আব্দুল্লাহ গ্রুপ রাতে ২১১ ও ২১২ নম্বর ওয়ার্ড এবং জরুরি বিভাগে মহড়া দেয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। তবে আহত কেউই ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেননি।
হাসপাতালের ভিতরে ও বাইরের নিয়মিত এ ধরনের দালাল কার্যক্রমে সংঘর্ষ হলেও হাসপাতাল প্রশাসনের কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। চলতি বছরের মার্চে যৌথ বাহিনীর অভিযান হলেও মূল হোতারা থেকে যায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তাদের মতে, এসব রাঘববোয়াল দালালদের ধরতে হলে রাতেই অভিযান চালাতে হবে, তা না হলে হাসপাতাল থেকে এদের নির্মূল করা সম্ভব নয়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহাদাতকে ফোন করা হলে তিনি জানান, আমি কলেজ গেটে আছি, আপনি এখানে আসেন, সরাসরি কথা বলি। সংঘর্ষের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি,” বলে ফোন কেটে দেন।
অন্যদিকে, আব্দুল্লাহ আল মাহিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোঃ ফারুক জানান, “হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং নতুন বিল্ডিংয়ের সামনে একটি মারামারির ঘটনা ঘটেছে। তবে আমরা পৌঁছানোর আগেই উভয়পক্ষ হাসপাতাল ত্যাগ করে। আমরা শুনেছি, দালালদের দুই গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছে, তবে তাদের নাম এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।