ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeসর্বশেষতৈরি পোশাকের বিকল্প খাত হতে পারে সৈয়দপুরের তৈজসপত্র

তৈরি পোশাকের বিকল্প খাত হতে পারে সৈয়দপুরের তৈজসপত্র

নীলফামারী প্রতিনিধি : নারী শ্রমিকদের হাত ধরে তৈরি পোশাকের বিকল্প খাত হতে পারে এদেশের তৈরি তৈজসপত্র শিল্প।

দেশের একাধিক তৈজসপত্র কারখানা গড়ে উঠায় সেই সম্ভাবণাকে জাগিয়ে তুলেছে। এমনি একটি কারখানার নাম রয়্যালেক্স মেটাল ইন্ডাষ্ট্রিজ। নোয়াহ্ গ্রুপ নামের ওই কারখানাটির উদ্যোক্তা। কারখানাটি নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবস্থিত। ওই কারখানায় উৎপাদিত প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, ননস্টিক ফ্লাইপ্যান, ওভেন, তৈজসপত্র, ব্রেন্ডার, ইনডাকশন চুলা, অ্যালুমিয়ামের বাসনপত্র, মগ-জগ ইত্যাদি দেশের গন্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটানে। এ তথ্য মিলেছে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।

সরজমিনে সৈয়দপুর শহরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল এলাকায় অবস্থিত নোয়াহ্ গ্রুপের তৈজসপত্র তৈরি কারখানা রয়্যালেক্স মেটাল ইন্ডাষ্ট্রিতে যাওয়া হয়। কারখানাটি প্রচুর নারী শ্রমিক ও কারিগরদের কাজ করতে দেখা যায়। তাঁরা কেউ স্বয়ংক্রিয় মেশিনে প্যাকেজিং করছিলেন। কেউ করছিলেন মেশিন পরিচালনা (অপারেট)। ব্লেন্ডারে বৈদ্যুতিক ওয়ারিং এমনকি ভারী ভারী ডাইস মেশিনও পরিচালনা করতেও দেখা যায়।

কারখানার ব্লেন্ডার ইউনিটে মনিরা স্মৃতি (৩২) নামে এক নারী শ্রমিকের সাথে কথা হয়। ওই ইউনিটে ৪৫ জন শ্রমিকের মধ্যে ৪৩ জনই নারী বলেন জানান তিনি। বাসটার্মিনালের পাশে আদানি মোড় এলাকার বাসিন্দা ওই নারী শ্রমিক সাত বছর ধরে কারখানাটিতে কাজ করছেন। তিনি বলেন, আমরা এই ইউনিটে একজন ফোরম্যানের অধীনে কাজ করি। চাকরির শুরুতে শিক্ষানবীশ হিসাবে এখানে যোগদান করি। প্রথম ছয়মাস আমাকে কাজ শিখতে হয়েছে। আমরা এক একটি ব্লেন্ডার বানানোর পর তা মাননিয়ন্ত্রণ বিভাগে পাঠিয়ে থাকি।

মেশিন অপারেটর খালেদা আকতার (৩৫) বলেন, এ কারখানায় নারী-পুরুষ বেতন বৈষম্য নেই। আমরা মুল বেতনের সাথে কাজ অনুযায়ী ১০ ভাগ বোনাস পাই। নারী শ্রমিক হাসিনা আক্তার বলেন, এ কারখানায় রংপুর ও দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমি নিজেও সৈয়দপুরের কামারপুকুর ইউনিয়নের নিজবাড়ি এলাকা প্রতিদিন এসে কাজ করে থাকি। আমরা সকলেই আটঘন্টা ডিউটি করি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমাদের কাজের সময় মাঝখানে খাবার বিরতি রয়েছে।

কারখানাটির রাইস কুকার ইউনিটে গেলে কথা হয় ফোরম্যান মোসলেম উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, এ কারখানায় মোট ১১০০ শ্রমিক রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ৪০০ নারী কর্মী রয়েছে। তাঁদের হাতে তৈরি হচ্ছে নোয়াহ্ ব্রান্ডের প্রেসার কুকার, ননস্টিক তাওয়া, কড়াই, গ্যাসের ও ইনডাকশন চুলা, মাইক্রো ওভেন, ব্লেন্ডারসহ অনেক কিছু।

কারখানাটির প্রডাকশন ইনচার্জ সুলতান উদ্দিন বলেন, বাজারের তৈজসপত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের নোয়াহ্ পণ্য গুণগত মান অনেক ভালো। কাজেই এসব পণ্যের বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তবে তিনি বলেন, এখানো বাজারে অনেক নকল পণ্যে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। যা খুবই কম দামে বিক্রি হয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কাও বাড়াচ্ছে। বাজার তদারকির জন্য তিনি জোর দাবি করেন।

রয়্যালেক্স মেটাল ইনআষ্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাজ কুমার পোদ্দার জানান, আমাদের কারখানাটি ১৯৭৯ সাল থেকে তৈজসপত্র তৈরি করে আসছে। অতীতে ভারতের আমাদের উৎপাদিত পণ্য প্রেষ্টিজ, হাওকিংস এর প্রেসার কুকারসহ অন্যান্য তৈজসপত্র আমাদের বাজার দখল করেছিলো। এখন আমাদের উৎপাদিত নোয়াহ্ ব্রান্ড ভারতের বাজারে যাচ্ছে। চাহিদা বেড়েছে নেপাল ও ভুটানেও। সরকার ইতিপূর্বে এ খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছিলো। এ ধারা অব্যাহত রাখা জরুরি।

তৈজসপত্র খাতটি প্রণোদনার আওতায় এলে এটিই হতে পারে দেশের অন্যতম রপ্তানি খাত। যা গার্মেন্টস শিল্পের বিকল্প হতে পারে।আমরা ব্যাপক নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। তাঁদের হাত ধরেই এ রপ্তানি খাতটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদি। তিনি উল্লেখ করে বলেন, প্রতিবছর আমার কারখানা থেকে আড়াই থেকে তিন লাখ ডলারের তৈজসপত্র রপ্তানি করে থাকি।

 

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular