নীলফামারী প্রতিনিধি : আলু নিয়ে কৃষকের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। নীলফামারীতে হঠাৎ করে দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়ছেন আলুচাষিরা। জেলার হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। তবে হিমাগারের ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আলু উৎপাদন হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী আলু নিতে পারছে না হিমাগার কর্তৃপক্ষ।
এদিকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে এবং সুবিধাভোগীরা চাষিদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ আদায় করছে। নীলফামারীর সৈয়দপুরে একেকটি আলুর বস্তা হিমাগারে ঢোকাতে কৃষকদের ১০০ টাকা অতিরিক্ত শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে। ৬০ কেজি আলুর বস্তা ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা। অনেকে স্থানীয় হিমাগারে আলু না রেখে দূরবর্তী মাহিগঞ্জ ও রংপুরের বিভিন্ন হিমাগারে আলু রাখছেন। আলুচাষি রহিদুল হক জানান, শুরুতে আলুর কেজি ১৩ থেকে ১৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে ৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকরা হিমাগারমুখি হচ্ছেন।
প্রতিদিনই হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘ লাইন ধরে যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকছে। রাস্তার পাশে এবং হিমাগারের সামনে খোলা আকাশের নিচে শত শত বস্তা আলু রেখে চাষিরা কয়েক দিন ধরে অপেক্ষা করছেন। কেফবা রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন। এলাকায় শ্রমিক, কর্মচারী ও চাষিদের ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এবার নীলফামারীতে প্রায় ২৩ হাজার ১৫৬ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। জেলার বাৎসরিক চাহিদা প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন হলেও অতিরিক্ত ৪ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। যার ফলে বাজারে আলুর দাম হঠাৎ কমে যায়। অতিরিক্ত আলু সংরক্ষণ করতে হিমাগারগুলোতে ছোটাছুটি শুরু হয় কৃষকদের।
জেলায় সরকারি ২টি সহ মোট ১১টি হিমাগার রয়েছে। যার ধারণক্ষমতা ৮৮ হাজার ৬ শত মেট্রিক টন। এছাড়া সরকারি উদ্যোগে নির্মিত ৩৬টি অহিমায়িত মডেল ঘরে আলু রাখা যাবে ৯০০ মেট্রিক টন। তবে, ধারণক্ষমতার বাহিরে আলু নেয়া সম্ভব নয় বলে হিমাগার কর্তৃপক্ষ জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম ও বিপণন কেন্দ্রের কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম বলেন, চাষিদের একই ধরনের ফসল বারবার অধিক পরিমাণে না চাষ করে ভিন্ন ফসল আবাদ করতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তারা আরও বলেন, কৃষকদের সরকারি মডেলে অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মাণ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যাতে আলু সংরক্ষণ সহজ হয়। এ পর্যন্ত নীলফামারীর ১১টি হিমাগারে ধারণক্ষমতার ৭৫ ভাগ আলু নেয়া হয়েছে।