ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeকৃষিপাহাড়ে জুমে চলছে ধান কাটার উৎসব

পাহাড়ে জুমে চলছে ধান কাটার উৎসব

নিউজ ডেস্ক : তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ের জুমে এখন চলছে পাকা ধান কাটার উৎসব। বৃষ্টি আর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার জুমের আবাদ ও ফলন ভালো হয়েছে।। অনুকূল আবহাওয়া ও নিয়মিত পরিচর্যার কারনে এবার খাগড়াছড়ির জুমে ভালো ফলন হযেছে।

ধান ছাড়াও বাহারি সবজির চাষ হযেছে জুমে। পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে পাকা সোনালী ধান জুমিয়াদের এনে দিয়েছে পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্য। ঘরে ঘরে এখন খুশির বন্যা ।কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১৯ হাজার ৮শ ৬২ হেক্টর জমিতে ৪০ হাজার জুমিয়া পরিবার জুম চাষ করছে। এ মধ্যে সবচেয়ে বেশী জুমের আবাদ হয়েছে বান্দরবান পার্বত্য জেলায়। বান্দরবানে ২৮ হাজার পরিবার প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে জুমের আবাদ করেছে।

রাঙ্গামাটিতে ৫ হাজার পরিবার সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে এবং খাগড়াছড়িতে ৬ হাজার ৬শত ৮২ পরিবার ১১ হাজার ১শ ২৪ হেক্টর জমিতে আবাদ করেছে। পার্বত্য অঞ্চলে লাঙ্গলে চাষাবাদ জমির পরিমান খুবই কম। ফলে উপজাতীয়রা জীবন ধারণের একমাত্র উপায় পাহাড়ে আদিযুগের প্রথানুযায়ী জুম চাষের ফসল উৎপাদন করে থাকে। সাধারণত পৌষ-মাঘ মাসে মালিকানাধীন কিংবা পরিত্যক্ত ঘন বন-জঙ্গল, পাহাড় নির্বাচন করে জঙ্গল কাটা শুরু হয় এবং ফাল্গুন-চৈত্র মাস পর্যন্ত প্রখর রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়ে ছাই করা হয়। নেড়া পাহাড়ে বৈশাখের প্রথম বৃষ্টিতে প্রথম বীজ ধান বপন ও পরবর্তীতে বিভিন্ন তরিতরকারি বীজ বপনসহ নানা প্রকার ওষুধি, সবজি রোপণ করা হয়।

বর্তমানে জুম চাষের উৎপাদিত ফসলের মধ্যে রয়েছে-মারপা (শশা জাতীয়) বরবটি, শীম, বেগুন, চিকন মরিচ, ধনিয়া, কুমড়া, ধেরস, বাতিমা, কচু,আদামরিচ,তিল ভুট্টাসহ ৪০ প্রকারের নানা প্রকার বর্ষা কালীন সবজি। এ সমস্ত সবজি পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিটি হাটবাজারে প্রচুর পরিমানে এখন পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি হাটের দিনে বিভিন্ন জেলার কাঁচামালের ব্যবসায়ীরা পাইকারী হারে তা ক্রয় করে ট্রাক ভর্তি করে চালান করছে সমতলের বিভিন্ন অঞ্চলে। জুম তরকারির মধ্যে জুম মিষ্টি কুমড়া ও সাদা কুমড়া সুস্বাধু বলে সব এলাকায় প্রিয়। জুম উৎপাদিত তরি তরকারি গুলো তুলনা মূলক ভাবে অন্যান্য তরকারির চেয়ে কম মূল্য এবং ক্রেতার সংখ্যা বেশি বলে জানা গেছে। এবার এ দেশের অন্যান্য জেলায় তরিতরকারির দাম বেশি হওয়ায় জুম চাষীরা তাদের উৎপাদিত ফসল পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বেশ ভালো দামে বিক্রি করতে পারছে। অন্যান্য বছর যেখানে জুম চাষীরা প্রতি কেজি মারফা (শশা জাতীয়) ফল ২০ টাকা ২৫ টাকা দামে বিক্রি করতেন। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দামে। তরিতরকারী ন্যায্য মূল্য পেয়ে চাষীরা আনন্দিত।

জুম চাষ পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও পাহাড়ীদের ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদ পদ্ধতি বলে চাষীদের আবাদ থেকে ফিরিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে জুমিয়াদের পূর্নবাসন করার পরও জুম চাষ বন্ধ করা যায়নি। এ পরিস্থিতিতে জুমে নতুন জাতের ধান বপন ও পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিউট আউশ মৌসুমের বিরি-২৪, বিরি-২৬, বিরি-২৭সহ গবেষণায় পরীক্ষাধীন দুটি জাতের ধান জুমে পরীক্ষামূলকভাবে খাগড়াছড়িতে আবাদ করেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বাছিরুল আলম জানান, প্রদর্শনী প্লটেও জুমের আবাদ ভালো হয়েছে। চারটি জাতের মধ্যে বিরি- ২৪ ও বিরি- ২৭ এর ফলন সবচেয়ে বেশি হয়েছে বলে তিনি জানান।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular