পঞ্চগড় প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স না থাকায় দুটি ইটভাটা গুড়িয়ে দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
মঙ্গলবার (০৪ ফেব্রুয়ারী) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান পরিবেশ অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের সহকারী পরিচালক মোঃ ইউসুফ আলীকে সাথে নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স না থাকায় দন্ডপাল ইউনিয়নের মেসার্স এমএস ব্রিকস ও মেসার্স কেএসবি ব্রিকসের ইটভাটা দুটি স্কাবেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়। অভিযান পরিচালনার সময় উপস্থিত ছিলেন ফায়ার সার্ভিস দেবীগঞ্জের একটি ইউনিট। তারা পানি দিয়ে ইটভাটা দুটির চুলার আগুন নিভিয়ে দেয়। একই সাথে পল্লী বিদ্যুতের সহযোগিতায় ইটাভাটা দুইটির বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। লাইসেন্স না হওয়া পর্যন্ত ইটভাটা দুইটির সকল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেন।
এই বিষয়ে ইউএনও ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান বলেন, দেবীগঞ্জের দীর্ঘদিন থেকে বেশ কিছু ইটভাটা লাইসেন্স ছাড়াই ইট তৈরী করছিলো। আজ দুইটি ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হলো। পর্যায়ক্রমে লাইসেন্স না থাকা সবগুলো ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
মেসার্স এমএস ব্রিকস এর ২০১৭ ও মেসার্স কেএসবি ব্রিকস এর ২০১৩ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স নবায়ন ছিল। এরপর থেকে ইটভাটা দুইটি অবৈধ ভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে।
পঞ্চগড়ে অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে ইট ভাটার মালিক ও শ্রমিকরা। মঙ্গলবার দুপুরে জলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক ও মালিক পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে জড়ো হন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
এ সময় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ, ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও জামায়াত নেতা সফিউল্লাহ সুফি, সাধারন সম্পাদক শাহীন ইসলামসহ শ্রমিক নেতারা বক্তব্য দেন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন।
বক্তব্যে ভাটা মালিক ও শ্রমিকরা জানান, ২০১৩ সালে অসত উদ্যেশ্য পরিবেশ আইন করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, পরিবেশের নামে দেশের ক্ষুদ্র শিল্পকে ধ্বংসের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরপর কোন ভাটায় অভিযান চালানো হলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বক্তারা।
বিক্ষোভ সমাবেশে পঞ্চগড় জেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও বোদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা সফিউল্লাহ সুফি বলেন, আমরা ইট ভাটা মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে নিজ নিজ ইট ভাটা প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত সুনামের সাথে পরিচালনা করে আসছি। আমরা ভাটার আয় হতেই সরকারের ভ্যাট, ট্যাক্সসহ যাবতীয় সরকারি ফি, সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে অনুদান, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সহযোগিতা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলোতে সহযোগিতা করে আসছি। সরকারের বিধি মোতাবেক ভাবেই আমরা ইট ভাটা পরিচালনা করছি। সরকারের রাজস্ব প্রদানে আমরা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছি। সরকারের উন্নয়ন খাতে আর্থিক সহযোগিতা করতেছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জেলায় যতগুলো ইটের ভাটা রয়েছে তার প্রত্যেকটিতে ৫শ জন করে শ্রমিক রয়েছে। এসব শ্রমিক সারাদিন কাজ করে তাদের প্রাপ্য হাজিরার টাকা নিয়ে গিয়ে বাজার করে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে দিন অতিবাহিত করছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাটার শ্রমিকরাই পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস। তারা পরিবারের সদস্যদের জীবিকা নির্বাহ করে। আমাদের ইট ভাটার ব্যবসা ছাড়া অন্য কোন বানিজ্য নাই। বহু কষ্টে আমরা ইট ভাটা মালিকরা প্রচুর পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করে ভাটা ব্যবসা পরিচালনা করছি। সমাবেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ ইট ভাটা মালিক ও শ্রমিকদের দাবির সাথে একাত্বতা ঘোষনা করে বলেন, সরকারের কাছে আমার দাবি আপনারা ইট ভাটা বন্ধ করে দেন এতে আমার আপত্তি নাই। তবে ভাটা বন্ধ করার আগে হাজার হাজার ইট ভাটার শ্রমিকদের কি কর্মসংস্থান করবেন। এসময় ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ জেলার প্রত্যেকটি ইট ভাটার মালিক ও শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন।