ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের গা ঘেঁষে বয়ে গেছে ভারত থেকে নেমে আসা ছোট্ট নীলকমল নদ। যা দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামে মিলিত হয়েছে ভারত থেকে নেমে আসা আরেক নদী ধরলার সাথে। এ নদ আগে প্রবাহিত হতো সাবেক ছিটমহল দাশিয়ার ছড়ার পাশ দিয়ে। কিংবদন্তি আছে যে, এক সময় এ নদীতে নীলপদ্ম ফুটতো সে থেকেই পৌরাণিক নাম হয় নীলকমল। বর্তমানে লোকমুখে নীলকমল নদী নীলকোমরে রূপান্তরিত হয়েছে। শুধু নামই বদলে যায়নি। সময়ের সাথে সাথে নীলকমল পাল্টিয়েছে তার চলার পথ। দাসিয়ার ছড়ায় নীলকমল এখন মরা খাল।
মরা খালে রাশি রাশি নীলপদ্ম ফুলের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর দেখা মেলেনা। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে খালের জমে থাকা পানিতে জন্মে কচুরিপানা। মৌসুমের শেষ দিকে কচুরিপানা ফুলের সৌন্দর্যে শোভিত হয় নীলকমল। তবে সে সৌন্দর্য বেশিদিন স্থায়ী হয়না। শুষ্ক মৌসুমের শুরু হলেই বদলে যায় নদের দৃশ্য। স্থানীয়রা ব্যস্ত হয়ে পড়েন নদের বুকে চাষাবাদের কাজে। তখন নীলকমলকে দেখে মনে হয় কৃষকের ফসলি জমি।
তবে দীর্ঘদিন পরে হলেও নীলকমল পুনঃ খননের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, ধাপে ধাপে পুনঃ খনন করা হবে নীলকমল। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ইতোমধ্যে ৩০ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬৩০ টাকা ব্যয়ে খালের ৮০০ মিটার পুনঃ খননের কাজ বাস্তবায়নের জন্য রাজশাহীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নওশাদ এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তি করে। চুক্তি মোতাবেক ঠিকাদার খাল খনন কাজ শুরু করতে আসলে স্থানীয়দের বাঁধার কারণে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা নীলকমলকে ফসলি জমি দাবি করে খনন কাজ আটকে দিয়েছেন। খনন কাজ পুরোপুরি বন্ধ রাখার দাবিতে স্থানীয় আমতলা বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনও করছেন। স্থানীয় কৃষক সহিদুল ইসলাম বলেন, এখানকার জমিতে বোরো মৌসুমে বীজতলায় চারা উৎপাদন করে আবাদ করি। এই জমি যদি খনন করা হয় তাহলে আমরা এলাকার মানুষ একবারে নিঃস্ব হয়ে যাব।
কৃষক মোবারক আলী বলেন, আমরা এখানকার জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি। খননের ফলে হাজার হাজার একর জমি আবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তাই আবাদী কৃষি জমি যেন খনন করতে না পারে সে জন্য আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছি।
উপজেলার ঐতিহ্যের নীলকমল দখল হতে হতে হারিয়েছে তার রূপ ও ঐতিহ্য। নীলকমলের বুক জুড়ে চাষাবাদের পাশাপাশি বেশ কিছু জায়গায় বাঁধ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে পানি প্রবাহ। নীলকমল কে দখল এবং দূষণমুক্ত করে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দাবীও অনেকের।
কুড়িগ্রাম বিএমডিএ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড.প্রকৌশলী মো. এজাদুল ইসলাম বলেন, ‘ নীলকমল সরকারি খাল। খালটি পুনঃ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নীলকমলের পাঁচ কিলোমিটার খননের জন্য কার্যাদেশ জারিও করা হয়েছে। খালের বিভিন্ন অংশ দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়রা ভোগদখল করে আসছেন। যারা এতোদিন দখলে রেখেছেন তারাই খনন কাজে বাঁধা দিয়েছেন। আমরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের সাথে বসে দ্রুত সময়ের মধ্যে নীলকমলের পুনঃখননের কাজ শুরু করব ‘।
নীলকমল পুনঃখননের বিষয়ে নদী বিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘ নীলকমল অনেক পুরনো একটা নদী। আরএস রেকর্ডেও নদী, বর্তমান রেকর্ডেও নদী। এই যে নদীটা এটা টিকিয়ে রাখাটা সরকারের একটা বড় দায়িত্ব। জীববৈচিত্র পরিবেশ সবকিছু রক্ষার জন্য নদী বাঁচাতে হবে। আমরা মনে করি সরকার জনস্বার্থে সে দায়িত্ব পালন করবে ‘।