ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: চলতি ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ১লা ফাল্গুন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে ব্যাস্ত সময় পার করছে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি এলাকার ফুল চাষীরা। বাকি আছে আর মাত্র কিছুদিন। আসন্ন এসব দিবসগুলোকে সামনে রেখে শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা ব্যবসায়ীদের।
ফুলের রাজ্য হিসেবে খ্যাত উপজেলার গদখালি, নাভারণ ও পানিসারা ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনিগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি ও চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা ধরনের ফুল।
ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আসন্ন তিনটি দিবসে ফুলের চাহিদা ও দাম বাড়বে। অন্তত ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন তারা।
তিন দিবসকে সামনে রেখে ঝিকরগাছার গদখালী ফুল চাষিরা ১০০কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে ফুলের দাম ও চাহিদা বাড়ায় ফুল চাষিদের মাঝে উৎফুল্ল দেখা দিয়েছে। গোলাপের মত ফুটে উঠেছে চাষিদের মুখে হাসি।
ফেব্রুয়ারিতে পহেলা ফাগুন ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আর স্বাধীনতা দিবস। এই তিন দিবসকে সামনে রেখে, এবারের মৌসুমে চাষিরা ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে একশ’ কোটি টাকা। সেটি পূরণ হবে বলে আশা করছে।
সরেজমিন মঙ্গলবার গদখালী ফুল বাজার ঘুরে দেখাগেছে। প্রতিদিনের মতো সকালে চাষিরা তাদের উৎপাদিত গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাডিওলাস, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা ফুল নিয়ে আসেন যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের গদখালী ফুল মার্কেটে।
ব্যবসায়ীরা মঙ্গলবার অন্যান্য ফুলের চেয়ে গোলাপ বেশি দামে বিক্রি করছেন চাষিরা। দু’দিন আগেও তারা গোলাপ বিক্রি করেন ৬ থেকে ৭ টাকা দরে। কিš‘ আজ ১০ টাকা থেকে ১২টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর রজনীগন্ধা স্টিক বিক্রি হচ্ছে ৫-৬ টাকা। গাডিওলাস ৮-১০ টাকা, জারবেরা বিক্রি করছেন ১৪-১৬ টাকা।
গদখালী পটুয়াপাড়ার মো. ইনতাজ আলী হলুদ ও সাদা চন্দ্রমল্লিকা এনেছেন ১০০০ পিস। বিক্রি করেছেন ৪ টাকা দরে, জারবেরা রঙ ভেদে ১২-১৪ টাকা আর জিপসি প্রতি আঁটি ১৫ টাকা দরে।
গদখালীর মো. জসিম উদ্দিন নিয়ে এসেছিলেন গাডিওলাস, প্রতি পিস গাডিওলাস ৭-৯ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি আশা করছেন, ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে ১০-১২ টাকা দাম পাওয়া যাবে।
সৈয়দপাড়া এলাকার মো. আতি গাজী এবছর ৭ বিঘা জমিতে সবরকম ফুলের চাষ করেছেন, গোলাপ বিক্রি করেছেন একশ’ ১০০০ টাকা দরে। রজনীগন্ধা বিক্রি করছেন একশ’ ৬০০ টাকা ও জারবেরা প্রতি পিচ ১৪ টাকায় বিক্রি করছেন। গাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা হাজার। গাডিওলাস একশ’ ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পটুয়াপাড়া এলাকার ফুল চাষি মো. মনজুর আলম ১০বিঘা জমিতে ফুলচাষ করেছেন, তার মধ্যে শুধু গোলাপেরচাষ করেছেন সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে। তার দাবি, ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে আগামীকাল ১২ও ১৩ ফেব্রুয়ারী গোলাপের দাম ২০-২২টাকা দাম পেতে পারেন। অবশ্য, তিনি গতবছর ২৫-২৭ টাকা পিস গোলাপ বিক্রি করেছেন। শীত কম হওয়ায় গোলাপের আমদানি বাজারে প্রচুর, যার কারণে, দাম একটু কম।
গদখালী পানিসারা গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন ১০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন রকম ফুলের চাষ করেছেন। আজ রজনীগন্ধা ৯০০ পিস এনেছেন, বিক্রি করেছেন ৫ টাকা দরে।
তিনি বলেন, প্রথমদিকে রজনীগন্ধা দাম বেশ কম পচ্ছিলাম। গতকাল থেকে দাম বাড়ছে। ক্ষেতে যে ফুল রয়েছে, তা আগামী দু’দিনে ১০-১২ টাকা দরে বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ শে মার্চ পর্যন্ত, পহেলা ফাগুন ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আর স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে আমাদের যে একশ’ কোটি টাকা ফুল বিক্রির লক্ষ্য, তা পূরণ হবে বলে আশা করছি। ভালোবাসা দিবসে মূলত গোলাপের চাহিদা থাকে বেশি।
গদখালী ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. আবুল খায়ের ও সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, আগামী তিন দিবসকে সামনে রেখে চাষিদের প্রতি বেশ ভালো রয়েছে। মাঝে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গোলাপের দাম একটু কম থাকলেও দিন যতো যাচ্ছে দাম ততো বাড়ছে। প্রতিটি ক্ষেতে পর্যাপ্ত ফুল রয়েছে। আশা করছি, ফুল বিক্রির যে শত কোটি টাকার টার্গেট তা পূরণ হবে।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গদখালী ও পানিসারা এলাকার প্রায় ৬৩০হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ করেন প্রায় চার হাজার চাষি। তাদের নিরাপদ জৈব বালাইনাশক ব্যবহার, শেড তৈরিসহ বিভিন্ন রকমের সাপোর্ট আমরা দিয়ে আসছি। পাশাপাশি ঝিকরগাছা ষ্টেশন থেকে রেলযোগে যাতে দ্রুত সময়ে গদখালীর ফুল রাজধানী শহর ঢাকাতে পৌঁছাতে পারে তার জন্য বেনাপোল-ঢাকা রুপসী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঝিকরগাছায় স্টপেজ জরুরী দরকার হয়ে পড়েছে।