ঢাকা  সোমবার, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeঅপরাধবলাৎকারী মাদ্রাসা শিক্ষককে ধরিয়ে দিতে এলাকাবাসীর সতর্ক বার্তা, মামলা হওয়ার পাঁচ মাসেও...

বলাৎকারী মাদ্রাসা শিক্ষককে ধরিয়ে দিতে এলাকাবাসীর সতর্ক বার্তা, মামলা হওয়ার পাঁচ মাসেও আটক হয়নি আসামি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর লালমাটিয়ায় শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে মামলা হওয়ার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও বাইতুল উলুম তাহফিজুল কুরআন মাদরাসার শিক্ষক মেহেদী হাসান নাহিদ কে এখনো আটক করতে পারেনি মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। এ কারণে অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষককে ধরিয়ে দিতে বিভিন্ন জায়গায় লিফলেট বিতরণ করেছে এলাকাবাসী। 

গত শুক্রবার (০৭ মার্চ) জুম্মার নামাজের পরে লালমাটিয়া এলাকার এই লিফলেট বিতরণ করেন এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মেহেদী হাসান (নাহিদ), পিতা- আব্দুর রাজ্জাক, মাতা- নাসিমা আক্তার, স্থায়ী ঠিকানা- লামচরী, পশ্চিম চরকৃষ্ণপুর, হাইমচর, চাঁদপুর। অভিযোগ রয়েছে, তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার সময় ১১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী আলিফ হাসান রাইয়ানকে যৌন নির্যাতন করেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯(১) ধারায় মামলা (মামলা নং- ৫৪ (১০) ২৪) দায়ের করা হয়।  

ভুক্তভোগী শিশুর পিতা আব্দুল্লাহ জানান, দীর্ঘ এক বছর ধরে তার ছেলের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। প্রথমে বিষয়টি বুঝতে না পারলেও, কিছুদিন ধরে ছেলে মাদ্রাসায় যেতে না চাইলে সন্দেহ হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, শিক্ষক নাহিদ তাকে বড় হুজুরের কক্ষের চাবি আনার কথা বলে নিচতলায় নিয়ে যায় এবং সেখানে জোরপূর্বক বলাৎকার করে।

শিশুটি আরও জানায়, নির্যাতনের সময় তার মুখে কসটেপ পেঁচিয়ে ও কাপড় গুঁজে দেওয়া হতো, যাতে সে চিৎকার করতে না পারে। ভয়ে এতদিন কিছু না বললেও, একপর্যায়ে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তার পায়ু পথ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলে সে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। পরে তার মা একান্তে কথা বলার সময় শিশুটি ধীরে ধীরে সব খুলে বলে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিশুটির পিতা। তিনি জানান, নির্যাতনের পর শিক্ষক নাহিদ প্রাণনাশের হুমকি দিতেন, যাতে বিষয়টি কাউকে না বলে। বিষয়টি জানার পর পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

তিনি আরো বলেন, মামলা দায়েরের আগে ও পরে একাধিকবার অভিযুক্তের পক্ষ থেকে তাকে এক থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষের প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রথমে মামলাটি না করার জন্য, পরে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়।

আব্দুল্লাহ জানান, “এত বড় অপরাধের পরেও অভিযুক্তের পরিবার তাকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিচ্ছে। তারা তার ঠিকানা জানলেও পুলিশকে সহযোগিতা করছে না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ন্যায়বিচারের পথে বড় বাধা। আমি তাদের এই আচরণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছি এবং দ্রুত দোষীকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, “আমরা অভিযুক্তের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করছি, তবে তিনি কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন না, ফলে তার নম্বর ট্র্যাক করাও সম্ভব হচ্ছে না। তার স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানায় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”  

সচেতন অভিভাবক মহল বলছে, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular