সুমন দত্ত: পরিবারতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র উচ্ছেদ করে মহান স্বাধীনতার চেতনায় দেশ গড়ে তুলতে আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহবান জানান পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শাহরিয়ার খান আবির। তিনি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পার্টির চেয়ারম্যানসহ অন্যরা।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ, মহান স্বাধীনতার চেতনায় সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্যে, আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত করতে এবং জনগণের অধিকার অর্জন ও প্রতিষ্ঠা করতে, আমরা সোনার বাংলাদেশ” গড়ার লক্ষ্যে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ‘বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি’ সংক্ষেপে ‘বিসিপি’ নামক একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল গঠন করেছি।
২০১৮ সালের ১ লা ডিসেম্বর সোমবার ঢাকায় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন হল রুমে দলটির জন্ম হয়। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করি।
আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, সুবিবেচনাপ্রসূত সকল মানুষের যৌক্তিক প্রচেষ্টার সাথে দীর্ঘদিনের শোষণ, প্রতারণা, বৈষম্য, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা কুসংস্কার, অজ্ঞতা, সামাজিক অবনতি এবং অন্ধকারের অবসান ঘটিয়ে আমরা অবশ্যই আমাদের জাতির এক অন্ধকার অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারি। দেশের রাজনীতিতে শিক্ষিত এবং প্রতিভাবান নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করুন এবং “বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি (বিসিপি)’ তে যোগ দিন ।
আমরা উদার গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই। আমরা বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করি আমরা বাংলাদেশী এবং আমাদের মানবিক এক দেশ, এক জাতি এবং এখানে সবাই গর্বিত। আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে ভালোবাসি এবং আমরা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ চাই। এখন আমরা আমাদের দেশে একটি কঠিন রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি।
আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন করতে চাই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমরা বর্তমান রাজনৈতিক হতাশা থেকে সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং ঐক্য, সংহতি, সামাজিক ন্যায় বিচার এবং সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনগণকে একত্রিত করে একটি সঠিক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেছি।
যারাই দেশকে ভালবাসেন শিক্ষিত এবং প্রতিভাবান নতুন প্রজন্ম, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী তাদেরকে ‘সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা অঙ্গীকার করছি যে, আমাদের রাজনৈতিক দল সর্বদা সৎকর্ম সম্পাদন করিবে এবং সকল প্রকার অসৎ কর্ম থেকে মানুষকে বিরত রাখিতে সচেষ্ট থাকিবে।
*বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি (বিসিপি)’ এর রাজনৈতিক প্যাটফর্ম হল মধ্য-ডান পন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শ যার চারটি মৌলিক নীতি রয়েছে যেমন: (১) গণতন্ত্র, (২) জাতীয়তাবাদ, (৩) মানবতাবাদ, (৪) ন্যায়পরায়ণতা।
স্লোগান হল: ‘সর্ব ক্ষমতা জনগণের হাতে, গণতন্ত্র আমাদের নীতি, জাতীয়তাবাদ আমাদের বিশ্বাস এবং উদারনীতি আমাদের অর্থনীতি।
সাধারণ স্লোগান : ‘জাগো জনতা-গড়বো বাংলা’, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক’।
আমরা মনে করি বাংলাদেশের সকল জনগণের জন্য আমরা একটি সঠিক রাজনৈতিক দল গঠন করেছি। আমরা সকলেই বাঙালি নই। এই দেশে বসবাসরত অনেক গোষ্ঠীর অনেক লোক রয়েছে। বাংলাদেশ শুধুমাত্র বাঙালির নয় বরং এক জাতি গড়ে তোলার জন্য একাধিক গোষ্ঠী একত্রিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল। আমাদের সমস্ত ধর্মের, লিঙ্গ, এবং সম্প্রদয়ের মধ্যে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসাবে গড়ে উঠতে হবে।
বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি (বিসিপি)’ এর পতাকা সবুজ রঙের এবং বাম দিকে উপরের কোণের চতুর্থাংশ লাল । লাল অংশ একে অপরের থেকে সমদূরবর্তীতে চারটি উজ্জ্বল তারকা। পতাকাটির আকারের অনুপাত ৫:৩।
সবুজ অংশ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জমির উর্বরতা, প্রাচুর্য প্রতিনিধিত্ব করে। লাল অংশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য শহীদের রক্তের নিদর্শন বহন করে। সমদূরবর্তী চারটি উজ্জ্বল তারকা বাংলাদেশ সংবিধানের চার মৌলিক নীতির পাশাপাশি বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি (বিসিপি) এর সংবিধানের চার মৌলিক নীতির প্রতিনিধিত্ব করে।
বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি (বিসিপি)’ লোগো হল একটি সবুজ বৃত্তের মাঝখানে পার্টির পতাকা, যেখানে উপরের দিকে পাশাপাশি বাংলা সিটিজেন পার্টি বাংলা এবং নীচের দিকের ফ্রেমটিতে উভয় পাশে অবস্থিত দুটি তারকা নিয়ে ইংরেজীতে লেখা আছে।
বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি (বিসিপি)’র প্রতীক সাদা শাপলা অথবা পদ্মফুল। ‘বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি (বিসিপি)’ এর অফিসিয়াল রং সবুজ। “বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি (বিসিপি)’ এর সংগীত হল: ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’।
আমাদের এই দেশ কোন দলের নয়, কোন ব্যক্তির নয়, কোন গোষ্ঠীর নয়, কোন সম্প্রদায়ের নয়, কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, এই দেশ আমাদের সকলের। আমরা একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের পরিচয় এবং সার্বভৌমত্বকে একত্রিত করতে চাই।
কিভাবে আমরা সবার জন্য একটি ভাল ভবিষ্যত সুরক্ষা করতে পারি, কিভাবে আমরা একটি ভাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাবো। প্রতিভাধর নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে সকল ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষের একত্রিত করে একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
এখন ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, আধুনিক, সমৃদ্ধ এবং মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য হয়ে উঠেছে।
নব্য স্বাধীন দেশে পরিবারতন্ত্র বিলোপ করতে হবে, যোগ্যতাই যেন হয় সবকিছুর মাপকাঠি। পরিবারতন্ত্র চিরতরে বিলোপ না হলে প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ হবে না।
দেশে বোরকা থাকবে, সিদুর থাকবে, মসজিদ-মন্দির সব থাকবে, থাকবেনা শুধু স্বৈরাচার । এটাই হোক আমাদের অঙ্গিকার। স্বনির্ভর দেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি (বিসিপি)’ তে যোগ দিন । নতুন বাংলাদেশ। সিটিজেন পার্টির জয় হোক।