ঢাকা  বৃহস্পতিবার, ২রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ১৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeআইন ও আদালতবাবা-মায়ের নামে মামলা করলেন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া মেয়ে

বাবা-মায়ের নামে মামলা করলেন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া মেয়ে

নিউজ ডেস্ক : মেহরীন আহমেদ (১৯), তার নিজের বাবা-মা, নাসির আহমেদ ও জান্নাতুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেছেন।

গত ১০ জুলাই মামলার শুনানিতে তিনি বিচারকের সামনে এক আবেগঘন ও বিস্ফোরক বক্তব্য দেন, যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মেহরীন আহমেদ (১৯)।

মেহরীন আদালতে এবং গণমাধ্যমের কাছে তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আনেন:
তিনি তার বাবা-মাকে “ক্রিমিনাল” এবং “চাইল্ড অ্যাবিউজার” (শিশু নির্যাতনকারী) হিসেবে আখ্যা দেন এবং বলেন যে, জন্ম থেকেই তিনি তাদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন।
তিনি অভিযোগ করেন যে, তাকে নিয়মিত গালিগালাজ, অপমান এবং শারীরিক নির্যাতন করা হতো। গত ২৫ মে তাকে তার বাবা-মা মেরে জখম করেন। মেহরীনের সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, তাকে দুই বছর ধরে “ব্রেইন অ্যান্ড মাইন্ড” নামক একটি মানসিক হাসপাতালে আটকে রাখা হয়েছিল, যেখানেও তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে হেনস্তার শিকার হন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়।
তিনি বলেন, “আমি তাদের পাপেট (পুতুল) নই।”
তাকে পরিবারের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহারে বাধা দেওয়া হয় এবং তার বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তিনি পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এর অধীনে নিজের সুরক্ষার জন্য একটি “সুরক্ষা আদেশ” এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের দাবি করেছেন।

শুনানিতে মেহরীনের বাবা-মায়ের পক্ষে তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন বক্তব্য দেন:
আইনজীবী বলেন, মেহরীন তার বাবা-মায়ের “একমাত্র সম্বল এবং আশা-ভরসার স্থল।”
তারা চান যে তাদের মেয়ে সুরক্ষা আদেশ পাক। অর্থাৎ, মেয়ের সুরক্ষার বিষয়ে তাদের আপত্তি নেই।
তারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে রাজি আছেন।

মেহরীন গত ২২ জুন মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এর অধীনে করা হয়েছে।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছেন এবং পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

এই মামলাটি একটি পরিবারের অভ্যন্তরীণ গুরুতর সংঘাত এবং নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে আইনি সুরক্ষা চেয়ে আদালতে গেছেন, যা সমাজে প্রচলিত পারিবারিক ধারণার একটি ভিন্ন দিক উন্মোচন করে।

মেহরীনের মানসিক হাসপাতালে আটকে রাখার অভিযোগ মামলাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অন্যদিকে, বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে মেয়ের সুরক্ষায় সম্মতি দেওয়া এবং বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব পরিস্থিতি সমাধানের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে। আদালত এখন সব দিক বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular