নিউজ ডেস্ক: আধুনিক সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত ময়মনসিংহের ভালুকার ছোট্ট গ্রাম ধামশুর।গ্রামের প্রায় অর্ধেক এলাকা বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায়। তার একটি অংশে গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্বমানের স্কুল।নামে হেইলিবারি ভালুকা স্কুল। এটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত স্কুল হেইলিবারির প্রথম বাংলাদেশ শাখা। যেখানে পড়াশোনা করতে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি ফি ৯ লক্ষ টাকা, টিউশন ফিসহ বছরে গুনতে হচ্ছে ৪০ লাখ টাকারও বেশি। শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীও পড়তে আসছে এ স্কুলে। স্কুলটির খাবার-দাবার এবং আবাসন ব্যবস্থা কোনো পাঁচ তারকা হোটেলের চেয়ে কম নয়।
২০ একর জমিতে নির্মীত স্কুলটিতে ১০০০ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম শতভাগ আবাসিক সুবিধাসম্পন্ন এই স্কুলটি নির্মাণে খরচ হয়েছে আনুমানিক ৭০০ কোটি টাকা।
জানা যায়, হেইলিবেরি যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত একটি স্কুল। ১৬০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ স্কুলগুলোর মধ্যে বর্তমানে পঞ্চম অবস্থানে। বাংলাদেশের চোখধাঁধানো অর্থনৈতিক উন্নয়ন নজর কেড়েছে হেইলিবেরি কর্তৃপক্ষের। এজন্য দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে প্রথম হেইলিবেরি স্কুল তাদের শাখা খুলেছে। হেইলিবেরি স্কুল ফ্র্যাঞ্চাইজি দেশে প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করছে বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। তারাই ঢাকার অদূরে ময়মনসিংহের ভালুকায় গড়ে তুলেছে আন্তর্জাতিক মানের এই ক্যাম্পাস।
২০ একর জমির ওপর আন্তর্জাতিক মানের চারতলা একাডেমিক ভবন ও ছয়তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। একাডেমিক ভবনে রয়েছে তিনটি সায়েন্স ল্যাবরেটরি, একটি কম্পিউটার ল্যাব, সেমিনার রুম, বিশাল অডিটোরিয়াম, মিউজিক রুম, জিমনেসিয়াম এবং পৃথক বেশ কয়েকটি টিচার্স রুম।
একাডেমিক ভবনে মোট ৪৬টি অত্যাধুনিক শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে ২৪ জন ছাত্রকে পাঠদান করানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আবাসিক ভবনে ৩৯৬টি কক্ষ। এগুলোতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতি রুমে চারজন এবং দশম থেকে দ্বাদশের শিক্ষার্থীরা প্রতি রুমে দুজন করে বসবাস করবেন।
খোলামেলা শ্রেণিকক্ষ ও আবাসন ব্যবস্থা ছাড়াও স্কুলটিতে রাখা হয়েছে বিস্তীর্ণ খেলার মাঠ। সেগুলো পরিপাটি করে সাজানোর কাজ চলমান। একাডেমিক ও আবাসিক ভবনের মাঝে বড় খেলার মাঠ। সেখানে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, টেনিস, গলফ, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলার জায়গা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া একাডেমিক ভবনের অন্য পাশেও রয়েছে বিশাল আকারের খোলা মাঠ।
হেইলিবেরি ভালুকায় ভর্তি হতে হলে শিক্ষার্থীকে কগনেটিভ অ্যাপটিটিউট টেস্টে (ক্যাট) অংশ নিতে হবে। এতে উত্তীর্ণ হলেই মিলবে ভর্তির সুযোগ। স্কুলটিতে শুধু মেধা থাকলেই পড়া যাবে, তা নয়। সঙ্গে বিত্তশালী অভিভাবকও প্রয়োজন। কারণ, সম্পূর্ণ আবাসিক এ স্কুলে বছরে শুধু টিউশন ফি ৩৪ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে প্রতি বছর ভর্তি ও সেশন ফি বাবদ আরও ৬-৭ লাখ টাকা গুনতে হবে শিক্ষার্থীকে। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি বার্ষিক খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা।
বছরে বাংলাদেশি মুদ্রায় একজন শিক্ষার্থীর খরচ ৪০ লাখেরও কিছু বেশি হতে পারে। তবে হতাশার কিছু নেই। হেইলিবেরি ১৫ মিলিয়ন ডলারের স্কলারশিপ ফান্ড রেখেছে। কগনেটিভ অ্যাপটিটিউট টেস্টে অংশ নিয়ে ভালো করলে আমরা ভর্তি নেবো। কেউ যদি খুব ভালো করে তবে তাকে শতভাগ স্কলারশিপ সুবিধা দেওয়া হবে
তবে কগনেটিভ অ্যাপটিটিউট টেস্টে কোনো শিক্ষার্থী খুব ভালো ফল করলে মিলবে বিনা খরচে হেইলিবেরিতে পড়ার সুযোগ। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হারে স্কলারশিপ বা বৃত্তি দেবে প্রতিষ্ঠানটি। হেইলিবেরির ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের স্কলারশিপ ফান্ড রয়েছে। মেধাবীদের ক্ষেত্রে তা খরচায় কোনো কৃপণতা করবে না হেইলিবেরি।
তবে হেইলিবেরি ভালুকায় একজন শিক্ষার্থীর বার্ষিক টিউশন ফি ৪০ লাখের বেশি হলেও এ খরচ হেইলিবেরির যে কোনো শাখার চেয়ে অনেক কম বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। স্কুলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, হেইলিবেরি বিশ্বের শীর্ষ স্কুলগুলোর একটি। এখানে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পায়। তাই হেইলিবেরি ভালুকার শিক্ষার্থীরা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে।