ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পারিবারিক বিরোধের জেরে এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীকে গাছের সাথে ৩ ঘন্টারও বেশী সময় বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সোমবার বিকেলে সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। একজন গহবধূকে এমন নির্যাতনে এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী নারী শারমীন আক্তার মঙ্গলবার সদর থানায় মামলা করলে দুই ভাসুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ভূক্তভোগী নারীর মা নূরজাহান বেগম ও স্থানীয় কয়েকজন জানান, সুলতানপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে মন্তাজ মিয়ার ছেলে মোঃ হায়দার আলীর স্ত্রী ভূক্তভোগী শারমিন আক্তার। প্রায় ১৭ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে সাবিনা আক্তার নামে এক মেয়ে এবং জাহিদ হাসান নামে এক ছেলে রয়েছে। তার স্বামী হায়দার দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সৌদি প্রবাসী। তবে গত ৯ মাস আগে হায়দার দেশে এসে ফের সৌদিতে চলে যায়। শারমিন এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে মধ্যপাড়া গ্রামে স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করেন। তবে পারিবারিক কলহসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়ই শশুরবাড়ির লোকজন ও শারমিনের মধ্যে ঝগড়া হতো। পারিবারিক এই বিরোধকে কেন্দ্র করে সোমবার বিকেলে শারমিনের ভাসুরসহ শশুর বাড়ির লোকজন মিলে শারমিনকে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে মারধর করে। এক পর্যায়ে একটি নারিকেল গাছের সাথে বেঁধে শারমিনসহ তার দুই সন্তানকে মারধর করা হয়। এ সময় স্থানীয় এক বাসিন্দা মারধরের সেই ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে নেন। তাতে দেখা যায়, অভিযুক্তরা বাড়ির উঠুনে শারমিনসহ তার সন্তানদের মারধর করছে। পরে ভাসুর মঙ্গল মিয়া উঠুনে থাকা একটি নারিকেল গাছে দড়ি দিয়ে শারমিনকে গাছের সাথে বেঁধে মারধর করে।
শারমীনের মা নূরজাহান বেগম বলেন, একজন নারীকে এভাবে গাছের সাথে বেঁধে পিটানো হবে এটা কোন দেশের আইন। আমি আমার মেয়ের সাথে হওয়া অন্যায়ের দৃষ্টন্তমূলক বিচার চাই।
ভূক্তভোগী নারী শারমিন আক্তার অভিযোগ করে বলেন, শশুরবাড়ির লোকজন আমার স্বামীর কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছিল কিন্তু সেই টাকা তারা ফেরত দেয়নি। আমার স্বামী বারণ করায় আমি তাদের কাছে টাকা চাইনি। কিন্তু শশুর ভাসুরসহ অন্যান্যরা প্রতিনিয়ত ঝগড়া করায় আমি সোমবার বিকেলে অন্যত্র বাসা নিয়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে স্বামীর সাথে কথা বলছিলাম। এ সময় দুই ভাসুর মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীনসহ জা ও ভাতিজারা এসে আমাকে ঘর থেকে ধরে এনে মারধর করে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। গ্রামের মানুষ তাদের নিষেধ করলেও তারা তা শুনেনি। পরে স্থানীয় মেম্বার এসে আমাকে উদ্ধার করে। পরে আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। এ ঘটনায় আমি দুই ভাসুর মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীন, দুই জা মর্জিনা ও ময়না বেগমসহ ভাতিজা জুবায়ের, আকাশ ও সাইফুলকে আসামী করে সোমবার রাতে থানায় অভিযোগ দেই। পরে মঙ্গলবার সকালে মামলা নথিভুক্ত হয়। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত সকলের বিচার চাই।
সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ রিপন মিয়া বলেন, শুনেছি শারমিন তার শশুরকে মারধর করেছে। এরই জের ধরে তারা শারমিনকে গাছের সাথে বেধে নির্যাতন করে। তবে আমি খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে শারমিন কে উদ্ধার করি। তবে যেই ঘটনাটি ঘটেছে তা অত্যন্ত ঘৃন্য।
তবে শারমিনের শশুর মন্তাজ মিয়া ও জা ময়না বেগম দাবী করে বলেন, শারমীন বিভিন্ন সময় ঘরে তালা ঝুলিয়ে বাড়ির বাইরে চলে যায়। তার বেপরোয়া চলাচলে বাঁধা দেয়ায় শারমীন তার শশুর মন্তাজ মিয়ার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে শশুরকে মারধর করে। এরই জের ধরে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে শারমিনের ভাসুররা তাকে গাছের সাথে বেধে রাখে। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ভাসুর মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।