ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeসংগঠন সংবাদভ্যাট ও সম্পুরক শুল্কসহ গ্যাসের অস্বাভাবিক মুল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে প্রতিবাদ

ভ্যাট ও সম্পুরক শুল্কসহ গ্যাসের অস্বাভাবিক মুল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে প্রতিবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিয়ম বহির্ভুতভাবে শতাধিক পন্য ও সেবার উপর ভ্যাট ও সম্পুরক শুল্ক চাপানো সহ গ্যাসের অস্বাভাবিক মুল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদে বৈষম্য বিরোধি সংস্কার পরিষদ (FBCCI) এর আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় আজ ১৪ জানুয়ারী ।

গত সরকারের আর্থিক অনিয়ম, লুটপাট, সীমাহীন দুর্নীতি ও অর্থপাচারের কারনে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছিল।এই অবস্থার উত্তরনের লক্ষ্যে সরকারের যেখানে উদার অর্থনৈতিক কর্মসুচী নেয়ার দরকার ছিল,সেখানে আমরা তার বিপরীত চিত্রটিই দেখতে পাচ্ছি।

দেশের ব্যবসা বানিজ্য স্বাভাবিক আর গতিশীল হলে অর্থনীতি সচল থাকবে। এর মাধ্যমে সাধারন মানুষের মধ্যে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে,মুল্যস্ফিতি কমবে,রপ্তানী আয় বাড়বে।শেয়ারবাজারও তার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাবে।যার মাধ্যমে সামগ্রিক ভাবে দেশের অর্থনীতি প্রান ফিরে পাবে।অথচ সরকার প্রায় সর্বক্ষেত্রে সংকোচনমুলক পদ্ধতি আরোপ করে চলেছে।এর পরিনতিতে আমরা দেখছি,ব্যবসা বানিজ্য আরো স্থবির হয়ে পড়ছে।ঋণের বিদ্যমান সুদহার আর নিয়মিত ডলারের মুল্যবৃদ্ধি আমাদেরকে আশাহত করছে।মুল্যস্ফীতি প্রায় ১৪% এর কাছাকাছি।এই অবস্থা চলতে থাকলে ডলারের দাম আর মুল্যস্ফীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা যেকোন সচেতন মানুষ ধারনা করতে পারে।

এমতাবস্থায় হঠাৎ সরকার শতাধিক পন্য ও সেবার উপর ভ্যাট ও সম্পুরক শুল্ক বাড়িয়ে সাধারন মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।দুই একটা বিদেশী পন্য ছাড়া প্রায় সকল পন্য ও সেবা নিত্যপ্রয়োজনীয়। মোবাইল ফোনের কলচার্জ আর রেস্তোরার খাবারের উপর অস্বাভাবিক হারে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।সাধারন মানুষতো বটেই, উদীয়মান পর্যটন শিল্পের উপর এগুলোর নেতীবাচক প্রভাব পড়বে।শিল্পপন্যের উপর আরোপিত ভ্যাটের প্রভাব সবচেয়ে বেশী পড়বে এসএমই খাতের উপর।

দোকান পর্যায়ে যে ভ্যাট, তা সেলস ট্যাক্স হওয়ায় আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ এই ভ্যাট উঠিয়ে দেবার দাবী জানিয়ে আসছি।১% থেকে শুরু হওয়া এই ট্রেড ভ্যাট বেড়ে সর্বশেষ ৫% করা হয়েছিল।এখন তা বাড়িয়ে সাড়ে সাত পার্সেন্ট করা হয়েছে।

দোকানে বিক্রির সীমা ৫০ লাখ হলেই এই ভ্যাট দিতে হতো।এখন বিক্রি ৩০ লাখ হলেই ভ্যাট গুনতে হবে। পাড়া-মহল্লার ছোটখাট দোকানসহ সুপার মার্কেটগুলোতেও এর আওতায় পড়বে।পরোক্ষ কর হওয়ায় সর্ব স্তরের সাধারন মানুষকেই এই ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। সাপ্লাই চেইনের তিন চারটি স্তরে এই হারে ভ্যাট দিতে হলে পন্যমুল্য কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে,আর মুল্যস্ফীতি কি হবে,তা আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম।

শার্ট-প্যান্ট, সালোয়ার কামিজ সহ ব্যবহার্য পোষাক, এলপিজি গ্যাস আর ইন্টারনেট সেবা এখন কোন অপ্রয়োজনীয় আর বিলাসী পন্য নয়। এগুলির বার্ষিক টার্নওভারের আওতা ছিল ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা।এখন এইটাও সীমিত করে ৩০ লাখ হয়েছে।মোটর গাড়ীর গ্যারেজগুলিতে ব্যাপকভাবে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।রেস্তোরায় খেতে গেলে ১৫% ভ্যাট দিতে হবে।লৌহজাত পন্য এখন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে শিল্প পন্যের রূপ নিয়েছে।শিল্প ব্যবসা বৃদ্ধি আর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এগুলোর অবদান আজকের দিনে অনস্বীকার্য্য।লৌহজাত পন্যে অস্বাভাবিক হারে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।এমনকি জীবনরক্ষাকারী ঔষধেও ভ্যাট বাড়াতে বাকী রাখেনি।

অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ক্ষুদ্র মাঝারী শিল্পগুলোর অবদান ৭৬ শতাংশের উপরে।যা জিডিপির প্রায় ২৬ শতাংশ।এরাই সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে অর্থনীতিকে সচল রেখেছে।এগুলোকে এখন ধংসের দিকে ঠেলে দেয়া হলো।

ভ্যাট আর সম্পুরক শুল্ক হচ্ছে পরোক্ষ কর।হতদরিদ্র মানুষ থেকে শুরু করে সর্বসাধারনকে এই কর পরিশোধ করতে হয়।অথচ অর্থনীতিতে অচলাবস্থার কারনে আর ব্যবসা বানিজ্যে মন্দা ভাব বিরাজ করায় সাধারন শ্রমজীবী- কর্মজীবি মানুষের আয় বাড়ছে না।

সেক্ষেত্রে সরকার অংশীজনদের সাথে কোনরূপ আলাপ আলোচনা না করে ‘অর্থবিল’ ছাড়াই বৎসরের মাঝামাঝি সময়ে অধ্যাদেশ জারীর মাধ্যমে যেভাবে ভ্যাট আর সম্পুরক শুল্ক আরোপ করলো, তা কেবল অনৈতিকই নয়,
বেআইনিও বটে।

এ পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে অনুরোধ আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনে।কারন এটা জুলাই বিপ্লবের চেতনার পরিপন্থি।

সরকার ফ্যাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এই কাজটি করতে পারে।যার মাধ্যমে দ্রব্যমুল্য স্থিতিশীল রাখাসহ মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular