নীলফামারী প্রতিনিধি : গরিব, অসহায় ও দুস্থদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। দিচ্ছেন নিয়মিত ওষুধপত্র। চিকিৎসা ক্যাম্প করে দেওয়া হচ্ছে সব ধরণের রোগীর চিকিৎসা, ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ। এ যেন মানবতার এক ফেরিওয়ালা। নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবস্থিত গরিব চিকিৎসা সেবা এভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গরিবের চিকিৎসা দিতে যে সংগঠনের জন্ম। সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর কাছে এ যেন আশির্বাদ।
বেশ আগের কথা। ২০১৬ সালের প্রথম দিন। একটি দোকানে বসেছিলেন হাফিজুর রহমান নামে এক তরুণ। পেশায় তিনি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আমি অনেকসময় দেখি যে রোগীরা হতদরিদ্র যারা আছে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। প্রেসক্রিপশন নিয়ে দোকানে দোকানে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল, সেসময় আমার মনে হয়েছিল যে তাদের জন্য একটা ব্যবস্থা করা যায় কিনা। সেই থেকে সংগঠনটি কয়েকজন বন্ধু মিলে দাঁড় করাই। সদস্যদের চাঁদা, যাকাত, বিভিন্ন ধরনের অনুদানের ওপর নির্ভর করে চলে সংগঠনের কার্যক্রম।
কারণ সামান্য টাকা দিয়ে তো চিকিৎসা হয়না। ফলে সেদিন রাতে বন্ধু শুভানুধ্যায়ীদের বিষয়টি জানালেন। সকলেই মিলে সৈয়দপুর প্লাজা সুপার মার্কেটের একটি রেস্তোরাঁয় বসে গরিবের সেবায় কী করা যায় এ বিষয়ে মতবিনিময় করলেন। বন্ধুরা সবাই মিলে গঠন করে ফেললেন গরিব চিকিৎসা সেবা একটি একটি সংগঠন। যাত্রা শুরু হলো মানবতার ফেরিওয়ালের। প্রথম দিনে চাঁদা সংগ্রহ হলো ২০ হাজার টাকা।
মাত্র কুড়িজন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে গরিব চিকিৎসা সেবা। সৎগঠনের সদস্যদের উদ্দেশ্য ছিলো গরিব মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। সরকারি হাসপাতালে খুব বেশি সেবা পাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া থাকে ওষুধপত্রের স্বল্পতা। তাই এ ধরণের একটি সংগঠনের গুরুত্ব অনুধাবন করলেন সংগঠনের সদস্যরা। কুড়িজন সদস্যের সকলেই এক হাজার টাকা করে দিয়ে গড়ে তোলেন কুড়ি হাজার তহবিল। বর্তমানে সংগঠনটিতে রয়েছে ৯৫ জন সদস্য। সদস্য ও অনুদানের টাকায় সংগঠনের ভিত এখন অনেক শক্তিশালি। সংগঠনটির রয়েছে ১৩ জনের কার্য নির্বাহী পরিষদ। আর পাঁচ
সদদ্যের শক্তিশালী উপদেষ্টা, যার চারজনেই প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক।
সংগঠনটি গত আট বছর ধরে বছরে কমপক্ষে দুটি করে মেডিকেল ক্যাম্প করে আসছে। মুলত ওই ক্যাম্প থেকে গরিব রোগী বাছাই করা হয়। মাঠ পর্যায়ে কাজ করে রোগী বাছাই করেন সদস্যরা। অবশ্য অনেক রোগী নিজ উদ্যোগে সংহঠনের কার্যালয় খুঁজে নেন। প্রাথমিকভাবে রোগী বাছাই হলে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা মাধ্যমে রোগ নির্ণয় হলে চলে সাময়িক বা দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্পূর্ণ অলাভজনক, স্বাধীন, সামাজিক, অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন সেবামূলক সংগঠন। এ সংগঠনের কোনো অঙ্গসংগঠন থাকবে না বা এই সংগঠন কোনো অঙ্গসংগঠনের হয়ে কাজ করবে না। সংগঠনটির কার্যালয় সৈয়দপুর শহরের এস আর প্লাজার ২য় তলায় স্থাপন করা হয়। কার্যালয়টি ভাড়ায় চালিত এবং সেখান থেকে চলে সকল কার্যক্রম।
সৈয়দপুর পৌরসভা ও উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বিস্তৃত কর্মএলাকা। ভবিষ্যতে দেশব্যাপী কর্মএলাকা সম্প্রসারণের চিন্তাভাবনা রয়েছে। এছাড়াও গরিব চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রটি চিকিৎসা সেবার বাইরে রক্তদান, দুর্যোগে গরিব মানুষকে সহায়তা ও পূণর্বাসন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রশ্রাবের প্রদাহ রোগে চরম কষ্ট পাচ্ছিলেন সীমা (২৫) নামে এক গার্মেন্টস কর্মী। রোগ যন্ত্রনায় ছটফট করছিলেন তিনি। পরে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন সীমা। অভাব-অনটনের সংসারে চিকিৎসাও নিতে পারছিলেন তিনি। খবরটি জানতে পারেন সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা ডা. শেখ নজরুল ইসলাম। ডা. শেখ নজরুলের চিকিৎসায় সেরে উঠেন সীমা। তিনি বলেন, গরিব চিকিৎসা সেবা ফেরেস্তার মতো আমার জীবনে আসে। দীর্ঘ সময় ধরে আমার চিকিৎসা করে তারা। আমি সুস্থ হয়ে উঠে কাজেও যোগ দিয়েছি। সীমার মতো অসংখ্য রোগী চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন গরিব চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রে।
গরিব চিকিৎসা সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা সেবার সুযোগ কম। তাছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সব সময় পাওয়া যায়না। রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরের মুখোমুখি হই। প্রয়োজনে রোগীদের ঢাকাতেও পাঠানো হয়। আমরা প্রসূতি মায়েদেরও সিজারিয়ান অপারেশন করে দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি। রোগীরা যাতে ওষুধ ও পথ্য নিয়ে ভাবনায় পড়ে সেজন্য আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাদা আহমেদ জানান, গত আট বছরে আমরা ৮৬৩ জন অসহায় রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। এসময় রোগীদের যাবতীয় খরচ, বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া সংগঠনের পক্ষ নানা ধরণের সামাজিক কাজ অব্যাহত রেখেছে।
সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দপুরে জনপ্রিয় চিকিৎসক ডা. শেখ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুরু থেকে এই সংগঠনের সাথে আছি। তাদের কাজ অনন্য ও নজিরবিহীন। ভালো কাজের সাথে থাকতে পারাটা সৌভাগ্যের। জীননরে শেষদিন পর্যন্ত মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবো।