ঢাকা  বৃহস্পতিবার, ২রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ১৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeআন্তর্জাতিকমিয়ানমার-ভারত বাণিজ্য করিডর তৈরির প্রস্তাব রাশিয়ার

মিয়ানমার-ভারত বাণিজ্য করিডর তৈরির প্রস্তাব রাশিয়ার

নিউজ ডেস্ক:  রাশিয়ার উৎপাদিত পণ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাজারে প্রবেশ করাতে চায় মস্কো। আর এ লক্ষ্য মিয়ানমার হয়ে ভারতের ভেতর দিয়ে একটি বাণিজ্য করিডর গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবের আলোকে মিয়ানমার ও রাশিয়া ভারতকে এই নতুন প্রকল্পে যুক্ত হতে চাপ দিচ্ছে। একই সঙ্গে, এই করিডরের অন্যতম লক্ষ্য মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বাইপাস করা।

মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং রাশিয়া ভারতের মাধ্যমে এক নতুন বাণিজ্য করিডর প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এটি এক উচ্চাভিলাষী ত্রিপক্ষীয় প্রস্তাব, যা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত এবং অর্থসংকটে থাকা মিয়ানমার সরকারের জন্য একটি সহায়ক ব্যবস্থা হতে পারে।

গত সোমবার নেপিদোতে মিয়ানমারের যোগাযোগ ও পরিবহনমন্ত্রী জেনারেল মিয়া তুন উ এবং রাশিয়ার রসকংগ্রেস ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের পরিচালক আলেকজান্ডার সের্গেইভিচ শাতিরভের নেতৃত্বে রুশ প্রতিনিধিদলের মধ্যে এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। ভারতের মুম্বাই বন্দরের মাধ্যমে রাশিয়াকে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করার এক লজিস্টিক রুট তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।

গত মাসে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত ২৮ তম আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে মিয়া তুন উ ইয়াঙ্গুনকে রাশিয়ার এশিয়া অঞ্চলে রপ্তানির জন্য কৌশলগত ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাশিয়া থেকে পণ্য ইয়াঙ্গুন বন্দরের মাধ্যমে স্থল ও রেলপথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য গন্তব্যে পাঠানো যেতে পারে।

মিয়া তুন উ এবং রাশিয়ান প্রতিনিধিদল রাশিয়া থেকে উচ্চমানের সার আমদানি এবং দ্বিপক্ষীয় ই-কমার্স উদ্যোগ সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে নেপিদোতে রাশিয়া-মিয়ানমার বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক পঞ্চম আন্তঃসরকারি কমিশনের সভায় জান্তা সরকার রাশিয়ান নেতৃত্বাধীন ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নে (ইএইইউ) যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। মিয়ানমার সরকার রাশিয়াকে এশিয়ার বাজারে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি দেশের পরিবহন অবকাঠামোতে রাশিয়ার বিনিয়োগ ও শিল্প সহযোগিতার আমন্ত্রণ জানায়।

এই পরিকল্পিত করিডরটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে উভয় দেশের জন্য বিকল্প বাণিজ্য সহযোগিতা গড়ে তোলার একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টাকেই তুলে ধরে। মিয়ানমারের সামরিক সরকার কূটনৈতিকভাবে রাশিয়া ও অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে।

এর মধ্যে রয়েছে ব্রিকস এবং সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিও—এর পূর্ণ সদস্যপদ লাভের চেষ্টা। এই দুই সংস্থাতেই মিয়ানমার বর্তমানে ডায়ালগ পার্টনার। গত মাসে বেলারুশ সফরে মিন অং হ্লাইং রাশিয়ান নেতৃত্বাধীন ইএইইউ এ পর্যবেক্ষক হিসেবে মিয়ানমারের অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান।

এই প্রস্তাবিত রাশিয়া-ভারত-মিয়ানমার করিডর সম্পর্কে নয়া দিল্লি এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। এটি ভারতের চলমান কলাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের সঙ্গে ওভারল্যাপ বা সংযোগ স্থাপন করতে পারে, যা ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে শুরু হওয়া কলাদান প্রকল্প ভারতের পূর্ব উপকূলকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করতে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক একীকরণের কাজে সহায়তা করছে। এই করিডর কলকাতা বন্দরকে বঙ্গোপসাগর হয়ে রাখাইন রাজ্যের সিতওয়ে বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করে, তারপর কলাদান নদী হয়ে পালেতওয়া এবং সেখান থেকে সড়কপথে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের জোরিনপুঁই পর্যন্ত বিস্তৃত।

এই প্রকল্পের সমুদ্র ও নদী অংশের কাজ শেষ হলেও ১০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক অংশ রাখাইনে চলমান সংঘর্ষ, ঠিকাদারি বিরোধ ও জমি অধিগ্রহণের সমস্যার কারণে বারবার বিলম্বিত হচ্ছে। বাধা সত্ত্বেও, ভারত ২০২৭ সালের মধ্যে এই প্রকল্প শেষ করার অঙ্গীকার করেছে। এই প্রকল্পকে ভারত আঞ্চলিক কৌশল এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের ভারসাম্য হিসেবে দেখছে।

এই ত্রিপক্ষীয় করিডর বাস্তবায়িত হলে এটি রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পথ খুলে দেবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular