ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeসংগঠন সংবাদযশোর হত্যাকাণ্ড: বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির কারণেই আরো বেপরোয়া অপরাধীরা

যশোর হত্যাকাণ্ড: বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির কারণেই আরো বেপরোয়া অপরাধীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর-নেত্রকোনায় উদীচীর উপর হামলা, ছায়ানটের বর্ষবরণ, সিপিবির সমাবেশে হামলাসহ সব বড় ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার অপসংস্কৃতির কারণেই দেশজুড়ে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন উদীচীর নেতৃবৃন্দ। যশোর হত্যাকাণ্ডের ২৬তম বার্ষিকীতে ০৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশে এ অভিযোগ করেন তারা।

উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশের শুরুতে শহীদদের স্মরণে স্থাপিত অস্থায়ী বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃবৃন্দ। এরপর শ্রদ্ধা জানানো হয় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। এছাড়াও, শ্রদ্ধা জানায় উদীচী বাড্ডা, মিরপুর, গেন্ডারিয়া, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, কাফরুল, পল্লবী শাখা সংসদের নেতৃবৃন্দ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে “আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে” এবং “মুক্তির মন্দির সোপানতলে” গান দুটি সমবেতভাবে পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীরা। এরপর শুরু হয় আলোচনা পর্ব। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম-এর সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি শিবানী ভট্টাচার্য, প্রবীর সরদার, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ।

সমাবেশে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, দীর্ঘ ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও যশোরে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের সমাপনী দিনে নৃশংস বোমা হামলার ঘটনার বিচার করতে পারেনি রাষ্ট্র। ওই ঘটনার পর থেকে কয়েকটি সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করলেও সব সরকারই বিচার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলে, সেই বোমা হামলার কুশীলবরা এখনও আগের মতোই ষড়যন্ত্র করে চলেছে। উদীচী বারবার দাবি জানালেও হত্যাকাণ্ডের বিচার পায়নি। রাষ্ট্র এই বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই ১৯৯৯ সালের পর একে একে কমিউনিস্ট পার্টি, ছায়ানট, সারাদেশের সিনেমা হল, আওয়ামী লীগের জনসভাসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে।

সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ. ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বা চব্বিশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানসহ সকল প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রামে সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত, সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছেন সংস্কৃতি কর্মীরা। তাই, তাদের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করতে বারবারই শিল্পীদের উপর হামলা চালানো হয়। ১৯৯৯ সালের সেই ভয়াবহ ঘটনার ২৬ বছর পরও দেশে সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে। শুধু গ্রামে-গঞ্জে নয়, শহরাঞ্চলেও লোকজ সংস্কৃতির চর্চায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। মৌলবাদীদের হুমকির মুখে লালন উৎসব, বসন্ত উৎসবসহ আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী আয়োজন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। যেখানে সেখানে মব তৈরি করে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। বারবার নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারীরা। সার্বিকভাবে জননিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। এ ধারা চলতে থাকলে যে ঘৃণ্য উদ্দেশ্য নিয়ে যশোর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল সেই উদ্দেশ্যে সফল হতে পারে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী গোষ্ঠী। তাই দেশের সাংস্কৃতিক ও মানবিক ঋদ্ধির দিকে সমান মনোযোগ দেয়ার দাবি জানান বক্তারা।

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস ও ভয়াবহ বোমা হামলারগুলোর অন্যতম যশোর বোমা হামলা। ১৯৯৯ সালের ০৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে আয়োজিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে গভীর রাতে যখন হাজারো জনতা ও সংস্কৃতিকর্মী বাংলার আবহমান সংস্কৃতির ধারক বাউল গানের সুর মূর্ছনায় বিমোহিত হয়েছিলেন, ঠিক তখনই বিকট শব্দে দুই দফা বিস্ফোরণ ঘটে মঞ্চের নিচে আগে থেকে রেখে দেয়া বোমার। ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর চালানো ওই হামলায় প্রাণ হারান নূর ইসলাম, সন্ধ্যা রানী, রামকৃষ্ণ, তপন, বাবুল সূত্রধরসহ অন্তত ১০ জন শিল্পী-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। আহত হন দেড় শতাধিক শিল্পী-কর্মী ও সংস্কৃতিমনা সাধারণ মানুষ। মৌলবাদী অপশক্তির ঘৃণ্য হামলার শিকার সেসব সংস্কৃতি কর্মী এখনও পঙ্গুত্বের অভিশাপ বয়ে নিয়ে জীবন যাপন করছেন। এটিই ছিল স্বাধীনতার পরে এদেশের মাটিতে প্রথম প্রকাশ্যে বোমা হামলার ঘটনা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular