ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeখোলা কলামরাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সামনে পরীক্ষা দিতে চায় না

রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সামনে পরীক্ষা দিতে চায় না

সুমন দত্ত

পরীক্ষায় বসতে গেলে ঠিকমত প্রস্তুতি নিতে হয়। পাস নম্বর পেতে হলেও কিছু লেখা পড়া করতে হয়। সারা বছর বই খাতার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থেকে পরীক্ষা দেওয়া যায় না। দিলে ফেল নিশ্চিত। তখন পাস করতে বিকল্প রাস্তা খুঁজেন অনেকে। পরীক্ষায় যে প্রশ্ন আসবে তার তথ্য। উত্তর পত্র তৈরি ইত্যাদি। তারপর পরীক্ষার হলে বসে সেটা ডেলিবার করা। অথবা পরীক্ষার হলে এমন কাউকে ডিউটিতে পাঠানো যিনি নকল করলেও ধরবে না। এসব কথা কেন বলছি?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা হচ্ছে এখন এমন। জনগণ এখানে পরীক্ষা নেবে। অথচ জনগণের সামনে সেই পরীক্ষা দিতে চায় না কেউ। সবাই বিকল্প রাস্তায় পরীক্ষা দিতে চায়। যেমন ড. ইউনুসের দল এনসিপি ও জামায়েত ইসলামি। এরা আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চায়। আর সেই নির্বাচনে তারা অংশ নিয়ে ১০০ থেকে ১৫০ আসন আগেই নিশ্চিত করতে চায়। যেটা এতদিন পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ করেছিল।

জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে তারা পর পর তিনটি পাতানো নির্বাচন করে। যার স্বীকৃতি ভারত ছাড়া আরো কোনো দেশ দেয়নি। ঠিক একইভাবে এখন বিএনপি জামাত ও এনসিপি একটা নির্বাচন করতে চাচ্ছে যেখানে তারা নির্বাচনের আগেই হিসাব নিকাশ ফাইনাল করতে আগ্রহী। কেউ জনগণে সামনে পরীক্ষা দিতে রাজি নয়। জনগণ তাদের চায় কিনা সেটা দেখার আগ্রহ তাদের কম। যে কারণে তারা সবাই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির পিছনে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা দল দুটিকে নিষিদ্ধ করে নির্বাচনে যেতে চাইছে।

জনগণের প্রতি তাদের বিশ্বাসটা কম। যদি তারা জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতো তাহলে তারা অমুক পার্টি বাদ তমুক পার্টি থাকুক এই রাজনীতিতে যেত না। তারা জানে ৫ আগস্টের পর ছাত্র জনতার একটি সফল আন্দোলন কে কীভাবে নষ্ট করে দিয়েছে বিএনপি ও সমন্বয়করা। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বিএনপি নেতারা মামলা বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একটি শ্রেণি প্রশাসনে তদবির বাণিজ্যে জড়িয়েছে।

এদের ইমেজ জনগণের কাছে গত ৭-৮ মাসে শেষ হয়ে গেছে। যে কারণে এদের থেকে দাবি উঠেছে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ করো। আওয়ামী লীগ ভোটে গেলে তাকে পুনর্বাসন করার সামিল এটা তারা বলছে। জনগণের প্রতি তাদের আস্থা ভরসা জিরো লেভেলে।

তারা আওয়ামী লীগের ভুল ও অন্যায় অবিচার নিয়ে জনগণকে কনভিন্স করতে পারতো। সেই পথে তারা না গিয়ে তারা আওয়ামীলীগ কে নিষিদ্ধ করতে চাইছে। এটা তাদের দুর্বলতা।

ড. ইউনুস চাইছে। আগামী নির্বাচনে তার দল এনসিপি ও জামাত থাকবে সরকারে আর বিএনপি থাকবে বিরোধী দলে। এটা জানার পর বিএনপি নেতারা জামাত বিরোধিতায় উঠে পড়ে লেগেছে। এতদিন আওয়ামী লীগ যে ভাষায় জামাতের সমালোচনা করত। এখন বিএনপি সেই ভাষায় জামাতকে আক্রমণ করছে। আগামীতে এই আক্রমণ আরো কঠোরভাবে হবে।

বর্তমান ইউনুস সরকার বিএনপি ও জামাত কে খুশি করে রাজনীতি করছে। যে কারণে প্রতিবেশী দেশ থেকে রব উঠেছে এই সরকার জঙ্গি সরকার। জঙ্গিদের প্রশ্রয় দিয়ে এই সরকার চলছে। দিবেই না বা কেন? ইসকনের চিন্ময় প্রভু কে বিনা বিচারে জেল খাটানো এই ইউনুসের আমলেই হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বহুবার রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান পতন হয়েছে। কোনো বারই হিন্দু সাধুদের এভাবে জেল বন্দি করে রাখা হয় নাই। এটাই ইউনুস সরকারের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা।

জনগণ ভোট দিয়ে যাকে সংসদে পাঠাবে সেই হবে জনগণের সেবক। এই তত্ত্বে বিশ্বাসী হলে কে নির্বাচনে থাকলো কে থাকলো না সেটা মুখ্য বিষয় হতে পারে না। তথাকথিত বিপ্লবীরা বুঝে গেছে জনগণ এখন তাদের দিকে নেই। পতিত স্বৈরাচার ফিরে আসলে তাদেরকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে। এমন হুমকি অবশ্য ফেসবুক থেকে দেওয়া হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ থেকে। আর এটাই হজম করতে পারছে না তরুণ বিপ্লবীরা। ড. ইউনুস তাদের কে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারছে না।

গ্রামে গঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকের মাইক্রো ক্রেডিট যেভাবে বুঝিয়ে তিনি এই ব্যবসা দাড় করিয়েছেন ততটাই ব্যর্থ হচ্ছেন ভোটের রাজনীতিতে জনগণকে তার দিকে টানতে। যার ফলে বাংলাদেশে আগামী দিন একটি অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে যাবে।

আমরা চাই দেশে একটি স্থিলিশীল গণতান্ত্রিক সরকার আসুক। সেটা সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে তৈরি হউক। এটাই জনগণের ইচ্ছা। কে ভালো কে খারাপ সেটা জনগণের হাতে ছেড়ে দিক। জনগণই শাসক ঠিক করুক। সেই পরিবেশ যেন বর্তমান সরকার তৈরি করে দেয়। আর এতেই দেশে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে শান্তি।

লেখক সাংবাদিক, এমএস-সি(প্রাণি) এলএলবি

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular