ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeঅপরাধরিজার্ভ চুরি, তদন্তের গতিপথ বদলে দিয়েছিলেন দুই মন্ত্রী

রিজার্ভ চুরি, তদন্তের গতিপথ বদলে দিয়েছিলেন দুই মন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক: ২০২০ সালের ১ নভেম্বর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছোট সম্মেলন কক্ষে উচ্চ পর্যায়ের একটি সভা আয়োজন করা হয়।

২০২০ সালের ১ নভেম্বর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছোট সম্মেলন কক্ষে উচ্চ পর্যায়ের একটি সভা আয়োজন করা হয়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সে সময়ের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সভার আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ততদিনে ওই ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষ করে এনেছে। কিন্তু ঠিক ওই মুহূর্তে তদন্তের গতিপথ বদলে দেয়ার জন্য তদন্তকারী সংস্থাটির ওপর চাপ প্রয়োগ করেন দুই মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের তৎকালীন দুই সচিব। তদন্ত প্রতিবেদন থেকে দেশী অপরাধীদের নাম বাদ দেয়ার নির্দেশ দেন তারা। যদিও সিআইডির তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, প্রতিবেদন থেকে দেশী অপরাধীদের নাম কোনোভাবেই বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ তাদের অনেকেরই সরাসরি সংশ্লিষ্টতার তথ্যপ্রমাণ ও আলামত এরই মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে চাপ প্রয়োগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়। সিআইডির নেতৃত্বে আনা হয় পরিবর্তন। পাশাপাশি মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত ফরেনসিক প্রতিবেদন ও অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) হাতে তুলে দেয়ার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়। এতে সম্মতি না জানালে তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডির তিন কর্মকর্তাকে পর্যায়ক্রমে বদলি করে দেয়া হয়। আর নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল ইয়াসিনকে।

তার ওপর দেশী অপরাধীদের নাম বাদ দিতে তৎকালীন সিআইডি-প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জোর চাপ প্রয়োগ করা হয়। একই সঙ্গে তদন্তের ফলাফলকে নিয়ন্ত্রণে আনতে গঠন করা হয় তিন সদস্যের কমিটি। ওই কমিটির মাধ্যমে তদন্তের ফরেনসিক ও অন্তর্বর্তী অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে দেয়া হয় বিএফআইইউর কাছে। বহুল আলোচিত রিজার্ভ চুরির তদন্ত ও মামলার কার্যক্রম সেখানেই থমকে যায়। এর পর থেকে এ পর্যন্ত ৭৯ বার সময় নিয়েও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি সিআইডি।

রিজার্ভ চুরির মামলার শুরু থেকে সাত বছর তদন্ত করেছেন রায়হান উদ্দিন খান। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির মামলা তদন্ত শুরুর পর দেশী-বিদেশী অপরাধীদের অপরাধসংশ্লিষ্ট সব তথ্য ধারাবাহিকভাবে সংগ্রহ করা হয়। বিশেষ করে ২০২০ সালেই বিদেশী প্রায় সব তথ্য আমাদের হাতে চলে আসে। সে সময়ই পুলিশ প্রতিবেদন দেয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি শুরু হয়। আমাদের সংগৃহীত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই ফিলিপাইনের আদালতে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোর সাজা হয়েছিল। পাশাপাশি সে সময় রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ১০১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা হয়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular