মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম, কুমিল্লা : কুমিল্লার দক্ষিনাঞ্চলজুড়ে এক সময়ের সোনালী আঁশ খ্যাত পাট চাষাবাদ ও মোড়ক ব্যবহারে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে নানাহ কারনে এখন তেমন কোন আগ্রহ নেই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোও যেননীরব দর্শকের ভূমিকাপালনকরেযাচ্ছে।
এবার সোনালীআঁশখ্যাতপাটশিল্পবিকাশেএবংএখাতেরউন্নয়নেঅবদানরাখায় এ বছর পাটদিবসে ১১ ব্যাক্তি-প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেয়া হয়েছে ও অনেকে পেয়েছেন শুভেচ্ছা স্মারক। বিশেষ করে পাটখাতের উন্নয়নে গবেষনা কার্যক্রম, পাটবীজ আমদানীতে নির্ভরশীলতা হ্রাস, দেশীয় প্রযুক্তিতে পাটবীজ উৎপাদনে স্ব-নির্ভরতা অর্জন, প্রচলিত ও বহুমুখী পাটজাত পন্যের উৎপাদন বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।
স্থানীয় একাধিকসূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন মাধ্যমে কাঁচাপাটের চাহিদা ও উচ্চ মূল্য থাকলেও পাটচাষীরা তানা পেলে চাষাবাদের ক্ষেত্রে আগ্রহ হারাবে এটাই স্বাভাবিক। পাট চাষাবাদে নানাহ ঝুঁকিএবংবিক্রির ক্ষেত্রেনানাহজটিলতা বিদ্যমান। একটা সময়ে পাটচাষ, পাটজাতসামগ্রী তৈরি, পাট ও পাটজাত পন্যাদির ব্যবসা-বানিজ্য বহুকাল ধরে এ অঞ্চলের একটা শ্রেণির মানুষের জীবিকা নির্বাহে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করতো। কিন্তু চলমান প্রযুক্তির যুগে এখন যেনো এ পাট চাষাবাদ অনেকটাই হারিয়ে গেছে। অখচ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পূর্ববর্তী সময় থেকে ১৯৭৭ সালপর্যন্ত এ অঞ্চলে পাট চাষাবাদ এবং কাঁচাপাটের ব্যবসা ছিলো এ অঞ্চলের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের একমাত্র আয়ের মাধ্যম। দেখা যেতো মাঠভরা পাট ক্ষেতআরপাট ক্ষেত।
সূত্রগুলো আরও জানায়, সোনালী আঁশ খাতে পাটের সঙ্গে বাঙ্গালী জাতির গ্রামীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে এবং অর্থনৈতিক মুক্তির হাতিয়ার হিসাবে পাটের ভূমিকা একটি স্বীকৃত ইতিহাস বলে মনে করেন স্থানীয় অর্থনীতিবীদরা। দেশের শিল্পাঞ্চল, কর্মসংস্থান ও রপ্তানীবানিজ্যে পাটখাত অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে।
সরকার ২৫টি জুটমিলে কর্মরত সকল শ্রমিকের গ্যাচ্যুইটি, পিএফ, ছুটি নগদায়নসহ গোল্ডেন হ্যান্ডসেক সুবিধার মাধ্যমে চাকুরী অপসারনমূলক এবং পাটজাত পন্যের উৎপাদন ও মোড়ক ব্যবহার কার্যক্রম বাড়াতে নানামুখী কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে নগন্য হয়ে গেছে সকল ক্ষেত্রে পাটের অবদান। বিশেষ করে দেশের রপ্তানী বানিজ্যে ও পাটের চাহিদা ৯০ থেকে ০৩ ভাগে নেমে এসেছে।
স্থানীয় পরিবেশবিদ ও কৃষকরা জানায়, ধানচাষীদের মতো অধিকাংশ পাটচাষী ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক শ্রেণির। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ধান চাষীরা যেমন এ অঞ্চলে ধার-দেনা পরিশোধ এবং পরিবারের প্রয়োজন মিটাতে আমন ধানকাটা মৌসুমের শুরুতেই চালকল মালিক ও ব্যবসায়ী সেন্ডিকেটের স্বীকার হয়ে স্বল্প মূল্যে তা বিক্রি করতে বাধ্য হন তেমনি পাট চাষীরাও পারিবারিক প্রয়োজন মিটাতে মৌসুমের শুরুতেই পাট বিক্রি করে দেন। এ অঞ্চলের প্রসিদ্ধ বানিজ্যিক নগরী লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারসহ জেলা দক্ষিনাঞ্চলের বড় বড় হাটবাজার জুড়ে পাটের আড়ত কিংবা পাটব্যবসায়ীদের আনাগোনা ছিলো চোখে পড়ার মতো। কিন্তু ওইসব চিত্র এখন আর নেই।
অপরদিকে, সরকার নিষিদ্ধ পলিথিন ও প্লাষ্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ এবং একাধিক পণ্যে পাটের মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করলেও ব্যবসায়ী চক্র তা মানছে না। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ভ্রাম্যমান আদালত যেনো রহস্যজনক কারনে নিরব দর্শক।