ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeসারাদেশকুমিল্লালাকসামে ভাষা সৈনিক পরিবারদের এখন খোঁজ রাখে না কেউ

লাকসামে ভাষা সৈনিক পরিবারদের এখন খোঁজ রাখে না কেউ

লাকসাম প্রতিনিধি, কুমিল্লা : চলমান ভাষার মাসে কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের মাতৃভাষা অন্দোলনের ৭৩ বছর পার হলেও বীর সৈনিক ও স্বজনদের খোঁজ রাখেনি কেউ। সেই ভাষার অস্তিত্ব টিকে রাখতে এ অঞ্চলের কিছু নওজোয়ান সম্মিলিত আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক ত্যাগ ও রক্ত ঝরাতে হয়েছে। সহায় সম্বলহীন ওই পরিবারগুলো কে-কিভাবে বেঁচে আছেন কেহই যেন আজ কিছুই জানে না।

জেলা দক্ষিনাঞ্চলের ভাষা সৈনিক স্বজনদের একাধিক সূত্র জানায়, ভাষা আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগ স্বীকার করা ক্ষনজন্মা বীর ভাষা সৈনিকরা আজ মরেও যেন অমর হয়ে আছেন। মাতৃভাষার সংগ্রামী ইতিহাস উৎপত্তি, বিকাস, রূপান্তর ও সমৃদ্ধির পথে চলমান ডিজিটাল প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা যেন আমাদের অহংকার। ১৯৪৭-১৯৫২ পর্যন্ত দীর্ঘকাল সংগ্রামী আন্দোলন থেকে চলমান সময়ে ডিজিটাল বিভিন্ন উপকরনে সর্বত্র বাংলা ব্যবহার চালু করেছে তথ্য ও প্রযুক্তি। এলাকার অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকলেও প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরের দায় এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। সেই ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদাতো দূরের কথা খবরও নিচ্ছে না স্থানীয় রাজনৈতিক-সামাজিক ব্যাক্তিত্ব এবং সরকারি-বেসরকারী কোন সংস্থার লোকজনও।

সূত্রটি আরও জানায়, বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া এ অঞ্চলের বীর ভাষা সৈনিকদের সবাই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আজকের এই ভাষার মাসে মনে পড়ে তৎকালীন ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির বীর যোদ্ধাদের। তৎকালীন ভারতবর্ষের ত্রিপুরার প্রাচ্যের রাজধানী ছিলো এ কুমিল্লা। কুমিল্লায় ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির তথ্য সূত্রে জানা মতে ভাষা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্যদের মধ্যে ভাষা সৈনিক আবদুল আউয়াল, হায়াতুন্নবী , কমরেড মোঃ জিন্নতের রহমান, আবদুর রাজ্জাক, লাতু মিয়া, কমরেড আবদুছ সামাদ, কমরেড নাসির উদ্দিন, কমরেড হাসনার মা, সোনা মিয়া চৌধুরী, মমতাজ মিয়া, আক্তারুজ্জামান, আবুল কালাম পাটোয়ারী, কবি সুলতান আহমদ, আলী আকবর, মাষ্টার আলী আশ্রাফ, মাষ্টার তোফায়েল আহমদ, হাবিবুর রহমান, আবদুল মজিদ-১, আবদুর রহমান দপ্তরী, মাষ্টার সুলতান আহমদ, কাজী আবদুল মজিদ-২, লেদু মিয়া, মাষ্টার শহিদ উল্লাহ, মাষ্টার আবদুল বারী, মাষ্টার রুহুল আমিন, ছিদ্দিকুর রহমান, মাষ্টার আবদুল গনি, আবদুর রশিদ, মাষ্টার আবুল খায়ের ও আমীর আলী প্রমুখ এবং তারা মুক্তিযুদ্ধেও অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে।

সূত্রটি আরও জানায়, তাদের ওই ত্যাগের কোন সীমানা না থাকলেও প্রতিবছর ভাষার মাস আসলে শুরু করে ভাষা সৈনিকের নামে কতিপয় বর্ণচোরাদের অপতৎপরতা। ফলে প্রকৃত ভাষা সৈনিকদের দেশপ্রেম ও ত্যাগ চলে যায় পর্দার অন্তরালে। অথচ বীর বাঙ্গালী ঐক্যগড় বাংলা ভাষা কায়েম কর

স্লোগানটি আজও জাগ্রত ভাষা সংগ্রাম ইতিহাসে। বর্তমান স্থানীয় প্রশাসন লাকসাম পৌর শহরের খান্দানী মার্কেটস্থ ষ্টেডিয়ামের পাশে অরক্ষিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে আরও নতুন ভাবে নতুন আঙ্গিকে লাকসাম উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ওই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি সরিয়ে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভিতরে কয়েক লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করেছে। বিগত কয়েক বছর যাবত এ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষার মাসে সার্বজনীন লোকজন ভাষা দিবসের নানান কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছে। তবে ওই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তার মর্যাদা রক্ষা নিয়ে উঠেছে নানান বির্তক।

এ ব্যাপারে তৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যের ভাষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক কমিটির অন্যতম সমন্বয়কারী লাকসামের বাসিন্দা কমরেড জিন্নতের বড় ছেলে লাকসাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক মশিউর রহমান সেলিম জানায়, আমার বাবা অত্যান্ত সাধা মনের মানুষ ছিলেন। অন্যায় ও মিথ্যা কথা তিনি বলতেন না। ক্ষুদ্র পুস্তকের ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতি নিয়ে চর্চা করতেন। ভাষা আন্দোলনসহ নানাহ সংগ্রামে তার অপ্রতিরুদ্ধ ভুমিকা ছিলো তার। জীবনদশায় তিনি রাজনৈতিক পরিমন্ডলের কিংবা আন্দোলন সংগ্রামের পুরস্কার হিসাবে কোন কিছুই তৎকালীন সরকারগুলো থেকে গ্রহণ করেনি। বর্তমানে তার পরিবার-পরিজন নানাহ সংকটে পড়ে মানবেতর দিন জীবনযাপন করে যাচ্ছে। গত ২রা ডিসেম্বর ২০১৬ তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এতে আমার বাবার রাজনৈতিক সহকর্মীরা নানান সময় আমাদের পরিবারের ও স্বজনদের খোঁজখবর নিয়েছেন। এই ভাষার মাসে সকলকে ধন্যবাদ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular