নিউজ ডেস্ক : লেখক সালমান রুশদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিয়েছে মার্কিন আদালত। হত্যাচেষ্টার দায়ে ওই ব্যক্তিকে ২৫ বছরের কারাদণ্ডের দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বুকারজয়ী ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক সালমান রুশদির ওপর ছুরি হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত আততায়ী হাদি মাতারের বিচার শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে।
চতাকুয়া কাউন্টির আদালত প্রাঙ্গনে হাদি মাতারকে সোমবার আদালতকক্ষে হাজির করা হয়। বিবিসি সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, আদালতকক্ষে ঢুকেই পাবলিক গ্যালারির উদ্দেশে মাতার বলেন, ‘ফিলিস্তিন মুক্ত হোক’।
মাতারের বিরুদ্ধে মঞ্চে উঠে রুশদিকে ১০ বার ছুরিকাঘাত করার অভিযোগ আছে। এই হামলায় রুশদি এক চোখের দৃষ্টিশক্তি এবং এক হাতের কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। তার লিভারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্কের এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে ২০২২ সালে এই ছুরি হামলার শিকার হন রুশদি।
ওই বছর অগাস্টে শাটাকোয়া ইনস্টিটিউটের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন বুকারজয়ী এই লেখক। যখন তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখনই এক আততায়ী দৌড়ে স্টেজে উঠে ছুরি নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়।
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাসের জন্য তিন দশকের বেশি সময় ধরে হত্যার হুমকি পেয়ে আসছিলেন- লেখক সালমান রুশদি। তার এই উপন্যাস বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল এবং বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল।
রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত হাদি মাতার মার্কিন নাগরিক। তবে রুশদিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের অধিবাসী ওই ব্যক্তির নাম হাদি মাতার। তার বর্তমান বয়স ২৭ বছর। ২০২২ সালে নিউ ইয়র্কে মঞ্চে উঠে সালমান রুশদির ওপর প্রাণঘাতি হামলা চালায় ওই ব্যক্তি।
ঘটনার সময় ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে রুশদিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দর্শকদের সামনে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। হঠাৎ মঞ্চে উঠে এসে তার ওপর ছুরি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাতার।
আদালতের শুনানিতে ভিডিওটির কিছু অংশ প্রদর্শন করা হয়।
ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জেসন স্মিট বলেছেন, ওই ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন রুশদি। এখনও তিনি মাঝেমধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখেন। হত্যার ফতোয়া মাথায় নিয়ে ঘোরা একটা মানুষ সমাজে সাধারণ জীবনযাপন করতে এসে এমন একটা ঘটনার শিকার হলো। স্বাভাবিকভাবেই এটা তার জন্য বিশাল এক ধাক্কা।
৭৭ বছর বয়সী ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক সালমান রুশদির সবচেয়ে আলোচিত গ্রন্থ দ্য স্যাটানিক ভার্সেস, যা ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয়। ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহোল্লাহ খোমেনি বইটিকে ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে রুশদির মাথার ওপর ফতোয়া জারি করেন।
হামলার দিন লেখক সালমান রুশদির সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন সিটি অফ অ্যাসাইলাম সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হেনরি রিস, যিনি বিতাড়িত লেখকদের সহায়তা করে থাকেন। হামলায় তিনিও আহত হন।-
আদালতের রায়ে জানা গেছে, রুশদিকে হত্যাচেষ্টার দায়ে ২৫ বছর এবং রিসকে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগে ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে হামলাকারী ব্যক্তির। উভয় দণ্ড একসঙ্গে কার্যকর হবে।