ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeসারাদেশশারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও আত্মনির্ভরশীল আছমত আলী

শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও আত্মনির্ভরশীল আছমত আলী

মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: শারীরিক প্রতিবন্ধী আছমত আলী; নিজ পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ানোর শক্তি ও সামর্থ্য নেই, হাতের উপর ভর করে চলাফেরা করেন তবুও জীবন যুদ্ধে থেমে নেই তিনি। জীবন যুদ্ধের লড়াইয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে সকল বাধা-বিপত্তিকে পেছনে ফেলে বেছে নিয়েছেন কর্মজীবন। নিজ চেষ্টায় তৈরি করেছে ফুটপাতে ছোট্ট একটা ওয়ার্কশপ। যার নাম দিয়েছেন প্রতিবন্ধী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ।

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব গ্ৰামের যুগিরকান্দা গ্ৰামের প্রবীণ মুরুব্বী মোঃ তাহের আলী’র দ্বিতীয় সন্তান ৩৬ বছর বয়সী আছমত আলী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হতে পারেনি তাঁর কর্মজীবনে। মাত্র চার বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুটি পা অচল হয়ে যায় দরিদ্র পরিবারের সন্তান আছমত আলীর, বন্ধ হয়ে যায় স্বভাবিক চলাফেরা। পরিবারের সহায়তায় নিজেদের সাইকেল-মেশিন মেরামতের মাধ্যমে হয় কাজের সূচনা। ইটনা বড় বাজারে আছমত আলীর প্রতিবন্ধী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপে দরজা, জানালা, গ্ৰিল, কেচি গেইট, নৌকা রিফারিং এবং বিভিন্ন গাড়ির চাকা মেরামত করা হয়। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও পেটের দায়ে ওয়ার্কশপ এ কাজ করে সংসার চালান এই অদম্য যুদ্ধা।

বিগত ২৩-২৪ বছর ধরে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী আছমত আলী’র উপার্জনেই চলছে তার পরিবার। তাঁর পরিবারের বাবা-মা, ভাই বোন, বউ-সন্তান সহ সদস্য সংখ্যা ৮ জন। এই কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়েই কোনোমতে তাদের পরিবার চলে তারপরও তিনি গর্ববোধ করেন, কারন কারো কাছে হাত পাততে হয় না। আছমত আলীর কাছে আসা লোকজন জানান, আছমত শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, দুটি পা অচল তারপর কাজের প্রতি মনোযোগী। আছমত এর কাছে কাজ করিয়ে খুশি এলাকাবাসী।

কাজের বিনিময়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে না আত্মনির্ভরশীল মানুষটি। প্রতিবন্ধী ভাতা এবং কাজের আয়ের টাকায় খুবই কষ্টে চলে আছমত আলীর সংসার। রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে কাজ করেন তিনি। নিজস্ব একটা দোকান থাকবে এমন ইচ্ছে ছিলো দীর্ঘদিনের কিন্তু সাধ্য থাকলেও সামর্থ্য নেই বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন পরিশ্রমী এই মানুষটি। শারীরিক প্রতিবন্ধী আছমত আলী কে নিয়ে গর্ববোধ করেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম।

তিনি জানান, প্রতিবন্ধীরা সমাজের চোখে অবহেলিত হিসেবে বিবেচিত। আছমত আলী সমাজের চোখে বোঝা হয়ে বাঁচতে চাইনি তাই নিজের কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হয়ে উঠেছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী আছমত আলী কে প্রতিবন্ধী ভাতার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং বরাদ্দ প্রাপ্তির প্রেক্ষিতে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতেছি। এলাকার বিত্তবান কিংবা সরকারি কোনো সহায়তা পেলে ব্যবসা বড় করার ইচ্ছা রয়েছে আছমত আলীর। নিজের সদিচ্ছা থাকলে মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে তার দৃষ্টান্ত দুটি পা অচল প্রতিবন্ধী মোঃ আছমত আলী।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular