ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeসারাদেশসরিষাবাড়ীর সাবেক এমপি আবদুর রশীদের হঠাৎ দেখা মিললো

সরিষাবাড়ীর সাবেক এমপি আবদুর রশীদের হঠাৎ দেখা মিললো

নিজস্ব প্রতিবেদক : জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের সদ্য সাবেক এমপি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিশ্বস্ত ও এলাকায় ‘সেকেন্ড হোম মিনিস্টার’ হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ আবদুর রশীদকে দুইমাস পর হঠাৎ দেখা গেলো।

হাসিনা সরকারের পতনের পর আবদুর রশীদ আত্মগোপনে চলে গেলেও গতকাল হঠাৎ তার ছোটভাইয়ের ফেসবুকের মাধ্যমে তাকে প্রাইভেটকারে ঘুরতে দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ছবিটি দেশেই নাকি বিদেশের তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও এটি ঢাকাতেই বলে দাবি করেছেন তার ছোটভাই।

জানা যায়, পালাতক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের নানা অপকর্মের রাজসাক্ষী আবদুর রশীদ। তিনি রাজধানীর তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং একইসাথে ছিলেন সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমানে সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ওই কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি ছিলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। আবদুর রশীদ কলেজ থেকে অবসর গ্রহণের সময় ছোটভাই হারুন উর রশিদকে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসান। তিনি ও তার দুই ছোটভাইয়ের এলাকাসহ রাজধানী ও দেশের বিভিন্নস্থানে রয়েছে অঢেল সম্পদ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় তিনি বাম রাজনীতি বাসদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। মূলত এরপরই তার ভাগ্য খুলে যায়। ২০১৪ সালের পূর্বপর্যন্ত অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ ও তার ভাইদের তেমন রাজনৈতিক পরিচিতি ছিল না। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনটি আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেয়। আর এইসুযোগেই এলাকায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে ‘ভাই ভাই সিন্ডিকেট’। তিনভাই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর দায়িত্বসহ পছন্দনীয় লোকদের দিয়ে দলের উপজেলা কমিটি এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন, পৌরসভা, ওয়ার্ড কমিটিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো পকেটস্থ ও নিজেদের লোকজন ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যান-মেম্বার ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিলেন। আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রভাবে প্রশাসনিকভাবেও সক্রিয় হয়ে উঠেছিল এই সিন্ডিকেট। ১০ বছরের মাথায় বিগত সংসদ নির্বাচনে ফসল ঘরে পায় তারা।

সিন্ডিকেটের একভাই অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম এলাকার ‘ছায়া এমপি’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং আরেক ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হারুন উর রশিদ। আবদুর রশীদের হয়ে এই দুইভাই নিয়ন্ত্রণ করতেন এলাকার রাজনীতি, টেন্ডার, যমুনা সার কারখানা ও নিয়োগসহ সবকিছু।

এলাকায় কথিত আছে, অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রভাবেই। নির্বাচনে জয়লাভের পরপরই প্রতিপক্ষদের মারধর, বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটতরাজের অভিযোগ উঠে। পাশাপাশি এলাকায় যেকোনো কাজে ব্যবহার করা হতো সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম।

অভিযোগ রয়েছে, সরকার পতনের আগে সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা-নির্যাতন, হত্যা ও লাশ গুমের মতো অপরাধের অন্যতম হোতা সেসময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বর্তমানে তিনি পলাতক থাকলেও বিশ্বস্ত হওয়ার সুবাদে তার অনেক কর্মকাণ্ড ও অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেন আবদুর রশীদ।

জানা গেছে, রয়েল ইউনিভার্সিটিতে যুক্ত থাকার সময় জাল সার্টিফিকেট বিক্রি ও তহবিল আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৯ সালের ১২ এপ্রিল যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন আবদুর রশীদ। তিনিসহ তার দুইভাই এলাকা, রাজধানী ও দেশের বিভিন্নস্থানে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পরপরই তারা আত্মগোপনে চলে যান। তবে মাঝেমধ্যে মেঝোভাই অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলামকে ফেসবুকে সক্রিয় দেখা গেলেও সাবেক এমপি আবদুর রশীদ ও ছোটভাই হারুন উর রশিদের অবস্থান সম্পর্কে জানে না কেউ। ছাত্রদের রোষানলের ভয়ে হারুন উর রশিদ তেজগাঁও কলেজ ছেড়ে যাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিযুক্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।

এরমধ্যে গত বুধবার আবদুর রশীদের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন অ্যাডভোকেট শহিদ। যেখানে দেখা যায়, তিনি প্রাইভেটকারে বসে মুঠোফোনে কথা বলা অবস্থায় কোথাও যাচ্ছেন। তবে ছবিতে তাকে মলিন চেহারায় দেখা যায়। ছবিটির নীচের দিকে ৮ অক্টোবর ২০২৪ ও সময় ৪ টা ৩১ মিনিট উল্লেখ রয়েছে। ছবিটি তোলা হয়েছে রেডমি নোট ১২ মোবাইল দিয়ে। তবে এটি দেশে নাকি বিদেশে কোথায় তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

এব্যাপারে অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, তারা তিনভাই ঢাকাতেই আছেন। তিনি ও তার ভাই আবদুর রশীদ হঠাৎ ঘুরতে বেড়িয়েছিলেন, তখন ছবিটি তোলা হয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকলেও দীর্ঘদিন তিনি কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি ও একই এলাকায় বাসা হওয়ার সুবাদে আবদুর রশীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ও ভালো সম্পর্ক বলে তিনি জানান।

জামালপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম (পিপিএম-সেবা) মুঠোফোনে বলেন, আমি এ জেলায় নতুন যোগদান করেছি। সাবেক এমপি সম্পর্কে খোঁজখবর নেবো। তবে সংক্ষুব্ধ কেউ কোনো অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular