সাদ্দাম উদ্দিন আহমদ
সুউচ্চ পাহাড়, সবুজ বনানী, ঘন মেঘ-মল্লার দল, বাহারি রংয়ের আকাশ, সাঙ্গুর বহতা স্রোত, দুর্গম অরণ্য ঘেরা হাজারো ঝরনা ধারায় বেঁচে থাকা পাহাড়- সব মিলিয়ে প্রকৃতির লীলাভূমি বান্দরবান। পাহাড়ে ঘেরা মনোমুগ্ধকর নানা দৃশ্যপটে ভ্রমণকারীর দু`চোখ ক্ষণে ক্ষণেই আটকে যাবে। হৃদয় দোলানো রূপের মাদকতায় বান্দরবানকে অনেকেই রূপের রাণী বলে, আবার কেউ কেউ একে পাহাড়ী কন্যাও বলে থাকে।
বান্দরবানের আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি, বগা লেক, নীলাচল, শৈল প্রপাত, জীবন নগর পাহাড়, মিরিঞ্চা, আলী সুড়ঙ্গ, তাজিংডং বিজয়, কেওক্রাডং, ক্যামলং জলাশয়, উপবন লেক, কানাপাড়া পাহাড়, স্বর্ণ মন্দির, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, প্রান্তিক লেক, শ্রভ্র নীল প্রভৃতি।
বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলোতে সব সময় পর্যটকদের উপচে-পড়া ভিড় থাকে। যে কোনো মৌসুমের শুরুতেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমান। শহরের হোটেল-মোটেল, রেস্ট হাউসগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। শীতের শুরুতে পর্যটন শহর বান্দরবান মানুষের মিলন মেলা, হাজারো মানুষের সরবে মুখরিত হয়ে উঠে।
চিম্বুক পাহাড়
বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান চিম্বুক পাহাড়। পাহাড় থেকে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য চিম্বুক পাহাড়ে গেলে দেখা যাবে। চিম্বুককে বাংলার দার্জিলিং হিসেবেও ডাকা হয়। চিম্বুকের চমৎকার দৃশ্য মুগ্ধ করে মন। যাত্রাপথের আঁকা-বাঁকা রাস্তা রোমাঞ্চিত করে হৃদয়। পাহাড়ের নিচ দিকে তাকালে মনে হবে সাদা মেঘ।
বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় দেখতে ঢাকা থেকে বাসে যাওয়া যায়। ঢাকার আরামবাগ, গাবতলীসহ বিভিন্ন জায়াগা থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে এসি/নন এসি বাসে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। বান্দরবান যাওয়ার পর আপনি চাঁন্দের গাড়ি/জিপ/মাইক্রোবাস/পাবলিক বাস যোগে বিভিন্ন জায়াগায় যাতায়াত করতে পারেন।
কেওক্রাডং
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছোটবড় পাহাড়, ঘন জঙ্গল আর বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখিতে ভরপুর দুর্গম এলাকাটিতে আরও রয়েছে ঝর্ণাধারা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ এবং আকাশে মেঘের লুকোচুরি। শীতের মৌসুমে রোমাঞ্চপ্রিয় সৌন্দর্য দেখতে পর্যটকরা ছুটে যায় কেওক্রাডং।
ঢাকা থেকে বান্দরবান, বান্দরবান থেকে চান্দের গাড়িতে রুমা উপজেলা, রুমা বাজার থেকে চান্দের গাড়িতে করে বগা লেক পর্যন্ত যাবেন। বগা লেক থেকে জদিপাই ঝর্ণায় পৌঁছানোর জন্য একজন গাইড নিতে হবে। রাত বগালেকে কাটিয়ে পরদিন ভোরে যাত্রা শুরু করতে হবে দার্জি পাড়ার উদ্দেশ্যে, সেখানে গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে রওনা দিতে হবে কেওক্রাডংয়ের উদ্দেশ্যে। কেওক্রাডং দেখে জাদিপাই ঝর্ণার উদ্দেশ্যে যাওয়া যায়।
মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স
বান্দরবানের বিশেষ আকর্ষণ মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। সেখানে রয়েছে কৃত্রিম হ্রদ, শিশুদের জন্য পার্ক, সাফারী পার্ক, কিছুক্ষণ জলে ভাসার জন্য রয়েছে পেডেল বোট, ঝুলন্ত ব্রিজ, চিড়িয়াখান এবং পিকনিক করার জন্য পিকানিক স্পটও। মেঘলায় চিত্ত বিনোদন মুগ্ধ করবে পর্যটকদের।
বগা লেক
বগালেক প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হওয়া পাহাড়ের উপরে একটি লেক। যার পানি স্তর সারা বছরই প্রায় একই অবস্থানে থাকে। এখানে যেতে হলে ঢাকা থেকে বাসে যেতে পারেন বান্দরবান।
আলী সুড়ঙ্গ
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার গহীন অরণ্যেও অবস্থিত এক রহস্যময় গুহা আলু সুড়ঙ্গ। হাতে টর্চ জ্বালিয়ে সিড়ি বেয়ে সুড়ঙ্গের ভিতরে নামার সময় অনুভব করা যায় এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। শত পথ পাড়ি দিয়ে পর্যটক প্রতিনিয়ত ছুটে আসে সুড়ঙ্গ দেখতে।
উপবন লেক
উপবন লেক একটি কৃত্রিম হ্রদ। মাছ ধরার শখ অথবা নেশা থাকলে কিংবা বান্দরবনে গিয়ে নৌকা ভ্রমণ করতে চাইলে উপবন লেকে যেতে হবে। লেকটি ইকোট্যুর এবং পিকনিক স্পট হিসেবে সমাধিক পরিচিত।
তাজিংডং পাহাড়
স্থানীয়দের ভাষায় তাজিং অর্থ বিশাল আর ডং অর্থ পাহাড় অর্থাৎ তাজিংডং মানে বিশাল পাহাড়। বালাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড় তাজিংডং পাহাড়। সেখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি আর শোনা যায় প্রাকৃতিক পরিবেশে তাদের টিকে থাকার গল্প। পাহাড়ের দিকে তাকালেই মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। সৌন্দর্য ভালভাবে দেখতে হলে যেতে হবে শীতকালে। তাজিংডং-এ পৌঁছানোর হাঁটার রাস্তার স্মৃতিও অম্লান হয়ে থাকবে পর্যটক হৃদয়ে। বান্দরবান যাওয়ার পর চাঁন্দের গাড়ি/জিপ/মাইক্রোবাস/পাবলিক বাস যোগে বিভিন্ন জায়াগায় যাতায়াত করা যায়। চান্দের গাড়িতে করে তাজিংডং-এর কাছাকাছি যাওয়া যায়। এরপর পায়ে হেঁটে যেতে হবে। বান্দরবান থেকে রুমা ব্রিজঘাট, সেখান থেকে নৌপথে রুমায়, রুমা থকে বগা লেক বগা লেক থেকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে তাজিংডং।
নীলাচল
বান্দরবান শহরের নীলাচলকে অনেকেই স্বর্গভূমি হিসেবেই আখ্যা দিয়ে থাকেন। নীলাচলের নির্মল বাতাসে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য এক স্বর্গীয় অুভূতি এনে দেয়।
পর্যটকদের থাকার জন্য নীলাচলে কটেজ রয়েছে। এছাড়াও বান্দরবানে ফেরত এসে হোটেলে থাকা যায়। বান্দরবান সদর এবং চিম্বুক এলাকায় থাকার জন্য বিভিন্ন হোটেল এবং গেস্টহাউজ রয়েছে।
নীলগিরি
নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দেয় পর্যটকদের। এখানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় শীতকালের মিষ্টি রোদ, বর্ষাকালে আকাশের গর্জন, রংধনুর আলোক রশ্মি, বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক পরিবর্তন, যা সারা বছরই নীলগিরি যাওয়ার জন্য আকর্ষণ করবে। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, সাগর ও জাহাজের দৃশ্য। পাহাড়ের কোল ঘেষে বয়ে চলা নদীর দৃশ্য। অনেকের কাছে নীলগিরি বাংলার দার্জিলিং নামেও পরিচিত। এখানে থাকার জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মেঘদূত, আকাশনীলা, নীলাঙ্গনা, মারমা হাউজসহ নানা নামের আকর্ষণীয় কটেজ রয়েছে। আছে একটি ক্যাফেটেরিয়াও।
স্বর্ণ মন্দির
সোনালী রংয়ের মন্দিরটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে জায়গাটি তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। মন্দিরটির নির্মাণ শৈলী ও আধুনিক স্থাপত্য নকশার নিদর্শনের জন্য পর্যটকদেরকে আকর্ষণ করে। এখান থেকে সাঙ্গু নদী এবং তার পারিপার্শ্বিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।