নীলফামারী প্রতিনিধি : ধনী-গরিবসহ সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সারাদিনের রোজা শেষে ইফতারে খেজুর ও শরবত দিয়ে রোজা খোলার পাশাপাশি থাকে নানা পদের রকমারি সুস্বাদু খাবারের আয়োজন। বাড়িতে যতই আয়োজন হোক বাজার থেকে মুখরোচক ইফতার সামগ্রী না কিনলে যেন আয়োজনে অপূর্ণতা থেকেই যায়। এর ব্যতিক্রম হয়না নীলফামারীর সৈয়দপুরেও।
ইফতার বাজারের দিক দিয়ে ভিন্নতা আছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। এখানকার ঐতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রী হচ্ছে শেও, বুন্দিয়া ও নিমকপারা। দামে কম হওয়ায় শেও, বুন্দিয়া ও নিমকপাড়া ছোট বড় সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। মাত্র ৩টি উপাদান বেসন, সামান্য ময়দা ও চিনির সিরকা দিয়ে এ মুখরোচক ইফতার খাবারটি তৈরি করা হয়। এখানে কেবলমাত্র রমজান মাসে এই শেও, বুন্দিয়া ও নিমকপাড়া তৈরি হয়। যত দামি ইফতার সামগ্রীর আয়োজনই থাক না কেন শেও, বুন্দিয়া ও নিমকপাড়া না থাকলে ইফতারের পূর্ণতা আসে না।
প্রতিদিন এখানে ৩ থেকে ৫ মণ মুখরোচক এই খাদ্যদ্রব্য বিক্রি হয়। ক্রেতারা বলছেন, শেও, বুন্দিয়া ও নিমকপারা সৈয়দপুরের ঐতিহ্য। এই তিনটি পণ্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। এই মুখরোচক খাবারগুলো গড়ে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে অবস্থিত দিলকুশা মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক কাওসার আহমেদ বলেন, ‘আমি প্রায় ৪০ বছর ধরে শুধুমাত্র রমজানের সময় এই তিন পদ ইফতারের জন্য বিশেষ খাবার হিসেবে তৈরি করে থাকি। শুধু আমি না, শহরের সব মিষ্টির দোকানদার ও মৌসুমী ইফতার ব্যবসায়ীরাও এ মাসে এসব খাবার তৈরি করে থাকে। ক্রেতারা ইফতারিতে যাই কিনুক না কেন নিমকপারা, বুন্দিয়া ও শেও বাজারের তালিকায় থাকবেই।
ইফতার কিনতে আসা কয়েকজন রোজাদার জানান, নিমকপারা, বুন্দিয়া, শেও ছোলার সঙ্গে মাখালে এসবের স্বাদ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ইফতারে এসব না থাকলে মনে হয়, কি যেন একটা কম হয়ে গেছে। মুখরোচক এসব খাবারের দামও অনেক কম। সকলের ক্রয় মতার মধ্যে।
প্রাচীন গল্প থেকে জানা যায়, নীলফামারী ছিল কৃষি নির্ভর শ্রমজীবী গরিব মানুষের এলাকা। বিশেষ করে সৈয়দপুর, কারণ তদানীন্তন ব্রিটিশ আমল থেকে এই শহরটি গড়ে উঠে রেলওয়ে কারখানাকে ভিত্তি করে। ফলে কৃষি শ্রমিকের পাশাপাশি কারখানা শ”মিকে ঠাসা ছিল শহরটি। নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যাধিক্য বেশি থাকায় যে কোন সুস্বাদু খাবার এখানে স্বল্প ব্যয়ে তৈরি করে কম দামে বিক্রি করতে হতো। সে থেকে কম খরচে মুখরোচক খাবার শেও, বুন্দিয়া ও নিমকপারা তৈরি শুরু হয়। অল্প দামে মুখরোচক হওয়ায় তখন থেকেই এগুলো এখানে প্রসিদ্ধ হতে থাকে। বলা যায় সে সময়ের গরীব মানুষের খাবারই আজ সকলের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।