মো. জাহিদুল হক মনির, শেরপুর প্রতিনিধি: নানা দূর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গিলাগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আফরোজা সুলতানা বিনা। তার দূর্নীতির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগের ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয় ও অভিভাবকরা।
সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষিকা বিনা সম্প্রতি কোন রেজুলেশন ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে বিদ্যালয়ের সোলার ও আসবাবপত্র বিক্রি করে দেন। এছাড়া গরীব শিক্ষার্থীদের স্কুলে ভর্তি না করানোর অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসব বিষয় নিয়ে অভিযোগ তোলা হলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে বাধা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেন।
স্থানীয় ও অভিভাবকরা জানান, এ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৯৩৮ সালে গিলাগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিতের পর থেকে সুনাম থাকলেও এখন আর নেই। এই বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা আফরোজা সুলতানা বিনার বিরুদ্ধে অফিস পিয়ন দিয়ে পাঠদান, উপবৃত্তি নিয়ে অনিয়ম, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারসহ ইচ্ছে হলেই বছরের মাঝামাঝি সময়ে শিক্ষার্থী বের করে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, আমার ছেলেকে আমি স্কুলে ভর্তি করানোর পর হেড ম্যাডাম আমার ছেলেকে স্কুল থেকে বের করে দিছে। স্কুলের হেড ম্যাডাম অনেক ছাত্রদের সঙ্গে এরকম করেছে। কিছুদিন আগে চুরি করে স্কুলের মালামাল বিক্রি করছে এতে করে আমাদেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।
অভিভাবক সুমন বলেন, আমার মেয়ের উপবৃত্তির বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা বিনা ম্যাডামের কাছে যাওয়া পর সে উপবৃত্তি তো দেইনি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যাবহার করেছেন। স্কুলে পড়াশোনার মান আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।
গিলাগাছা এলাকায় বাসিন্দা জাহিদুর ইসলাম বলেন, আগে আমাদের বিদ্যালয়ের সামনে গেলে অনেক ছাত্র-ছাত্রী দেখাতাম। এই ম্যাডাম আসার পর থেকে সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঠিক মত ছাত্রী ভর্তি করান না সে, উল্টো তার মতের অমিল হলে ভর্তিকৃতদের বের করে দেন। আগের স্কুলের যে মালামাল ছিল ওইগুলোও কোনো রেজুলেশন ছাড়া একক সিদ্ধান্তে বিক্রি করেছেন।
গিলাগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মোমিনুর নাহার বলেন, আমি দুই বছর সভাপতি ছিলাম। অনেক সময় আমাকে জানিয়ে কাজ করেছেন আবার অনেক সময় কিছু জানায়নি। স্কুলের আসবাবপত্র বিক্রির বিষয়ে আমি কিছু জানতাম না, কোনো ধরনের রেজুলেশন বা মিটিং ছাড়া সব কিছু বিক্রি করছেন। এই ঘটনাটা আমি অনেক পরে জেনেছি।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা আফরোজা সুলতানা বিনা সব কিছু অস্বীকার করে বলেন, আমার বিষয়ে যে অভিযোগগুলো করা হচ্ছে এটা সঠিক নয়। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
শেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইবরাহীম খলিল বলেন, স্কুলে পুরান মালামাল এভাবে বিক্রি করা যায় না। বিক্রির জন্য অবশ্যই ম্যানেজিং কমিটি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে একটা রেজুলেশন করে তারপর বিক্রি করতে হয়। উনি যে কাজটি করেছেন সেটা সত্যি নিন্দনীয় বিষয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।