ঢাকা  সোমবার, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeআন্তর্জাতিকস্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কেন নিষেধাজ্ঞা দিলো ভারত

স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কেন নিষেধাজ্ঞা দিলো ভারত

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। দেশটি গতকাল শনিবার (১৭ মে) জানায়, তাদের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আমদানি করা যাবে না। বিশেষ করে ভারতীয় আমদানিকারকরা বাংলাদেশি পোশাক কিনতে চাইলে কলকাতা এবং মহারাষ্ট্রের নাভা শেভা সমুদ্র বন্দর দিয়ে আনতে হবে।

বাণিজ্য বিষয়ক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) জানিয়েছে, ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের ওপর প্রভাব পড়বে। যা দুই দেশের মোট বাণিজ্যের ৪২ শতাংশ।

ভারত জানিয়েছে— আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের কোনো শুল্ক পয়েন্টে— পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা এবং ফুলবাড়ি শুল্ক পয়েন্ট দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কার্বনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, তুলার বর্জ্য, প্লাস্টিকের পণ্য (পণ্য তৈরির জন্য নির্দিষ্ট উপকরণ ব্যতীত) এবং কাঠের আসবাবপত্র আমদানি করা যাবে না।

জিটিআরআই জানিয়েছে, ভারত গতকাল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো পদক্ষেপ নয়। এগুলো মূলত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয় পণ্য রপ্তানির ওপর ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য বাধা এবং চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে চাওয়ায় ভারত এমনটি করেছে। সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, “এই বিধিনিষেধগুলো দেখে মনে হচ্ছে, ঢাকা যে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় পণ্যের আমদানি সীমিত করেছে এবং চীনের দিকে কূটনৈতিকভাবে ঝুঁকেছে, তারই জবাবে ভারত এই পদক্ষেপ নিয়েছে।”

এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে গিয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন ভারতের গতকালের এ সিদ্ধান্ত সেটিরও প্রতিক্রিয়া বলছে সংস্থাটি। ড. ইউনূস ভারতীয় রাজ্যগুলোকে “সমুদ্রপথে যোগাযোগের সুযোগবিহীন একটি স্থলবেষ্টিত অঞ্চল” হিসেবে বর্ণনা করেন।

তার চীন সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ২ দশকি ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে ইঙ্গিত করে। সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বৃদ্ধিকে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ভারত।

ভারতীয় পণ্যের ওপর বাংলাদেশের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা

বার্তাসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ২০২৪ সালের শেষভাগ থেকে বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্য রপ্তানির ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে এপ্রিল ২০২৫ থেকে প্রধান স্থলবন্দরগুলোর মাধ্যমে ভারতীয় সুতা আমদানি নিষিদ্ধকরণ, চাল আমদানির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ, কাগজ, তামাক, মাছ ও গুঁড়ো দুধের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা।

এছাড়া বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যাওয়া ভারতীয় পণ্যের ওপর প্রতি কিলোমিটারে টনপ্রতি ১ দশমিক ৮ টাকা হারে ট্রানজিট ফি ধার্য করেছে ঢাকা।

ভারতীয় সূত্রগুলোর মতে, বাংলাদেশের এসব পদক্ষেপের কারণে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেশটির এক কর্মকর্তা বলেছেন, “বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শর্তাবলী কেবল নিজেদের সুবিধার জন্য বেছে নিতে পারে না বা ভারতের বাজার প্রবেশাধিকারকে হালকাভাবে নিতে পারে না। ভারত এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক, তবে এজন্য বাংলাদেশকে একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”

বাংলাদেশ ভারতে বছরে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মূল বিষয়। ভারত স্থলবন্দর বন্ধ করায় এখন বাংলাদেশি পোশাক শুধুমাত্র দেশটির দুটি সামুদ্রিক বন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। এতে করে ভারতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বড় ধাক্কা খাবে বলে জানিয়েছে জিটিআরআই। মূলত বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ভারত এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।-

এএনআই জানিয়েছে, বাংলাদেশের বিধিনিষেধের কারণে তাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

সূত্র: দ্য ইকোনোমিক টাইমস

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular