আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বের ৪৩টি দেশের নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাত্রার নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে। মার্কিন গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লাল, কমলা ও হলুদ তালিকায় বিভক্ত করে দেশগুলোর জন্য ভিসা নীতি নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম অনুপস্থিত, যা ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের প্রতি একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দেয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, লাল তালিকায় থাকা ১১টি দেশ—আফগানিস্তান, ভুটান, কিউবা, ইরান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা ও ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হবে। কমলা তালিকায় থাকা ১০টি দেশ—বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, হাইতি, লাওস, মিয়ানমার, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ সুদান ও তুর্কমিনিস্তানের নাগরিকদের জন্য অভিবাসী ও পর্যটন ভিসায় প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। এছাড়া, হলুদ তালিকায় থাকা ২২টি দেশকে ৬০ দিনের মধ্যে তথ্যগত ঘাটতি পূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অন্যথায় তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকায় এটি স্পষ্ট যে, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশকে এই মুহূর্তে নিরাপত্তা বা অভিবাসন সংক্রান্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করছে না। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখা যেতে পারে, বিশেষ করে যখন প্রতিবেশী দেশ যেমন পাকিস্তান ও মিয়ানমারের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতা, টালমাটাল অর্থনৈতি, উগ্রবাদের উত্থান এর কারনে মার্কিন নাগরিকদের ভ্রমন সতর্কতা জারী করলেও, এই মুহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কোন ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারী করছে না, যেটা একটা স্বস্তির বিষয়।
ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে এমন দেশ চিহ্নিত করতে বলেছিলেন, যাদের নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বা সীমাবদ্ধতা প্রয়োজন। এই নীতির লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা। তবে বাংলাদেশকে এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা ইঙ্গিত দেয় যে, ট্রাম্প প্রশাসন এখনও বাংলাদেশকে একটি সহযোগী বা নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখছে।
তবে, এটাও লক্ষণীয় যে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভুটান ও মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই নীতি কীভাবে ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলবে, তা নির্ভর করছে দেশটির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ধারাবাহিকতার ওপর।
এদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সুযোগ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের প্রবেশ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতি বাংলাদেশকে একটি ইতিবাচক আলোয় দেখছে বলে মনে হলেও, ভবিষ্যতে পরিস্থিতির পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করবে এই সম্পর্কের গতিপথ।