খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়িতে অভাব - অনাটন আর মানুষিক যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে এক মা তার সন্তানকে বাজারে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন এমন একটি ঘটনা -সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে পুরো জেলা জুড়ে সৃষ্টি হয় কৌতুহলের।
সরে জমিনে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ভাইবোন ছড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পাক্কুজ্যছড়ি গ্রামের বাসিন্দা সোনালী চাকমা। অভাব অনটনের সংসারে ছেলেকে ঠিকমতো খাবার ও ভরণপোষণ দিতে না পারার কারনে অতিষ্ট হয়ে সোনালী চাকমা তার ছেলেকে বিক্রি করার জন্য বাজারে তুলেছিলেন বলে সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে তার সিদ্ধান্তে স্বজন ও স্থানীয়রা হতবাক।
শুধু অভাব নয়, সোনালী চাকমার কিছু অস্বাভাবিক আচরণের কথাও জানিয়েছেন স্থানীয়রা, তারা জানান, ৪৭ বছরের সোনালী চাকমার স্বামী শতোর্ধ্ব এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। সোনালীর তিন ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলের একজন বিয়ে করে আলাদা আর মেঝো ছেলে খাগড়াছড়ি সদরে দিনমজুরের কাজ করেন। ছোট ছেলে রামকৃষ্ণকে নিয়ে পৈত্রিক ভিটায় একটি গোয়ালঘরের পাশেই থাকেন সোনালী। বাবা, মা ও ভাইয়ের বাড়ি পাশাপাশি হলেও অভাব অনটনে কেউই তার খোঁজ খবর রাখে না। এ অবস্থায় দিনমজুরি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সোনালীর সংসারও চলে না। এর মধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে মৃগী রোগে ভোগছেন তিনি। তাই ছেলের মুখেই খাবার তুলে দিতে না পারা সোনালীর জন্য মৃগী সহ অন্যান্য রোগের ওষুধ কিনে খাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
নানা প্রচেষ্টার পরও চিকিৎসা নিতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি সদরের বাজারে নিয়ে ছেলেকে বিক্রি করে দিতে দর হাঁকেন সোনালী। ছেলেকে ছেড়ে থাকতে অনেক কষ্ট হবে জানিয়ে অভাব ঘুচাতে তাকে বিক্রির চেষ্টা অকপটে স্বীকার করেন সোনালী নিজেও। এ সময় কেঁদে ওঠেন তিনি।
সোনালী চাকমার ভাই ভারতব চাকমা বলেন, ‘দিদি (সোনালী) মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন। মৃগী রোগী। মাঝেমাঝে এলোমেলো কথা ও কাজ করেন। গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি বাজার থেকে এক চেয়ারম্যান ফোন করে ছেলেকে বিক্রি চেষ্টার কথা জানালে বাবা গিয়ে দিদি ও ভাগিনাকে নিয়ে আসেন।’ এ সময় নিজেরদের অভাবের কারণে সোনালীর চিকিৎসা করাতে পারেন না বলেও আক্ষেপ করেন ভারতব।
জানা যায় বৃহস্পতিবার সকালে খাগড়াছড়ি বাজারে এসে সবজি বিক্রি করতে আসা কয়েকজন নারীর কাছে ছেলেকে বিক্রির প্রস্তাব দেন সোনালী। তাদের মধ্যে একজন তার ছেলেকে ৫ হাজার টাকায় কিনতে চান। কিন্তু সোনালী ১২ হাজার টাকার কমে বিক্রি করবেন না বলে জানিয়ে দেন।এভাবে দর কষাকষির এক পর্যায়ে সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুনীল জীবন চাকমা বিষয়টি জানতে পারেন। পরে তার হস্তক্ষেপে মা ও ছেলেকে উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়।
ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ানম্যান সুজন চাকমা মা-ছেলের পাশে দাড়াঁনোর পাশে দাড়াঁনোর আশ্বাস দেন।
সংরক্ষিত আসনের সাংসদ বাসন্তী চাকমা জানান, পরিবারটির জন্য ৬ মাসের খাদ্য শস্য ও নগদ কিছু টাকা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সদর ইউএনও-কে বলে একটি সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়ার ও আশ্বাস দেন তিনি।
রিপন সরকার খাগড়াছড়ি ।
ঢাকানিউজ২৪.কম / রিপন সরকার
আপনার মতামত লিখুন: