নিউজ ডেস্ক: সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বিস্ফোরণে দগ্ধ ৩৩ রোগী মারাত্মক চোখের সমস্যায় ভুগছেন। একজনের একটি চোখ নষ্ট হওয়ায় তাকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা চলছে।
চোখের কর্নিয়া ক্রমাগত ঘোলাটে হতে থাকায় বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকরা বলছেন, দৃষ্টিশক্তি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় পড়তে হতে পারে অনেককে।
সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের আগে দেখা যায়, আগুন দেখতে চারদিকে শত শত মানুষের ভিড়। বিস্ফোরণের পর তাদের সবার চোখে পড়েছিল বিষাক্ত রাসায়নিক হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের ছিটা।
এতে আহত সবার চোখে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। তবে ৬৩ জনকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছিলেন চক্ষু বিশেষজ্ঞরা। যাদের মধ্যে ৩৩ জন এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেলে। বিকট শব্দে অনেকের দেখা দিয়েছে কানের সমস্যাও।
রাসায়নিক দ্রব্যের প্রতিক্রিয়ায় চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখা দিচ্ছে চোখ লাল হওয়া, পানি পড়া আর জ্বালা করা। কম ও ঝাপসা দেখা এবং ক্রমান্বয়ে চোখের কর্নিয়া ঘোলাটে হওয়াসহ আছে নানা উপসর্গও। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান চমেকের সহকারী অধ্যাপক ডা. লিপিকা নন্দী।
চমেকের চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. তনুজা তানজিন সময় সংবাদকে বলেন, ‘অনেকে আছেন, যাদের চোখের কিছু সমস্যা রয়েছে। অনেকের কর্নিয়া ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা একটু ভয় পাচ্ছি।’
আহতদের চোখের গুরুতর সমস্যা আঁচ করতে পেরে তড়িঘড়ি করে ঢাকা থেকে ডেকে আনা হয় চক্ষু বিশেষজ্ঞদের। তারা জানান, দৃষ্টিশক্তি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় পড়তে হতে পারে অনেক রোগীকে।
স্বাচিপের চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ বলেন, ‘এখানে শতভাগ রোগীর চোখের সমস্যা আছে। তবে একজন রোগী আছেন আশঙ্কাজনকভাবে। তিনি কতটুকু দৃষ্টি ফিরে পাবেন, জানি না। এ ছাড়া অন্য যারা আছেন, তারা ভালো হয়ে যাবেন আশা করি।’
কর্নিয়া নষ্ট হওয়া একজনকে পাঠানো হবে বিদেশে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ছয়জনকে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ১৪, সার্জারিতে ৭ আর চক্ষু বিভাগে ৪ জনসহ মোট ৩৩ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত ৪ জুন রাত ৯টার দিকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট একে একে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু ডিপোর কিছু কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে দফায় দফায় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে এবং আগুনের তীব্রতা বাড়ে। পরে সেনাবাহিনীর একটি দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবশেষ আজ ভোরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আগুনে দগ্ধ ফায়ার সার্ভিসের কর্মী গাউসুল আজম মারা গেলেন।
এর আগে বুধবার ভোরে আগুনে দগ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন মাসুদ রানা নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪ শতাধিক।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: