আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফ্রান্সে পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সদ্য পুনর্নির্বাচিত হওয়া প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর লক্ষ্য পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা।
ম্যাক্রোঁর দলের নেতৃত্বাধীন জোটকে রীতিমতো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে দিয়েছে বামপন্থি, সমাজবাদী ও গ্রিন পার্টির জোট। প্রথম পর্বের ভোটে তারা ম্যাক্রোঁর দলের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রায় সমান ভোট পেয়েছে। ম্যাক্রোঁর দলের নেতৃত্বাধীন জোটের নাম এনসেম্বল।
বামপন্থিদের নেতৃত্বাধীন জোটকে বলা হচ্ছে লেফট-গ্রিন জোট বা নুপেস জোট। এনসেম্বল প্রথম পর্বে পেয়েছে ২৫ দশমিক ৭১ শতাংশ ভোট এবং বাম জোট পেয়েছে ২৫ দশমিক ৬১ শতাংশ ভোট।
সাধারণত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরপরই পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে ম্যাক্রোঁ বেশ কিছু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে বাধার সম্মুখীন হতে পারেন। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংস্কারের নানা নীতিতে তাকে পার্লামেন্টের মুখোমুখি দাঁড়াতে হতে পারে।
প্রথম পর্বে ভোট পড়েছে খুবই কম। ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ। রোববারের আবহাওয়া ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। প্যারিসে তাপমাত্রা ছিল ২৭ ডিগ্রি। ফলে মানুষ ভোটকেন্দ্রে কম এসেছে।
প্রথম ধাপে কেবল তারাই নির্বাচিত হবেন, যাদের আসনে অন্তত ২৫ শতাংশ ভোট পড়বে এবং সেই ভোটের ৫০ শতাংশ যারা পাবেন। ফলে বেশির ভাগ আসনে বিজয়ীই মূলত নির্ধারণ হবেন আগামী রোববার (১৯ জুন) দ্বিতীয় দফার ভোটে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে প্রথম ধাপের শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের লড়াই হবে।
বাম জোটের নেতা জ্যঁ লুক মেলাঞ্চ বলেছেন, প্রথম পর্বের ভোটের পর সত্যিটা হলো, প্রেসিডেন্টের পার্টি হেরে গেছে। তিনি ভোটদাতাদের কাছে আবেদন করেছেন, আগামী রোববার তারা যেন আরও বেশি করে ভোট দেন এবং ম্যাক্রোঁর পার্টির হার নিশ্চিত করেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ম্যাক্রোঁর পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট শেষ পর্যন্ত ২৫৫ থেকে ৩০৫ এর মধ্যে ভোট পাবে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে গেলে ২৮৯টি আসনে জেতা দরকার। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে মাক্রোঁ তার সংস্কার পরিকল্পনা চালু করতে পারবেন না। তিনি অবসরের বয়স ৬৫ করতে চান। আর বামপন্থি জোট তা কমিয়ে ৬০ করতে চায়। তা ছাড়া বামপন্থি জোট জিনিসের দাম কমানো এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
কিছুদিন আগেই ম্যাক্রোঁ দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তারপরও তার দল যদি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে সেটা তার কাছে বড় ধাক্কা হবে। তিনি নিজের দলের নেতৃত্বাধীন জোটের সরকার যাতে হয়, তার জন্য প্রচার করছেন। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে ফ্রান্সে জিনিসের দাম অনেকটাই বেড়েছে। ফলে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
ম্যাক্রোঁর নানা অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে জনগণের বড় একটি অংশের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। আর এটিকে পুঁজি করেই নির্বাচনে মূল লড়াই চালাচ্ছে নুপেস জোট। ২০১৭ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার সময়ই ফ্রান্সে অবসরের বয়সসীমা ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করার কথা বলেছিলেন ম্যাক্রোঁ।
মেলাঞ্চোঁ এবং নুপেস জোটের লক্ষ্য পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ ম্যাক্রোঁর হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়া, যাতে তিনি বামপন্থি শিবির থেকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে বাধ্য হন। এর আগে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তৎকালীন মধ্য ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জ্যাঁক শিরাক সোশ্যালিস্ট লিওনেল জোসপিনকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ম্যাক্রোঁর দল ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রসঙ্গ তুলে বলেছে, এ অবস্থায় ফ্রান্সের দরকার স্থায়ী সরকার। সরকার স্থায়ী না হলে তার প্রভাব পড়বে ফ্রান্সের ওপর।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: